ড. মীজানুর রহমানেরবীন্দ্র নাথ পাল :: বাংলাদেশে আই এস নেই, আই এস আছে। এ নিয়ে অবিরাম বিতর্ক চলছে। আই এস আছে কি নেই, তার চেয়ে বড় সত্য এ দেশে শত শত নয়, লাখো লাখো আই এসের প্রেতাত্মা আছে। যারা প্রতিনিয়ত এ দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। অথচ মুর্খের দল এটা বুঝেনা, এটি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। যার একটি মানচিত্র আছে, আছে নির্দিষ্ট একটি ভুখন্ড। আর এ ভু-খন্ডের জন্য ৩০লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল।

২লাখ মা বোন ইজ্জত খুঁইয়েছিল হানাদার পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে। অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে প্রান দিয়েছে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। আমি বলবো,৭১ এ এদেশে যত স্বাধীনতা বিরোধী ছিল, এখন সংখ্যা তার দ্বিগুন হয়েছে। এতিমখানা, কওমী মাদ্রাসা ও বিভিন্ন মাদ্রাসা জঙ্গি ও আত্মঘাতী হামলাকারীদের আঁতুরঘর।

এসব এতিম ও দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের খুব সহজেই বেহেস্তে যাবার পথ দেখিয়ে জঙ্গিবাদে বিভ্রান্ত করে থাকে। তবে সবচেয়ে দু:খের ব্যাপার এক শ্রেনীর শিক্ষিত ছেলে আজ মৌলবাদে জড়িয়ে পড়েছে। আমি আবারো বলবো, এরজন্য ঘরে ঘরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

গত ১৫ ডিসেম্বর প্রায় তিন ঘন্টা দক্ষিন এশিয়ার ফিলিপ কাটলার খ্যাত মার্কেটিং এর জনক, ঢাকা ইউনিভার্সিটির মাকেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য্য ড. মীজানুর রহমান একান্ত আলাপচারিতায় একথা বলেন।

১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস ও মহান বিজয় দিবসের মুক্তিযোদ্ধা স্মরনীর মুক্তমঞ্চের আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে ১৫ ডিসেম্বর তিনি এসেছিলেন ময়মনসিংহে। দুপুরে সার্কিট হাউজে খাবাবের পর প্রায় ৩ঘন্টা সময় কাটানোর জন্য তিনি বেছে নিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখার।

এর আগে সার্কিট হাউজে আমার সাথে পরিচিত হবার সৌভাগ্য হয়। অত্যন্ত অমায়িক ও বন্ধুবৎসল জ্ঞানী এই মানুষের আস্থা অর্জন করে নিলাম মুহুর্তের মধ্যে। আমি স্থানীয় দৈনিক আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও অনলাইন পোর্টাল ইউনাইটেড নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম এ নিয়মিত লিখি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচিত কার্যকরী সদস্য জেনে আমাকে তার সঁঙ্গী করে নেন।

দুপুর আড়াইটার দিকে আমরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়ের সাথে ১০/১৫ মিনিটের সৌজন্য স্বাক্ষাৎ শেষে প্রথমেই চলে যাই বোটানিকেল গার্ডেন দেখতে। এখানে আছে আড়াই হাজার জাতের ঔষধি, ফুল ও নানা জাতের গাছ গাছরা। অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে সেগুলো দেখেন, পরিচর্চাকারীদের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছেন এসব দেখভাল ও সার্বক্ষনিক তদারকির ব্যাপারগুলো। বারো মসল্লার গাছের পাতা নিয়ে অবাক হন। এখানে কি নেই, সেটাই আসলে জানা হয়নি উনার।

ড. মীজানুর রহমানেতারপর দেখতে যান পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জার্ম প্লাজম সেন্টার। যিনি এই জার্ম প্লাজম সেন্টারের সার্বিক দায়িত্বে আছেন সেই দেশ বরেন্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম খবর পেয়ে তিনিও আসেন। তিনি উদ্যানতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ছাড়াও সেন্টারের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। মাসখানেক আগেই তিনি আমেরিকার কালিফর্নিয়ার জার্ম প্লাজম সেন্টার যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জার্ম প্লাজম সেন্টার ঘুরে এসেছেন। এই জার্ম প্লাজম সেন্টার পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় জার্ম প্লাজম সেন্টার বলে তিনি জানান।

কালিফর্নিয়ায় জার্ম প্লাজম সেন্টারে ফলদ বৃক্ষের গাছ আছে আড়াই হাজার প্রজাতি, আর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারে গাছ আছে ১২৩৮ প্রজাতির ফলদ বৃক্ষ। কিভাবে ক্লোন করে ৩০/৪০ বছর আগের গাছকে নতুন ফলদ বৃক্ষ বানিয়েছেন তা দেখালেন। ড. মীজানুর রহমান স্যারের সাথে না গেলে কোনদিন এভাবে আমার মত নগন্য মানুষের এসব দেখার ও জানার সুযোগ অদৌ হতো কিনা সন্দেহ।

এরপর ভিসি ড.মীজানুর রহমান দেখতে যান, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং আমাদের গর্ব বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি মিউজিয়ামে। কেউ যদি কোনদিন সুযোগ পান তাহলে শতবর্ষের অতীত জীবনে ফিরে যাবার জন্য কৃষি মিউজিয়াম একবার ঘুরে দেখবেন। কিভাবে আমরা কৃষিতে আজ এতদুর এগিয়ে এলাম তা এই মিউজিয়াম না দেখলে খাদ্যে স্বয়ং সম্পুর্নতার বিষয়টি তাদের কাছে অজানাই থেকে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

কৃষি ভার্সিটি শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ও বিনা’র কর্মকর্তারা কিভাবে নিরলস পরিশ্রম করে আমাদের আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন করেছেন। আমরা তথা দেশবাসী চীরকৃতজ্ঞ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ও বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের কাছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় সব ঘুরে ঘুরে দেখছেন, আর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জেনে নিচ্ছেন।

তার জানার আগ্রহ আমাকে অনেক তথ্য পেতে যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছে, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এক একটি সেন্টার গাড়ীতে তার সাথে ঘুরছি, আর বর্তমান রাজনৈতিক হালচাল সম্পর্কে আলাপচারিতায় তার মুল্যবান মতামত জেনে নেয়ার নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। সন্ধ্যায় আবার মুক্ত মঞ্চে তার বক্তৃতা দেবার পালা।

দেশ বরেন্য এই শিক্ষক জানালেন, দেশে লক্ষাধিক মাদ্রাসা আছে, আছে হাজার হাজার এতিমখানা। আপনাকে জানতে হবে ৭০এর নির্বাচনে স্বায়ত্ব শাসনের প্রশ্নে জামায়াত, মুসলিমলীগসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো পেয়েছিল ২২ ভাগ ভোট। এরা কারা? এরা হলো সেই স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী শক্তি। তাদের শক্তির উৎসতো আমাদের স্বাধীনতার পুর্বক্ষনে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতেই প্রমান হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা যখন আসন্ন, তখন জাতিসংঘে ভোটাভুটিতে আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল ১১০টি রাষ্ট্র। ১০/১২টি রাষ্ট্র ছিল আমাদের পক্ষে। সমসংখ্যক ভোটদানে বিরত ছিল।

এরজন্য কি আমাদের স্বাধীনতা আটকে ছিল। আসলে জনতার শক্তিই মুল শক্তি। আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলো ও এতিমখানা হলো জঙ্গী তৈরীর কারখানা। যাকে বলে আতুরঘর। কওমী মাদ্রাসাগুলোতে যা পড়ানো হয়, তার মুলকথাই হলো, বাঁচলে গাজী, মরলে শহীদ। অর্থাৎ বেহেস্তে যাবার সোজা সরল পথ। এতিমখানায় মগজ ধোলাই করা হয়, আত্মঘাতী হবার।

তবে সবচেয়ে দুখ:জনক ব্যাপার হলো, আমাদের পরিবারগুলো থেকে নীতি নৈতিকতার শিক্ষা না পেয়ে এবং পিতামাতার বিপরিত মুখী অবস্থানের কারনে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু ছেলে বিপথগামী হচ্ছে। আর এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে স্বাধীনতার সময় যারা আমাদের বিরোধীতা করেছিল সেই গোষ্ঠী। এক্ষেত্রে ধণ্যবাদ দিতে হয় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। সমস্ত বিশ্বকে ও তাদের লবিষ্ট গ্রুপের রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সমস্ত ভয় ডর উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে চলেছেন এবং আদালতের দেয়া রায় বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

স্বচ্ছ বিচার পক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্ত আইনী সুযোগভোগ করে পৃথিবীর কোথাও যুদ্ধাপরাধীরা এত সুযোগ পেয়েছে কিনা আমার জানা নেই। যারা এতকিছু সুযোগ পাবার পরও সমালোচনা করে তারা হলো জ্ঞানপাপী মুর্খের দল।

আজ দেশে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, নারীর ক্ষমতায়ন থেকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উঠে আসছি। অথচ এই পশ্চিমা বিশ্বই আমাদের বলেছিল তলাবিহীন ঝুড়ি। দেশে এখন খাদ্যের অভাব নেই, মৎস্য সম্পদ চাহিদার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। এসব উন্নয়ন আমাদের যারা স্বাধীনতার পুর্বলগ্নে জাতিসংঘে বিরোধিতা করেছিল, তারা কিভাবে মেনে নিবে। তারাতো চাইবেই আমরা যেন, পিছিয়ে থাকি, থালা হাতে ওদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা চাই। আজ মঙ্গা নেই। ওদেরতো এসব ভাল লাগার কথা নয়।

একটা কথা মনে রাখবেন, স্বাধীনতার সময় যত রাজাকার ছিল আজ তার দ্বিগুন হয়েছে শুধু ওদের হাতে মোটা দাগের অর্থ থাকার কারনে। যার জন্য ওরা সহজেই দরিদ্র অসহায় মানুষদের সামপ্রদায়িক ধ্যান ধারনায় আকৃষ্ট করে জঙ্গী ও আত্মঘাতী বাহিনী গড়ে তুলতে পারছে। এদেশের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির হাজার বছরের। এটা বিনষ্ট করতে পারলেই ওদের পথের কাঁটা দুর হয়। সেজন্য স্বাধীনতা স্বপক্ষের সকল শক্তিকে এককাতারে আসতে হবে সব ভেদাভেদ ভুলে।

ড. মীজানুর রহমানেতিনি আক্ষেপ করে বলেন, ৭১ এ আমি নবম শ্রেনরি ছাত্র। সেসময়ের রাজাকারের চেয়ে এখনের রাজাকাররা ভয়ংকর। কোমলমতি ছাত্রদের মগজ ধোলাই করে মুক্তমনা মানুষদের খুনের জন্য লেলিয়ে দিচ্ছে। এদের খুন করলেই নাকি দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে। মানুষ খুন ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। দেশকে পিছিয়ে দেবার, অন্ধকারে ঠেলে দেবার এই ঘৃন্য ষড়যন্ত্র অনবরত চলছেই। এদেশে আইএস এর শাখা খোলার দরকার নেই। কারন এদের প্রেতাত্মারা তো আছেই।

ইসলামের নামে এরা শিয়া সুন্নী বিভেদ সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চায়। ইসলামী ঝান্ডা কায়েমের নামে এরা নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করে চলেছে। স্বাধীনতার বিরোধীদের উত্তরসুরীরা এখনো ব্যবসা বানিজ্য, শিক্ষা দখলে রেখে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। একটা কথা মনে রাখতে হবে মানবসভ্যতা কোনদিন পিছনে দিকে যাবে না। এতিমখানা দখলে রেখে ওদের মগজ ধোলই করে এটাই

বোঝাতে চায় মরলেই বেহেস্ত। সেখানে আঙ্গুর আপেল বেদেনা,আর কত কি। এদের যদি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে এরা সহজেই মৌলবাদের ক্ষপ্পরে পড়ে বিভ্রান্ত হতে পারে। আজ সেজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।স্বাধীনতার চেতনা তুলে ধরে সর্বস্তরের মানুষকে সামিল করতে হবে এদের বিরুদ্ধে। আমরা যদি আজো পাকিস্তানে থাকতাম তাহলে এটা আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার মত জঙ্গীরাষ্ট্রে পরিনত হতো। অনেকেই জানেনা, এদেশ থেকে ফিলিস্থিন, আফগানিস্থান ও কাশ্মিরে অনেকেই জঙ্গীদের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। তারা বসে নেই।

আজ সময় এসেছে ৭১এ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে এ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস’ত হবার। বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পাশে আছে। আসুন সবাই মিলে অন্ধকার থেকে আালোর পথে যাত্রায়, আমরা হাতে হাতে ধরে এগিয়ে যাই আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি রক্ষায়।

দীর্ঘ একান্ত আলাপচারিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির একান্ত সান্নিধ্য দীর্ঘকাল আমার হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। ধন্যবাদ স্যার, আপনি ভাল থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন। একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আপনি আপোষহীন যোদ্ধা হয়ে লড়ে যাবেন, আমরা আপনার পাশে আছি, থাকবো সবসময়।

তাং ১৯/১০/১৫ইং

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here