ভয়াল সেই ১২ নভেম্বর আজজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতে উপকূলীয় এলাকায় ঘটেগেছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাস। সেই ভয়াল কালো রাতে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকা রামগতি, কমলনগর, চরআব্দুল্লাহ, চর জব্বার, নোয়াখালীর হাতিয়া, সন্দীপ, ঢাল চর, তজুমুদ্দিন, চরকচ্ছপিয়া, চরপাতিলা, কুকরী কুমড়ী, মনপুরা, চরফ্যাশন, দৌলতখাঁন, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছাস তেড়ে আসে। তখন ছিল রমজান মাস। তখনকার দেশী বিদেশী প্রচার মাধ্যমে এই ধবংসযজ্ঞের বর্ণনা ছিল এমন যে “মানুষের মৃতদেহগুলি কচুরী পানার ঝুপের মত সমুদ্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে”।

১২ নভেম্বর রাতের ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি বেগ ছিল ঘন্টায় ২২২ কিলোমিটার (১৩৮ মাইল)। চারিদিকে লাশ-আর-লাশ, লাশের গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। ৩-১০ ফুটের জলোচ্ছাসের কারণে মাটি দেয়া যায়নি মৃত মানুষগুলোকে। প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড়ে ১০লাখ লোকের প্রাণহানীর ঘটনার ঠিক দুই দিন পর ততকালীন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির কর্তা ব্যক্তিরা এইঞ্চলে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারী হিসেবে লোকজনের ক্ষতি-৪৭ লাখ, ঘর বাড়ি বিনষ্ট বা ধ্বংস ৪ লাখ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির মৃত্যু ৭ লাখ ৮ হাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধবংস হয়েছে তিন হাজার পাঁচশ’টি। বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াল এই ধবংসযজ্ঞের পূর্ণাঙ্গ দলিল বা এ বিষয়ক কোন পুস্তিকা আজও প্রকাশিত হয়নি।

সেই দিনের ভয়াবহ দুযোর্গের কথা মনে পড়লে আজও এলাকার সাধারন মানুষের মন ও পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। আঁতকে উঠে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকার মানুষগুলো। সে দিনের স্মৃতি এখনো জ্বল জ্বল হয়ে আছে স্বজন হারানোদের মধ্যে।

এদেরই কয়েক জন লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার বাজার এলাকায় গেলে জানান। ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে তাদের কারো মা, কারো বাবা, কারো আবার সন্তানসহ পরিবারের সকলেই। ওই জলোচ্ছ্বাসে তারা নিজেরাও ভেসে যান। দু’দিন পানিতে ভেসে থাকার পর উদ্ধার হন তারা। তার পর থেকে প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাসের স্মৃতি নিয়ে কেটে গেছে তাদের ৪৮ বছর।

৭০ এর ১২ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তি উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় নিয়োজিত ছিলেন বর্তমানে আন্তর্জাতিক পুরুস্কার প্রাপ্ত এএইচএম নোমান। তিনি রামগতি উপজেলায় ‘ধ্বংস থেকে সৃষ্টি’র শ্লোগান নিয়ে কাজ শুরু করেন।

তিনি জানান, ৭০ এর ১২ নভেম্বরের ভয়াবহতার কথা। তার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা হচ্ছে লক্ষ্মীপুরে রামগতি উপজেলার চর আব্দুল্লাহ ইউনিয়ন। মৎস্যজীবী অধ্যুষিত এ ইউনিয়নটি ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাসে প্রায় মানুষ শূন্য হয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তি যারা বেঁচে ছিলেন তারা আর নদীর পারে থাকতে চাচ্ছিলেন না। ভীত সন্ত্রস্ত, আবার দূর্যোগ কখন তাদের আবার হানা দেয়।

প্রতি বছর ১২ নভেম্বর এলেই নির্দিষ্ট কিছু সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে দিবসটি উদযাপন করে। এ ধরনের সংগঠনগুলো মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানী ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারনমূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। তারা ১৯৭০ এর ১২ নভেম্বরের প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাসের ফলে ১০ লাখ লোকের প্রাণহানীর ঘটনাকে চির স্মরনীয় করে রাখতে ১২ নভেম্বরকে জাতীয় দূর্যোগ দিবস ঘোষনার দাবী জানিয়ে আসছে সরকারের নিকট।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here