মধ্যবর্তী নির্বাচন ও মৌলবাদীদের উস্কানিরবীন্দ্র নাথ পাল : আবারো ঈদের পর আন্দোলনের হুমকী দিলেন বেগম জিয়া। পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য বিএনপি’র সঙ্গে সংলাপের শর্ত জুড়ে বললেন,তা না হলে এমন আন্দোলন দেখবেন যাতে পালাবার ও পথ পাবেন না। ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ঐ দল থেকে বেশ কিছু দলের খন্ডিত অংশ সম্প্রতি বের হয়ে এসেছে।

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে এক সভায় স্পষ্ট করে বলেছেন নির্বাচনী ট্রেন মিস করেছেন বেগম জিয়া। সুতরাং কোন মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে না। একই দিন হাসিনা নিউইয়র্ক ও বেগম জিয়া জামালপুরে সভায় পরস্পর বিরোধী এ বক্তব্য রাখেন।

ঈদুল আযহা’র পর আন্দোলনের হাকডাক দিয়ে বেগম জিয়া দেশে বেশ কটি সভা ও একটি ঢিলেঢালা হরতাল ছাড়া রাজনীতির মাঠে তেমন কোন কিছুই করে দেখাতে পারেননি।

তার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটে ভাঁঙ্গন ঠেকানোর জন্য বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের হুমকী দিয়ে দলের ভাঁঙ্গন ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন কিনা সামনের দিনগুলোতে তা স্পষ্ট হবে।

তাছাড়া দলীয় নেতা কর্মীদের নামে ডজন ডজন মামলার ভয় থেকে কর্মীদের সাহস বাড়ানোর কৌশল নিয়ে আন্দোলনের কথা বরছেন কিনা সেটা সময়েই বলে দেবে। বিএনপি ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচন করে ১৫ দিনের মাথায় সারারাত সংসদ

চালু রেখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকার। সে হিসেবে মহাজোট ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন করে প্রায় ৯ মাস সময় পার করে দিলেন সেটাই বা কম কিসে। এতে তার ক্ষোভ থাকতেই পারে। তুষের আগুন মনে জ্বলতেই পারে। এরপর যদি শেখ হাসিনা বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে না,বিষয়টি খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।

দেশে দল বা উপদলের অভাব নেই। তবে পার্টিগুলোর আন্দোলন হুমকীর মুখে দুটি পার্টি কোন পক্ষেই নেই। এরা হলো অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টি। দুর্গোৎসব ও ঈদুল আযহা কে সামনে রেখে এরা আলাদা রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। এদের ক্ষমতার লোভ নেই বলে মহাজোট বা জোটের রাজনীতির মধ্যে এরা স্বতন্ত্র হয়ে নিজেদের ভাগ্য নিয়ে ব্যস্ত আছে।

দেশের রাজনীতি নিয়ে যখন টালমাটাল অবস্থা তখন এ কে খন্দকার, মওদুদ আহাম্মদকে ছাড়িয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে ডাক,  টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। নিউইয়র্কে টাঙ্গাইলবাসীদের সাথে একটি বৈঠকে হজ্ব ও মহানবী সর্ম্পকে আপত্তিকর এবং অবমাননা কর বক্তব্য দিয়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীকে উসকে দিয়েছেন। তার কি প্রয়োজন ছিল প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ফালতু কথা বলা। এমন সময় তিনি একথা বললেন যে সময় আলকায়েদা এ উপমহাদেশে তাদের শাখা খোলার ঘোষনা দিয়েছে।

উপমহাদেশ জুড়ে এ নিয়ে চলছে চিরুনী অভিযান। তিনি যে উদ্দেশ্যেই একথা বলে থাকুন না কেন রাজনীতির এ টালমাটাল সময়ে অযাচিত বক্তব্য দিয়ে মৌলবাদীদের মাঠে নামার সুযোগ করে দিয়েছেন। সুতরাং মন্ত্রীত্ব থেকে তার বিদায় দিলেই যে ঘটনার মিমাংসা হয়ে গেছে ভাবলে ভুল হবে। শাপলা চত্বরে সমাবেশের পর হেফাজতিরা চুপ হয়ে গেলেও এখন তারা ঘোষনা দিয়ে মাঠে নামার দু:সাহস দেখাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায়,শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসুচী ঘোষনা করেছে।

এদিকে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। আগামী শনিবার দশমী’র মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে দুর্গোৎসবের। ভারতে মোদী সরকারের সাথে মহাজোট সরকারের মাখামাখিতে যারা মোদী ক্ষমতায় আসার পর উৎসবমুখর ছিল তারা একেবারেই নিস্তেজ হয়ে গেছেন এটা বলা যায় নি:সন্দেহে।

নিউইয়র্কে মোদী-হাসিনার বৈঠকের পর হতাশ ২০ দলীয় জোট যখন আন্দোলনের প্রস’তি নিচ্ছে,তখন লতিফ সিদ্দিকীর এ ধরনের বক্তব্য আগুনে ঘি ঢালবে ছাড়া কিছু নয়।

গত ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের পর মহাজোটের অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা

লাগামছাড়া কথাবলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিব্রত করে চলেছেন। নেত্রীর সরলতাকে যারা দুর্বলতা ভেবে লাগামছাড়া কথা বলছেন,তারা যদি এরপরও সংযত না হন তবে দলের ভাবমুর্তি যেমন ক্ষতি হবে,তেমনি মৌলবাদী চক্র নানা অসিলায় এক কাতারে চলে আসার পথ তারাই সুগম করে দিবেন। যা হবে জাতির জন্য ভয়ংকর দুর্যোগের মত।

লেখক: রবীন্দ্র নাথ পাল, বার্তা সম্পাদক,  দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ, মোবাইল- ০১৭১৩-৮১৯২৯৪

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here