বিশ্বশান্তিতে বাংলাদেশের ৭ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী কাজ করছেডেস্ক নিউজ :: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শান্তিরক্ষীদের দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ বছর বিশ্বের ২২টি দেশের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য বাংলাদেশে এসেছেন এ প্রশিক্ষণ নিতে। যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভবিষ্যৎ শান্তিরক্ষী হয়ে কাজ করবেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপরারেশন্স (বিপসটে) ২ সপ্তাহব্যাপী এ প্রশিক্ষণ শুরু হতে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করবেন। ৩টি ক্যাটাগরিতে বিপসটে দেয়া হবে শান্তিরক্ষী হিসেবে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ দিবেন বাংলাদেশ সামরিক বাহনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড কর্তৃক যৌথভাবে প্রশিক্ষণ অনুশীলন শান্তিদুত-৪ আয়োজন করেছে। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআরে) এক সংবাদ সম্মেলনে বিপসটের প্রধান প্রশিক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তোফায়েল আহমেদ এসব তথ্য জানান।

এই প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানানোর পরও কেন ভারত এবং মায়ানমার অংশ নিচ্ছে না তা জানতে চাইলে বিপসট এর প্রধান প্রশিক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ কেবল প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। প্রতিবছরই কোন না কোন দেশ এ জাতীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের বিমান ভাড়া থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানের সব খরচ বহন করছে জাতিসংঘ। তারাই বিভিন্ন দেশকে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে দাওয়াত দেয়। এবার মোট ৪২ টি দেশকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল।

ভারত ও মায়ানমারসহ কয়েকটি দেশে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই। এ ধরনের একটি প্রশিক্ষণে ভারত ও চায়নার অংশগ্রহণ না থাকা এবং ভারতের সেনাপ্রধানের সম্প্রতি বক্তব্যে এ ধরনের প্রশিক্ষণে কোন ক্ষেত্র তৈরি করবে কিনা প্রশ্নে বি.জে. তোফায়েল বলেন, প্রশিক্ষণে চায়নার অংশ না থাকলেও তারা সেমিনারে অংশ নিবেন।

আর ভারতের একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা লে. কর্নেল ইকবাল সিন সিনহা সেমিনারে বক্তব্য দিবেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাই এ প্রশিক্ষণে ভারত ও চায়না অংশ না নিলেও এবং ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্যে কোন ধরনের টেনশন তৈরি করবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্রেনিং (বিপসট) এর প্রধান প্রশিক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আগে শান্তিরক্ষীরা মূলত পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকি খুব একটা ছিল না। এখন তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। কোন কোন পার্টি তাদের সাপোর্ট করছে না। কোথাও কোথাও এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস পুঁতে রাখা হচ্ছে। হেলিকপ্টার ক্র্যাশের ঘটনাও ঘটছে। তাছাড়া বিরূপ আবহওয়া তো আছেই। সব মিলিয়ে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা রক্ষাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৩৫ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ দিয়েছেন। আহত হয়েছেন ২১৩ জন শান্তিরক্ষী।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল আহমেদ জানান, পৃথিবীর খুব বেশি দেশে সংবিধানে শান্তির কথা উল্লেখ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ রয়েছে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথম দল শান্তিরক্ষী হিসেবে বিশ্ব শান্তির কাজে অংশ নেয়। ওই দলে ১৫ জন সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্য ছিলেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বশান্তিতে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করার ৩০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে এ বছর। জাতিসংঘের ৭০ বছরের ইতিহাসে ৬৯টি শান্তিরক্ষী মিশন ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

এর মধ্যে বাংলাদেশ ৫২টি শান্তি মিশনে অংশ নিয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে সামরিক বাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর ১ লাখ ৬১ হাজার ২৮১ জন শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ নারী শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালণ করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ১২টি মিশনে বাংলাদেশের মোট ৭ হাজার ৩২৭ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। যার মধ্যে সেনাবাহিনীর ৫ হাজার ৪৯৯, নৌবাহিনীর ৫০৩, বিমানবাহিনীর ৫০৪ এবং পুলিশের ৮২১ জন। এসব বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মধ্যে ১৩৯ জন নারী সদস্য আছেন।

‘অনুশীলন শান্তিদূত-৪’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর পরিচালিত একটি বহুজাতিক অনুশীলন। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট) এ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইউএস প্যাসিফিক কমান্ড (ইউএসপ্যাকম) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত গ্লোবাল পিস অপারেশনস্ ইনিশিয়েটিভ (জিপিওআই) এর পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত বহুজাতিক অনুশীলন। শান্তিদূত শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘শান্তির বার্তাবাহক’। অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পেশাগত ও কারিগরী দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ইউনিট পর্যায়ে অত্যাবশ্যক কর্মকাণ্ডের ওপর সার্বিক প্রশিক্ষণ প্রদান এ অনুশীলনের উদ্দেশ্য।

বিপসট ১৯৯৯ সালের ২৪ জুন গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে যাত্রা শুরু করে। এ পর্যন্ত বিপসট থেকে ২ হাজার বিদেশি এবং ১৫ হাজার বাংলাদেশিসহ মোট ১৭ হাজার শান্তিরক্ষিকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ২০০ সামরিক কন্টিনজেন্টকেও (ইউনিট) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ বছর ১৩১৯ শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৫৬৬ জন বিদেশি রয়েছে। এছাড়া ৪ জন রয়েছে বেসামরিক ব্যক্তি। যাদের এবার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে শান্তিরক্ষী হিসেবে। এই অনুশীলনটি প্রতিবছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত হচ্ছে। বিপসটে ২০০২, ২০০৮ ও ২০১২ সালে এ অনুশীলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের কৌশলগত এবং কারিগরি দক্ষতাবৃদ্ধি করাই শান্তিদূত-৪ এর উদ্দেশ্য। অনুশীলন শান্তিদূত-৪ তিনটি ভাগে একই সময়ে পরিচালিত হবে; ফিল্ড ট্রেনিং ইভেন্ট (এফটিই), স্টাফ ট্রেনিং ইভেন্ট (এসটিই) এবং ক্রিটিক্যাল এনাবেলার ক্যাপাবিলিটি এনহান্সমেন্ট (২সিই)।

এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বাংলাদেশসহ ২২টি দেশের মোট ১৩১৯ এর বেশি অংশগ্রহণকারী যোগদান করবেন। দেশসমূহ হলো বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, বসনিয়া-হারজেগভিনা, কানাডা, ফিজি, ঘানা, গ্রেট ব্রিটেন, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কার্গিজস্তান, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, পেরু, ফিলিপাইন, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সিয়েরালিওন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, ইউএসএ এবং ভিয়েতনাম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here