মীর আব্দুল আলীম::

EARTHQUAKE-file-3-ভুমিকম্পে কাঁপছে বাড়ি ঘর, এই বুঝি ভেঙ্গে পড়ছে মাথার উপর। এমন ভয় এখন সবার পেয়ে বসেছে।  গত বছর ২৫শে এপ্রিল এবং ১২ই মে ভূমিকম্পের পর কেউ কেউ হাইরাইজ বিল্ডিং ছেড়ে গেছেন ছোট ভবনে।  ৪ জানুয়ারীর ভুমিকম্পের পর ভয় যেন আও পেয়ে বসেছে। ভুমিকম্পে ভয় পাওয়া ঠিক নয়। ভুমিকম্প আচনকই হয়। কোথায় কি হবে কেউ আগেভাগে বলতে পারে না। ভুমিকম্পকে ভয় পেলে চলবে না। ভয়কে জয় করতে হবে। ভুমিকম্প থেকে বাঁচার উপায় বের করতে হবে। ভুমিকম্পে উচুতলার বিল্ডিং গুলো আগে ভেঙে পড়বে এ কথা ঠিক নয়। বরং ভুমিকম্পে হাইরাউজ বিল্ডিং থেকে ছোট বিল্ডিং গুলোই বেশি ড়্গতিগ্রসত্ম হবে। ৬ তলার নিচের বিল্ডিং গুলো বেশি অনিরাপদ। ভুমিকম্পে বিল্ডিং সাধারনত দুমড়েমুচড়ে গায়ে পড়েনা। হেলে পড়ে বেশিরভাগ ড়্গেত্রে। এ সময় নিজেকে রড়্গা করতে হবে। ভিম কিবংবা কলামের পাশে শক্ত কোন কিছুর পাশে থাকতে হবে। বিশেষ করে খাট কিংবা শক্ত ডাইনিং টেবিল হলে ভালো হয়। আগে থেকেই আশ্রয়ের জায়গা ঠিক করে নিতে হবে। ঘরে রাখতে হবে সাবোল এবং হাতুড়ি জাতিয় কিছু দেশীয় যন্ত্র। ভুমিকম্প হলে অনেকেই তড়িঘরি কওে নিচে ছোটেন। তাঁরা জানে না ভুমিকম্পে যত ড়্গতি হয় তার বেশি ড়্গতি হয় অস্থির লোকদেও ড়্গেত্রে। ভুমিকম্প খুব অল্প সয়ের মধ্যে শেষ হয়। প্রলয় যা হবার তা হয় কয়েক সেকেন্ড কিংবা মিনিট সময়ের মধ্যে। এ সময়ে আপনি কি নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারবেন? রাসত্মায় গিয়ে তো আরও বিপদে পরতে হবে আপনাকে। বাড়ি ঘর হেলে গিয়ে ধ্বসে পরে সব কিছুতো রাসত্মার উপরই পড়বে। বরং রাসত্মায় থাকলে চাপা পড়ে, মাথা কিংবা শরিরের কিছু পড়ে আপনি হতাহত হতে পারেন। যারা এক তলা কিংবা দোতলায় থাকেন পাশে খালি মাঠ থাকেলে দ্রম্নত দৌঁড়ে যেতে পারেন। সেখানে যেতে যদি ঝঞ্জাল থাকে তা হলে সৃষ্টিকর্তাকে ভরসা করে শক্ত কোথাও অবস্থান নেয়াই শ্রেয়। রাজধানী ঢাকায় যারা বসবাস করেন যারা উঁচু বিল্ডিয়ে থাকেন এদের ভয়টা যেন একটু বেশি। তাঁদেও জ্ঞাতার্থে বলছি, আমাদের দেশে ৬ তলার উপরে নির্ন্মিত বিল্ডিং গুলো সাধারনত বিল্ডিং কোন মেনেই হয়। বড় বিল্ডিংয় তৈরির ড়্গেত্রে অনেকেই ঝুঁকি নিতে চান না। একটু দেখভাল করেই নির্ন্মন কাজ কওে থাকেন। আর এসব বিল্ডিং পালিং হয় অনেক নিচু থেকে এবং বেজ ডালাই দেয়া হয় পুরো বিল্ডিংয়ের নিচ জুড়ে তাই শুধু কলামে দাঁড়িয়ে থাকা বিল্ডিং থেকে হাইরাইজ বিল্ডিং কিছুটা হলেও নিরাপদ বলা যায়। ভুমিকম্পকে ভয় পেলে চলবে না, এ ড়্গেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সবাইকে।

দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর লক্ষণ হিসেবে প্রায়ই দেশের কোথাও না কোথাও মৃদু ও মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে। গত বছর ২৫শে এপ্রিল এবং ১২ই মে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল আগের যে কোন সময়ের চাইতে বেশি। সব ছাড়িয়ে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারী ভোর ৫টায় যে ভুমিকম্প হয়েছে তা সারাদেশে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী ও লালমনিরহাটে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে তিনজন মারা গেছেন। ঢাকায় আহত হয়েছেন প্রায় ৫০ জন। প্রশ্ন হলো, দেশে বড়ধরনের ভূমিকম্প হলে কি হবে? কে কাকে বাঁচাবে? আপনি, আমি কি বেঁচে থাকবো? কে কার খবর নেবে? তখনতো ধসবে ৫ লাখেরও বেশি ভবন। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে পুরো দেশে প্রায় ৫ লাখ ভবন ধসে পড়বে!! আমাদের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরাতো তাই বলছেন। রানা পস্নাজার মত একটি ভবন থেকেই মাত্র ক’হাজার মানুষ উদ্ধার করতে সকল শক্তি প্রয়োগ করেও কত দিন সময় লেগেছে। এই অবস্থা হলে ৫ লাখ ভবন ধসে পরলে বাঁচার কোন পথ আছে কি? বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। এ দেশ মারাত্মক ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও তাতে ভাবনা নেই কারোরই। সরকারও এ ব্যাপারে সজাগ নয়। এখনও দেশে প্রতিদিন অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মিত হচ্ছে। কেবল ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ভবন নির্মাণই নয় ভবনগুলোতে যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে তা খুবই নির্মাণের। দেশে নির্মিাণ কাজে প্রতিদিন যে পরিমাণ রড ব্যবহার করা হয় তার ৭০ ভাগই অতি নির্মাণের। এর মধ্যে ১৫/২০ গ্রেডের রডও রয়েছে। ভবন তৈরির ক্ষেত্রে ভেজাল সিমেন্ট, দুর্বল ইট ব্যবহার হচ্ছে হরহামেশাই। এ অবস্থায় ভূমিকম্প হলে আমাদের ভাগ্যে কি ঘটবে তা হয়তো আমাদের ভাবনায়ও নেই। জাপানে ঘনঘনই ভূমিকম্প হয়। তারা তা মোকাবিলাও করে। ভূমিকম্প হলে তারা এই অবস্থা থেকে দুই একদিনে বেরিয়ে আসতে পারে। জাপানের ভবনগুলো সেভাবেই নির্মাণ করা হয়। জাপানে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ভবন দোলে কিন্তু ভবন ধসে পড়বে না। আমাদের ভবনগুলো যদি জাপানের মতো করে বানানো হয় তাহলে বোধয় এই অবস্থা থেকে আমরা কিছুটা হলেও বাঁচতে পারি। কিন্তু এখনও সেভাবে ভাবছে না জনগণ। সরকারতো ভাবেই না। এ ব্যাপারে সরকারের কোন পরিকল্পনা কিংবা প্রচার প্রচারণা চোখে পরবার মতো নয়।

এ অবস্থায় প্রশ্ন জাগে, ভূমিকম্প মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত? রানা পাজা ধসের পরই আমাদের সক্ষমতা কতটুকু তা আর বুঝতে বাকি ছিল না। ভূমিকম্প পরবর্তী প্রস্তুতি খুবই জরুরি। হাল সময়ে যে ভূমিকম্প হয়েছে, তিনটিরই উৎপত্তিস্থল ছিল নেপাল এবং ভারতে। এ সময় ৬.৭, ৭.৪ এবং ৭.৯ মাত্রায় ভূমিকম্প হয়। এ ছাড়াও এ সময়ে ছোট এবং মাঝারি কয়েক দফা ভূকম্পন অনুভূত হয়। মাত্রা হিসাবে নেপাল এবং ভারতের প্রায় অর্ধেক মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয় বাংলাদেশে। ভারত এবং নেপালের সম-মাত্রায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ভবন ধসে এবং হেলে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত ভয়াবহ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

সরকার তরফে যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও ভূমিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেয়ার ন্যূনতম প্রস্তুতিও যে নাই তা স্পষ্ট। ব্যাপক অভাব রয়েছে জনসচেতনতারও। ভূমিকম্পের ব্যাপারে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কোনটাই সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে অনেক মূল্যবান সময় অপচয় হয়েছে। আর বিলম্ব করা সমীচীন হবে না। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের প্রকৃত সময় এখনই। ভূমিকম্প মোকাবিলায় সর্বদা আমাদের নিজেদেরই প্রস্তুত থাকতে হবে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য  হওয়া উচিত দুটি। প্রথমত, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাকে নিম্নতম পর্যায়ে রাখা এবং দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেয়া। বাংলাদেশ একটি আরও বড় মাত্রার ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে বিশেষজ্ঞদের এমন সতর্কবাণীর পর এ বিপদাশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না কিছুতেই। এ অবস্থায় কখন যে ভূমিকম্প আঘাত হানে; কে তার শিকার হয় কে জানে। ৪ জানুয়ারীর ভূমিকম্পের পর আতঙ্ক আরও বেড়েছে। আর এ ভয় যেন জয় করার কোন উপায় নেই। কখন হবে ভূমিকম্প? এ আতঙ্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। এ আতঙ্ক গোটা দেশবাসীকে পেয়ে বসেছে। ভূমিকম্প কোথায় হবে? কখন হবে এবং তা কত মাত্রায় হবে তা আগ বাড়িয়ে কেউ বলতে পারে না। ভূমিকম্পের বিষয়টি সম্পূর্ণই অনুমেয়। তবে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার কিছু পূর্বলক্ষণ আছে। যা বাংলাদেশে বেশ লক্ষণীয়। এর লক্ষণ  হিসেবে প্রায়ই দেশের কোথাও না কোথাও মৃদু ও মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল ভূমিকম্পই নয়, দেশের উপকূলীয় এলাকা ঘিরে ভয়াবহ সুনামি সৃষ্টির জন্য সাইসমিক গ্যাপ বিরাজমান রয়েছে। এ গ্যাপ থেকে যে কোন সময় সুনামিও হতে পারে। তাদের মতে বঙ্গোপসাগরের উত্তরে আন্দামান থেকে টেকনাফ পর্যন্ত  সাবডাকশন জোন বরাবর ৬শ’ কিলোমিটারের একটি সাইসমিক গ্যাপ রয়েছে। আমাদের দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তি এই সাইসমিক গ্যাপে জমা হয়ে আছে। এই সাইসমিক গ্যাপ আমাদের জন্য অশনি সংকেত। এখান থেকে ৮ মাত্রার মতো শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা যদি সাগরতলে হয় তাহলে সেই ভূমিকম্প সুনামি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামিরই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক অংশে কমে যাবে।

প্রথমত যা করতে হবে- পরিবারের সবার সাথে বসে ভুমিকম্পের সময় কি করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে- মোট কথা আপনার পরিবারের ইমার্জেন্সি পস্ন্যান কী সেটা ঠিক করে সব সদস্যদের জানিয়ে রাখুন। নিচের ১০টি টিপস পারলে ফটোকপি করে পরিবারের সকল সদস্যকে দিন। বিষয়গুলো নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করম্নন। সম্ভব হলে অন্যদেরও তা সরবরাহ করম্নন। বিষয় গুলো জানা থাকলে ভুমিকম্পের সময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম হতে পারে। আসুন ভুমিকম্পের সময়ন কি করা উচিত তা ঝট্‌ফট্‌ জেনেনি।

১। ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি। অর্থাৎ কম্পন শুরম্ন হলে মেঝেতে বসে পড়ুন, তারপর কোন শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নীচে ঢুকে কাভার নিন, এমন ডেস্ক বেছে নিন বা এমনভাবে কাভার নিন যেন প্রয়োজনে আপনি কাভারসহ মুভ করতে পারেন। তাদের মতে, ভূমিকম্পে আমেরিকার খুব কম বিল্ডিংই কলাপস করে; যেটা হয় তা হল আশেপাশের বিভিন্ন জিনিষ বা ফার্নিচার গায়ের উপর পড়ে নেক-হেড-চেস্ট ইনজুরি বেশি হয়। তাই এগুলো থেকে রক্ষার জন্য কোন শক্ত ডেস্ক বা এরকম কিছুর নীচে ঢুকে কাভার নেয়া বেশি জরম্নরী।

২। ভূমিকম্পের সময় কোন ফ্লোর নিরাপদ? কিভাবে দালান ভেঙ্গে পড়ে- কাত হয়ে নাকি এক তলার উপর আরেকটা। অনেকে এসব প্রশ্নে উত্তর জানতে চান। এটা ঐ জায়গার মাটির গঠন, বিল্ডিং কিভাবে তৈরি- এটার ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে। সাধারণত ভূমিকম্পের সময় চারভাবে ফ্লোর বা দালান ধ্বসে পড়তে পারে। দালানের কোনতলা বেশি নিরাপদ- এক্ষেত্রে বেশিরভাগ মতামত যেটা পেয়েছি তা হল ভূমিকম্পের সময় উপরের দিকের তলাগুলোতে দুলুনি হবে বেশি, নিচের তলায় কম। কিন্তু দালান যদি উলম্ব বরাবর নিচের দিকে ধ্বসে পড়ে তবে নিচ তলায় হতাহত হবে বেশি, কারণ উপরের সব ফ্লোরের ওজন তখন নিচে এসে পড়বে।

৩। যে ফ্লোরেই থাকুন- ভূমিকম্পের সময় বেশি নড়াচড়া, বাইরে বের হবার চেষ্টা করা, জানালা দিয়ে লাফ দেবার চেষ্টা ইত্যাদি না করাই উত্তম। একটা সাধারণ নিয়ম হল- এসময় যত বেশি মুভমেন্ট করবেন, তত বেশি আহত হবার সম্ভাবনা থাকবে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অফ দ্য রেকর্ড একটা কথা- যদি গ্রাউন্ড ফ্লোরে একেবারে দরজার কাছে থাকেন, তবে এক দৌড়ে বাইরে কোন খোলা জায়গায় চলে যান। সিঁড়ি পার হয়ে যেতে হলে না যাওয়াই ভালো।

৪। সিঁড়িতে আশ্রয় নেয়া উচিত নয়। এছাড়া ভূমিকম্পের সময় এলিভেটর/লিফট ব্যবহারও উচিত না।

৫। রাতে বিছানায় থাকার সময় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার কর্মি বলছে গড়িয়ে ফ্লোরে নেমে পড়তে- এটা বিল্ডিং ধ্বসার পার্সপেক্টিভেই। রেডক্রস বলছে বিছানায় থেকে বালিশ দিয়ে কাভার নিতে, কারণ সিলিং ধসবে না, কিন্তু ফ্লোরে নামলে অন্যান্য কম্পনরত বসত্ম থেকে আঘাত আসতে পারে।

৬। ভূমিকম্পের সময় ভেতরের দিকে না থেকে বাইরের দিকে ওয়ালের কাছে আশ্রয় নেয়া উচিত- এটা নিয়ে কোন বিরোধ পাইনি। যেটা পেয়েছি তা হল এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং এর উলটো হাইপোথিসিসও নাকি আছে যে ভেতরের দিকে থাকাই ভালো। ভূমিকম্পের সময় বাইরের ওয়ালের কাছে আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ মূলত বিল্ডিং ধ্বসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বলা। ভূমিকম্পে যদি দালান ধ্বসে পড়ে তবে বাইরের দিকের ওয়ালের কাছে থাকলে ধ্বংসস্তুপ থেকে তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাবার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে হচ্ছে এসময় ভেতরের দিকে আশ্রয় নেয়া অর্থাৎ জানালা, কাঁচ, বাইরের ওয়াল, দরজা সবকিছু থেকে দূরে থাকা। আপনি যদি নতুন, মজবুত কোন দালানে থাকেন, তবে ঋঊগঅ-পরামর্শ অনুযায়ী ভেতরের দিকেই থাকেন- জানালা, কাঁচ, বাইরের ওয়াল সবকিছু থেকে দূরে; আর যদি পুরান ঢাকার বাড়িগুলোর মত ঝরঝরে কোন দালানে থাকেন তবে বাইরের ওয়ালের কাছে আশ্রয় নিন, দালান ধ্বসে পড়লে যেন কম জিনিসের মধ্যে চাপা পড়েন।

৭। ভূমিকম্পের সময় গাড়ি বন্ধ করে গাড়ি থেকে বের হয়ে বসে বা শুয়ে পড়তে। অবশ্য রেড ক্রস বলছে গাড়ি বন্ধ করে গাড়ির ভিতরেই বসে থাকতে। গাড়ির বাইরে থাকলে আহত হবার সম্ভাবনা বেশি। রেড ক্রসের এই পরামর্শ যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে দেয়া এবং এটা সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে।

৮। সব বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে ‘আফটার শক’ বলে। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন, না হলে পচা শামুকেই শেষমেষ পা কাটতে পারে।

৯। বড় বড় এবং লম্বা ফার্নিচারগুলোকে যেমন- শেলফ ইত্যাদি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখুন যেন কম্পনের সময় গায়ের উপর পড়ে না যায়। আর টিভি, ক্যাসেট প্লেয়ার ইতাদি ভারী জিনিষগুলো মাটিতে নামিয়ে রাখুন।

১০। প্রথম ভূমিকম্পের পর ইউটিলিটি লাইনগুলো (গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোন লিক বা ড্যামেজ দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।

ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ হওয়া উচিত দুইটি। প্রথমত, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাকে নিম্নতম পর্যায়ে রাখা এবং দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্পপরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেওয়া। দীর্ঘদিন যাবৎ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকির কথা বলা হইলেও উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের অবস্থা এখনও খুবই শোচনীয়। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিম্নতম পর্যায়ে রাখতে হলে বাড়িঘর ও হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত। অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আর বিলম্ব করা সমীচীন হবে না। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের প্রকৃত সময় এখনই। আর কালক্ষেপন না করে এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের জরম্নরি পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here