চীন ১৯৮০ সালে পরিবার পিছু একটি সন্তান নীতি চালু করেছিল। জনসংখ্যার বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না বলে দাবি করেছিল তৎকালীন চীনা কমিউনিস্ট সরকার। এই নীতি কার্যকর হওয়ার ফলে চীনের জনসংখ্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে কত বড় নির্মম সত্যকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তারই সন্ধান দিয়েছেন সাংবাদিক মেই ফং।

৪৪ বছর বয়সি সাংবাদিক মেই ফং-এর দাবি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা চীন ও ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভারত খুবই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। কিন্তু চীনে যেটা হচ্ছে সেটা একনায়কতন্ত্রের মতো। ভারতেও ছেলে পিছু মেয়েদের জনসংখ্যা কম। চীনেও একই ছবি। এমনকি পুরো বিশ্বেই ‘জেন্ডার প্যারিটি’ একটা বড় সমস্যা। চীনের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা মারাত্মক। বিশেষ করে চীনের নীতি সরকারিভাবে নারীদের দমন-পীড়ন করছে। কোন বাবা-মা সহজে কন্যা সন্তানের জন্ম হোক চাইছেন না। চীনে ১৩০ জন ছেলে পিছু ১০০ জন মেয়ে।

১৯৮০ সালে চীনের ঘোষিত নীতিতে বলাই ছিল পরিবার পিছু একটি সন্তানই শুধুমাত্র যাবতীয় সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবে। যেমন শিক্ষা থেকে চিকিৎসা, চাকরিক্ষেত্রে সরকার যে সুবিধা দেয় সেটা একটি মাত্র সন্তানের জন্যই প্রযোজ্য হবে। ফলে, ওই সময় যে সব চীনা পরিবারে একের বেশি সন্তান ছিল তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। এমনকি এই পরিবারে যদি বড় সন্তান কন্যা হয় তাকে সরিয়ে সেখানে ছেলের নাম সরকারি খাতায় তোলা হয়। আজ সারা চীনেই এমন লক্ষ লক্ষ মেয়ে আছে যাদের সরকারি খাতায় নামই নেই। এরা পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। এমনকি চিকিৎসা থেকে শুরু করে সরকারের যে কোন ধরনের পরিষেবা সুযোগ এদের জন্য নেই। বাড়ির চৌহদ্দিতে, ঘরের কোণে গোপনে এইসব মেয়েরা মানুষ হয়েছে। এদের অধিকাংশেরই কোনদিন বিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। কারণ এমন বেআইনি নারী নাগরিকদের পাত্রস্থ করা কঠিন শুধু নয়, ধরা পড়লে রাষ্ট্র কর্তৃক শাস্তি অবধারিত। ১৯৯০ সালের পর থেকে চীনে বিপুল পরিমাণে কন্যাভ্রুণ হত্যা করা হয়েছে।

এই চরম সত্যের সঙ্গে এক করুণ কাহিনির বর্ণনাও দিয়েছেন মেরি ফং। তিনি জানিয়েছেন, এই সব নারীরা বড় হয়েছেন, জীবনের নিয়মে এদের যৌবন এসেছে। কিন্তু, যৌন সুখ মেটানোর জন্য চীনের এই বেআইনি নারী নাগরিকদের অধিকাংশই পুরুষসঙ্গী পান না। তাই এইসব নারীদের জন্য আজ রমরম করে চীনে বৃদ্ধি পেয়েছে ‘সেক্স ডল’-এর ব্যবসা। এই নারীদের অধিকাংশই আজ ‘সেক্স ডল’-এর মাধ্যমে নিজেদের যৌন তৃষ্ণা নিবারণ করছেন। এমনকি এই সেক্স-ডলের রমরমা আজ চীনের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এক সমীক্ষাতেও দেখা গেছে, চীনের বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ‘সেক্স ডল বিক্রি হয়। বলা হচ্ছে বিশ্বে বিক্রি হওয়া মোট ‘সেক্স ডল’-এর ৩০ শতাংশ নাকি বিক্রি হয় চীনে। মেই ফং-এর মতে, ভারতেও ‘সেক্স ডল’-এর চাহিদা থাকলেও সেখানকার নারীদের সমস্যাটা কোন ভাবেই সরকারের তৈরি করা নীতির সঙ্গে সম্পর্কৃত নয়। অথচ চীনের মতো জনবিস্ফোরণ আটকাতে ভারতও নানা নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু কোনভাবেই সেখানকার সরকারের তৈরি করা নীতির জন্য নারীরা চীনের নারীদের মতো কাম তাড়িত হয়ে পড়েননি।

মেই ফং-এর এমন দুঃসাহসী প্রতিবেদন উঠে এসেছে তাঁর লেখা বই, ‘ওয়ান চাইল্ড: দ্য পাস্ট অ্যান্ড ফিউচার অফ চায়না’জ মোস্ট র‌্যাডিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট’-এ। আপাতত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চীনের নারীদেরর এই করুণ কাহিনি তুলে ধরছেন মেই ফং। সূত্র: এবেলা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here