বেল মন্দির ধ্বংসডেস্ক নিউজ :: গোটা বিশ্বের প্রত্নসম্পদের ওপর আবারো বড় ধরনের আঘাত হেনেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বিস্ফোরক ব্যবহার করে সিরিয়ার পালমিরার দুই হাজার বছরের বেশি পুরনো মন্দির ‘টেম্পল অব বেল’-এর ব্যাপক ক্ষতি করেছে সংগঠনটি। স্থানীয় কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবার এ খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো।

এদিকে, ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলীয় আল-আনবার প্রদেশ থেকে দুই শতাধিক বেসামরিক লোক অপহরণ করেছে জঙ্গিরা। স্থানীয় একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইএসবিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অংশ নেয়ায় এসব মানুষকে অপহরণ করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অপহৃতদের ভাগ্যে কী ঘটেছে এবং তাদের কোথায় নিযে যাওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি।

মানবাধিকার সংস্থা দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ‘টেম্পল অব বেল’ নামে পালমিরার গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরটির ভেতর আইএস বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতে মন্দিরের মূল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পালমিরার একজন কর্মী মোহাম্মদ হাসান আল-হামসি গত রোববার রাতে মন্দিরের অংশবিশেষ ধ্বংসের খবর জানিয়েছেন। ফ্রান্সের একটি বার্তা সংস্থাকে আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘মন্দিরের কলাম ও ইট_ সব মাটিতে পড়ে আছে।

এমন বিকট বিস্ফোরণের মাধ্যমে এটাকে ধ্বংস করা হয়েছে, যেটা বধিরও শুনতে পাবে।’ তবে সিরিয়ার পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মামুন আবদেল করিম দামেস্ক থেকে জানান, তিনি এখনো পালমিরার এই মন্দিরের পরিণতির ব্যাপারে নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, ‘মন্দির ধ্বংসের গুজব সবসময়ই ছড়ানো হচ্ছে। সুতরাং এ ধরনের খবরের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হচ্ছে।’ বিভ্রান্তির মূল কারণ, আইএস মন্দির ধ্বংসের সাম্প্রতিক কোনো ছবি প্রকাশ করেনি। এক সপ্তাহ আগে জঙ্গিরা পালমিরার বাল শামিন মন্দির ধ্বংস করে। সেই সময় অবশ্য এর ছবি প্রকাশ করেছিল আইএস।

উল্লেখ্য, ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়া আইএস চলতি বছরের মে মাসে পালমিরা দখল করে। তখনই বিশ্ব ঐতিহ্যের এই অংশকে আইএস জঙ্গিরা ধ্বংস করবে বলে আশঙ্কা রা হয়েছিল। ইরাকেও বেশ কয়েকটি প্রাচীন নিদর্শন ধ্বংস করেছে জঙ্গিরা। দেশটির মসুল শহরে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে আগুন দিয়ে হাজার হাজার প্রাচীন বই পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া মসুলের কেন্দ্রীয় জাদুঘরের প্রাচীন শিল্পকর্মও ধ্বংস করেছে।
পালমিরা স্থানীয়ভাবে ‘তাদমুর’ হিসেবে পরিচিত। শহরটিতে মরুভূমির অতি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যাকে ইউনেস্কো এবং অন্যরা প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে। পালমিরাকে ‘মরুভূমির মুক্তা’ কিংবা মরুদ্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৯ শতকেও ভূমধ্যসাগর এবং উপসাগর-মধ্যবর্তী সিল্ক রোডের যাত্রীরা পালমিরায় বিরতি নিত।
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের শুরুর দিকে রোমান শাসনামল এবং পরবর্তী ৪০০ বছর ধরে পালমিরার খ্যাতি বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় শতকে খ্রিস্টধর্ম আসার আগ পর্যন্ত পালমিরায় ব্যাবিলনীয় ঈশ্বর বেল এবং ইয়ারহিবল (সূর্য) ও আগলিবলের (চন্দ্র) পূজা করা হতো। সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি বছর দেড় লাখের বেশি পর্যটক পালমিরা পরিদর্শন করতেন।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here