ঢাকা : বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সুপ্রিমকোর্টে লিভ টু আপিল করেছেন।
রোববার সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদার পক্ষে আপিলটি ফাইল করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। লিভ টু আপিল দায়েরের পর এই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, দুদুকের এ মামলাতে বলা হয়েছে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কয়েকজন মিলে বড়পুকুরিয়া প্রকল্পে ১৫৮ কোটি টাকা ক্ষতি করে আত্বসাৎ করেছে।
তিনি বলেন, এ মামালায় প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের ডেপুটি ডিরেক্টর মনিরুল হক তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যেহেতু তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাই এটা নিয়মিত কাজ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রীর খুটি নাটি বিষয় যাচাই বাচাই করা সম্ভব নয়। তবে ২০০৮ সালের ১ জুন এ রিপোর্ট দাখিলের পর একই বছরের ৫ অক্টোবর আরেকটি চার্জশীট দাখিল করা হয়। যেখানে বলা হয়, ১৫৮ কোটি টাকা ক্ষতি করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। খোকন বলেন, আমরা আপিল বিভাগেও এ মামলাটি বাতিল চেয়েছি।
এর আগেও হাইকোর্টে এ মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। সেটি আদালত শুনানী করে খালেদার আবেদন বহাল রাখেন। হাইকোর্টের এ রায়ের পুর্নাঙ্গ কপি গত মাসের ২৫ মে প্রকাশ করা হয়। সে রায়ের বিরুদ্ধে আজ লিভ টু আপিল করলেন খালেদা জিয়া। আগামী ১৭ জুলাই এ মামলায় বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার হাজির হতে দিন ধার্য রয়েছে।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তার আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. আবদুর রবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। একই সঙ্গে ইতিপূর্বে মামলার বিচারিক কার্যক্রমের ওপর দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ১২ জুন মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। রায়ে স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ায় বিচার কার্যক্রম চলতেও কোনো বাধা থাকছে না বলে মত আইনজীবীদের।
এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার নিন্ম আদালত থেকে আগেই ওই মামলায় জামিন পেয়েছিলেন এবং এখনও তা বহাল আছে। তাই হাইকোর্টের রায়ে আত্মসমর্পণের কোনো নির্দেশনা আসেনি। সেনা নিয়ন্ত্রিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে খনি দুর্নীতির মামলা হয়।
ওই বছর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয় দুদক। চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়। এরপর মামলাটি বাতিল চেয়ে ওই বছরই হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। গত বছরের ১ জুলাই থেকে খালেদা জিয়ার এ আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর আবেদন খারিজ করে রায় দেন আদালত।
এর আগে এ দুর্নীতি মামলা নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের করা দুটি আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে গেছে। এই দুই জামায়াত নেতা মামলার অভিযোগে বর্ণিত ঘটনাকালে খালেদা জিয়া সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। মানবতারিবরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াতের এই দুই নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।