জাহিদ আবেদীন বাবু কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি :: আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অমিতাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধূসূদন দত্তের ১৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবির জন্মভুমি কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ীতে বসছে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা।
মহাকবির জন্ম দিন ২৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সংস্কৃত বিষযক মন্ত্রনালয়ের পৃষ্টপোষকতায় ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্টিত হয়ে আসছে।
২০ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলা উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার এমপি, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এমপি, সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, মো. মনিরুল ইসলাম, কাজী নাবিল আহম্মেদ, রনজিৎ কুমার রায়, স্বপন ভট্টাচার্য্য, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, যশোর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, যশোর পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, কেশবপুর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম।
সপ্তাহ ব্যাপী মধু মেলা উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। বর্ণিল সাজে সেজেছে সাগরদাঁড়ি। এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। মেলায় কুঠির শিল্প, গ্রামীণ পসরার পাশাপাশি রয়েছে সার্কাস।
এছাড়াও প্রতিদিন সাগরদাঁড়ির মধু মঞ্চে মহাকবির সৃষ্ট কর্ম নিয়ে বিষয় ভিত্তিক আলোচনার পাশাপাশি নাটক, কবিতা আবৃতিসহ মনোজ্ঞপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মেলা উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. মিজানূর রহমান জানান, মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে উদযাপনের লক্ষে ইতিমধ্যে সাগরদাঁড়িতে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রতিবছর লাখ লাখ টাকায় মধু মেলার মাঠ ইজারা দেয়া হলেও মধুপল্লী নানা সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভুমি সাগরদাঁড়িতে ‘মধুপল্লী’ গড়ে তোলার ঘোষনা দেন। ঘোষনা অনুযায়ী সে সময় মধুপল্লীতে মধুসূদন মিউজিয়াম, পিকনিক কর্ণার, অতিথি শালা, কুঠিরের আদলে গেট, একটি মঞ্চ, ২টি অভ্যর্থনা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ২০০৮ সালে ৬৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ‘মধুমঞ্চ’ নির্মাণ করা হয়।
তবে উন্নয়নের ধারাবহিকতা না থাকায় মধুপল্লী’র রাস্তা জরার্জীন হয়ে পড়েছে। সংস্কারের নামে লুঠপাট, আর ভূমিদস্যূদের দখলদারীত্বে মৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদের উপছে পড়া পানিতে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে মধুপল্লী জলাবদ্ধতার শিকার হয়। পিকনিক কর্নারের মূল গেট প্রায় বন্ধ রাখা। মধুপল্লী সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রীজ নির্মাণ না হওয়ায় সাগরদাঁড়ি ও সাতক্ষীরাবাসীকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে। এ ব্রীজটি নির্মাণ করা হলে মধুপল্লীতে পর্যটকদের পদচারনা বৃদ্ধি পাবে।
সাগরদাঁড়িতে মহাকবির নামে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবীটি আজও পুরন হয়নি। মধুসূদন দত্তের বাড়িতে একটি সংগ্রহশালা থাকলেও নেই সমৃদ্ধ কোন পাঠাগার। আশির দশকে সাগরদাঁড়িতে একটি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল তৈরির লক্ষ্যে বিপুল অর্থ ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মান করা হলেও পরবর্তীতে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
মধুপল্লীকে আধুনিকায়ন না করায় বর্তমানে পর্যাটকদের উপস্থিতি হ্রাস পাওয়ায় ভ্যারাইটি পণ্যের বেচাকেনা কমে গেছে।
ভ্যারাইটি পন্যের দোকানদার নজরুল ইসলাম জানান, পর্যাটকদের উপস্থিতি তেমন না থাকায় ব্যবসায়ীরা অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
সাগরদাঁড়ি গ্রামের সমাজ সেবক ইয়াছিন আলী বলেন, ‘মধুপল্লী’র আধুনিকায়ন না হওয়ায় পিকনিক পাটির লোকজন ‘মধুপল্লী’তে কিছুসময় যাত্রাবিরতি করে অন্য পিকনিক স্পটে চলে যায়। ব্যবসায়ীরা ক্ষোভের সহিত বলেন, মহাকবি জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্টিত মধুমেলা থেকে একটি মহল লক্ষ লক্ষ টাকা বানিজ্য করলেও মধুপল্লীর কোন উন্নয়ন হচ্ছে না।
সাগরদাঁড়ির কৃতি সন্তান শিল্পী আব্দুর সাত্তার খাঁন বলেন, ‘মধুপল্লী’তে পর্যটকদের ভীড় বাড়াতে কপোতাক্ষ নদে স্প্রীড বোর্ডের ব্যাবস্থা, মিনি চিড়িয়াখানাসহ আধুনিক পিকনিক স্পটের অবকাঠামো স্থাপন করা প্রয়োজন।
সাগরদাঁড়িতে মহাকবির নামে সংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মধুপল্লী সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রীজ নির্মাণ, কপোতাক্ষ নদের তীর পাথর দিয়ে বেঁধে, মাটি তুলে মধুপল্লীর ভূমি উচুঁ করা, রান্তা সংস্কার, মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন করাসহ আধুনিক পিকনিক স্পটের অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে পর্যাটন কেন্দ্র হিসাবে ‘মধুপল্লী’র বাস্তব রুপ দেয়ার জন্য এলাকাবাসি প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।