নোয়াখালী বিভাগ চাই   সারোয়ার মিরন ::

আবারো বঞ্চিত বৃহত্তর নোয়াখালী। বর্তমান সরকার আরো তিনটি বৃহত্তর জেলাকে বিভাগ করার ঘোষনা দিয়েছে। তার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলাকে বিভাগ করার কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রীসভা। বাকি দুটি ফরিদপুর ও বৃহত্তর নোয়খালী ও কুমিল্লা জেলাকে নিয়ে অন্য আরেকটি বিভাগ করার উপযোগিতা যাচাইয়ের কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষকে। কুমিল্লা জেলাকে নিয়ে নোয়াখালীসহ একটি বিভাগ করা হলে অপমৃত্যূ ঘটবে বহত্তর নোয়াখালী জেলার প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের।

বেশ কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছে নোয়াখালীকে সিটি কর্পোরেশনে উত্তীর্ন করা হবে। রাজনৈতিক ও স্থানীয় দ্বন্ধে তা সম্ভব হয়নি এতো দিনেও। গতো সেশনে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে শেখ হাসিনা নোয়াখালী হাউজিং মাঠের বিশাল জনসভায় নোয়াখালীকে সিটি কর্পোরেশনে উত্তীর্ন করার ঘোষনা দেন।

সে থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা হিসেবে নোয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুরে আনন্দের বন্যা বইয়ে গিয়েছে। বছর দুয়েকের ব্যবধানে আশাহত প্রায় আশি লক্ষ জনগোষ্ঠি। বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীকে উক্ত সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্তি করা না করা ও ভোটের রাজনীতি আর হিসাব নিকাশের কাছে পরাজিত হয়ে আজো বাস্তবায়িত হয়নি সিটি কর্পোরেশন।

বৃহত্তর নোয়াখালীকে বিভাগ করার দাবি স্বাধীনতার পর থেকে শুরু হলেও তা বাস্তবায়িত হবার সুযোগ পেয়েও হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতাদের দুর্বল নেতৃত্বের কারনে। নোয়াখালীকে বিভাগ করার দাবিতে বয়ে চলা আন্দোলন ও দীর্ঘ দিনের দাবি হলেও নোয়াখালী জেলাকে কুমিল্লা বিভাগের অধীনস’ করে বিভাগ করা হলে বৃহৎ জনগোষ্ঠির জেলা হিসেবে নোয়াখালীর সকল সম্ভাবনার অপমৃত্যূ ঘটবে। বন্ধ হবে সকল উন্নয়নের দ্বার।

স্বাধীনতার প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর পর বৃহত্তর নোয়াখালীতে স্থাপিত হয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তারও পরে স্থাপিত হয় মেডিক্যাল কলেজ। এতোকাল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ শুন্য ছিলো দেশের গুরুত্বপূর্ন এ দক্ষিনাঞ্চল। এখনো নেই কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাডেট কলেজ। কৃষির অমিত সম্ভাবনা থাকলেও হয়নি কোন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও। সূবর্নচর উপজেলায় একটি বিমানবন্দর ও একটি সেনা ক্যাম্প নির্মানাধীন হলেও তার গতি অত্যন্ত মন’র। প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও এলাকায় হয়নি কোন নৌ-বন্দর কিংবা মেঘনা তীর কেন্দ্রিক কোন পর্যটন স্থাপনা।

বিএনপি সরকারের শাষনামালে নোয়াখালীর মন্ত্রী ছিলেন। বেশ প্রভাবও ছিলো তাঁর। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেও এ অঞ্চলের মন্ত্রী আছেন। সরকারে তারও প্রভাব অনেক। আছেন জাতীয় সংসদের স্পীকারও। তিনিও বেশ প্রভাবশালী। সব সরকারের সময়ে নোয়াখালীর মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাবশালী লোকজন থাকলেও কি করে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলাকে অন্য একটি জেলার অধীন করে বিভাগ করা হবে তা আমার বোধগম্য নয়।

বিভাগ হবার মতো সব উপায় উপকরন ও যোগত্যা বৃহত্তর নোয়াখালীর জেলার আছে। ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী এ তিনটি জেলাকে নিয়ে বিভাগ গঠন করলে এ অঞ্চলের বিশাল এক জনগোষ্ঠির পাশাপাশি সরকারের ও অনেক আর্থিক সাশ্রয় ঘটবে। বৃহত্তর নোয়াখালী জেলাকে বাদ রেখে কিংবা এ অঞ্চলকে অন্য কোন নবগঠিত বিভাগের সাথে যুক্ত করা হলে এ অঞ্চলের মানুষ কোন ভাবেই মেনে নেবে না।

ইতিমধ্যে কুমিল্লা জেলাকে প্রধান করে বৃহত্তর নোয়াখালীকে কুমিল্লা বিভাগে অন্তর্ভূক্ত করার সম্ভাব্যতা যাচায়ের নির্দেশনার বিরুদ্ধে নোয়াখালীর চৌমুহনীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও মিছিল করেছে জনগন। সচেতন মহলও নড়ে চড়ে উঠেছেন। রাগে ক্ষোভে ফুঁসছে জনগন। কোন ভাবেই এ অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না কেহই। সবার মনে প্রশ্ন কি হবার কথা আর কি হতে চলেছে!

সরকারকে অবশ্যই বিবেচনা রাখতে হবে রাজনৈতিক বা অন্য কোন কারনে বৃহত্তর নোয়াখালীকে বিভাগ না করা হলে সাধারন মানুষ ফুঁসে উঠবে। এ সরকারের গত মেয়াদে এ অঞ্চলের ভোট ব্যাংক এর হিসেবে বিভাগ করনের এ সিদ্ধান্ত না নিলেও বর্তমানে এ অঞ্চলের প্রায় সব সংসদ সদস্যই আওয়ামীলীগ তথা মহাজোটের।

সুতরাং বৃহত্তর নোয়াখালী জেলাকে সম্পূর্ন ভাবে স্বতন্ত্র একটি বিভাগ করার বিষয়ে বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেবেন। স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন ভাবে অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষ আর বঞ্চিত হতে চায় না।

সরকারের প্রতি একান্ত অনুরোধ ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী এ তিনটি জেলার সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর নোয়াখালীকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ গঠনে আন্তরিক হবেন। পাশাপাশি এ অঞ্চলের সর্বস্তরের জনগন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সকল শ্রেনি পেশার মানুষকে নোয়াখালীকে বিভাগ গঠনের এক দাবিতে সোচ্চার হবার আহবান করছি। দাবি একটাই, বৃহত্তর নোয়াখালী বিভাগ চাই। তবে তা কোন ভাবেই অন্য কোন জেলা বা বিভাগের অধীনে নয়।

 

লেখক: সারোয়ার মিরন, বৃহত্তর নোয়াখালীর অধিবাসী, ইমেইল: Sarwarmiran87@gmail.com

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here