জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর কালকিনি ইউনিয়নের জনতা বাজার সংলগ্ন বাত্তিরখালের উপর প্রায় ১৫০ ফুট লম্বা সাঁকোটির এখন বেহাল দশা। চলাচলে অনুপযোগী সাঁকোটি পারাপারে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝুঁকি নিয়ে চলছেন পাঁচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার গ্রামবাসী। এতে বেড়েছে দুর্ভোগ। এই যেন মৃত্যু ফাঁদ।
চর কালকিনি ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডে ৫ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বাঁশ-কাঠ দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। দুই বছর না যেতেই সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। উপায় না পেয়ে স্থানীয়রা কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এখন সাঁকোটির বেহালদশা। যে কারণে প্রতিদিনই পারাপারে ঘটছে দুর্ঘটনা। তবুও ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয় শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ চর কালকিনি ও চর মার্টিন ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার গ্রামবাসীকে।
চর কালকিনি একটি কৃষি নির্ভর গ্রাম। এখানে ধান, বাদাম, মরিচ, সয়াবিন উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার ফসল, শাক-সবজি উপজেলার সদর ও জেলা শহরে যায়। কিন্তু কৃষিপণ্য নিয়ে খাল পার হতে কৃষকরা ভোগান্তিতে পড়েন। শিশুদের বিদ্যালয়ে যেতে খাল পার হতে হয়। এই গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান। দাবির মুখে ব্রিজ না হয়ে সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটি দুই বছরের মাথায় নড়বড়ে হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ওই ভাঙা সাঁকোতে পারাপার হতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙা সাঁকোতে পারাপার হচ্ছেন মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, চর কালকিনি মিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কে আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ মার্টিন হাজিপাড়া নূরানি মাদ্রাসা এবং নাছিরগঞ্জ কাওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয় গ্রামবাসী।
শিক্ষার্থী আরাফাত, সিয়াম, বৃষ্টি ও নুসরাত বলেন, গত তিন বছর ধরে সাঁকোটি ব্যবহার অনুপযোগী। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এই পথেই ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় আমাদের।
চর কালকিনি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কেউ এই গ্রামে আত্মীয়তা করতে চায় না। ছেলে-মেয়েকে বিয়ে করাতে বিপাকে পড়তে হয়।
বৃদ্ধ রিয়াজ ভান্ডারী ও শাহ আলম মোয়াজ্জেন বলেন, ৭০-৮০বছর বয়সে এই ভাঙা হাক্কা (সাঁকো) দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। ভয়ে ভয়ে পার হতে হয়। মনে হয় এই যেন নিচে পড়ে গেলাম।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, একটি ব্রিজের অভাবে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারে না। কয়েকদিন আগে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিশু পানিতে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। এমন পরিস্থিতির কারণে অনেক অভিভাবক তাদের শিশু সন্তানকে স্কুলে দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
এদিকে, কৃষকরা উৎপাদিত ফসল হাটে-বাজারে নিতে পারেন না। যে কারণে তারা ন্যায্যমূল্য পায় না।
ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ শাওবান বলেন, আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বারকে ভোট দিয়ে বানিয়েছি আমাদের উপকারের জন্য। কিন্তু আমাদের কোন উপকারে আসছেনা তারা। এতে সরকারের দুর্নাম বাড়ছে। একটি ব্রিজের অভাবে ছোট ছোট শিশুরা খালে পড়ে আহত হচ্ছে। আমরা কিছু চাই না, শুধু একটা ব্রিজ চাই। এটাই আমাদের দাবি।
চর কালকিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার সাইফ উল্যাহ বলেন, বাত্তির খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ খুবই জরুরী। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করা হয়েছে।