আর্জেন্টিনাসারোয়ার মিরন :: আইসল্যান্ডের বিপক্ষে একটিমাত্র গোল করা ছাড়া এ বিশ্বকাপে উল্লেখ করার মতো আর্জেন্টিনার কোন কিছুই চোখে পড়েনি। দর্শক সমর্থকেরা আনন্দ করা কিংবা হাততালি দেবার মতো কোন সুযোগই পাননি। উল্টো গোল খাওয়া, মেসির পেনাল্টি মিস, গোলকিপারের বোকামি, সহ খেলোয়াড়দের নিষ্প্রভ উপস্থিতি হতাশার জন্ম দিয়েছে। কোয়েশিয়া ম্যাচে দুটি গোল খাওয়ার পর সভ্য দেশী খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের খেই হারিয়ে ফেলা এবং অখেলোয়াড় সুলভ আচরন হতাশই করেছে বিশ্বকে।

গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচে বিপক্ষ দলের গোল পোস্টে সম্ভবনাময় কোন শ্যুটই করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ড দৃষ্টিকটু রক্ষনশীল খেললেও ওভার শ্যুটও চোখে পড়েনি। দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তো বলার মতো কিছুই নেই। যা আছে তার সবটাই লজ্জা আর গ্লানিময়। অন্তত ডজন খানেক বার নিজ গোল কিপারের কাছে ব্যাক পাস দিয়ে হাসির খোরাক হতে হয়েছে।

আর্জেন্টিনাগ্রুপ পর্বে কোন ম্যাচই জিততে পারবে না বলে আগেই ভবিষ্যৎবানী করেছেন ম্যারাদোনা। অনেকেই তাগে বিদ্রুপ করেছেন তখন। বাস্তবে তাঁর কথার সত্যতা অনেকাংশেই পাওয়া গেছে (পরের ম্যাচে নাইজেরিয়ার সাথে হারলে পুরো সত্যতা আসবে)। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা খুব উঁচু স্বরে বলেছেন আর্জেন্টিনার আক্রমন ভাগ অন্য দলকে ভয় পাইয়ে দেয়ার কারন হবে।

বেশ কয়েকজন প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় আছে এ দলটিতে। মেসি, ডি মারিয়া, দিবালা, হিগুয়েনসহ আরো কয়েকজন আছেন যারা যে কোন ম্যাচে যে কোন সময় ব্যবধান গড়ে দিতে সক্ষম। কিন’ বাস্তবে তারা কাগুজে বাঘ হয়েই থাকলেন। নেই কোন সামঞ্জস্য। ভুল পাস, বল পায়ে রাখতে না পারা, দ্রুত আক্রমনে যেতে না পারা, সমন্বয়হীনতাসহ ইত্যকার সব সমস্যায় স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে পারেনি তারা।

আর্জেন্টিনাঅবশ্য বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব উৎরাতেই তাদের গলঘর্ম হতে হয়েছে। বহু সমীকরন শেষে মেসি ম্যাজিকে কোন মতে বিশ্বকাপে এসেছে দলটি। কোর্স সাম্পাওলির কিছু কৌশলের সমালোচনা আসলেও মোটামুটি সবাই আশাবাদী ছিলেন কিছু একটা হবে বিশ্বকাপে। ব্যাপক আয়োজন নিয়ে এসেছে বিশ্বকাপ খেলতে রাশিয়া। একেবারে খাওয়া দাওয়া বউ বাবুর্চিসহ। ব্যাপক দাবির মুখে ইসরায়েলের সাথে বাতিল করেছে প্রস্তুতি ম্যাচ। এমন বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তের প্রসংশা করেছে। নিয়মিত গোলরক্ষক রোমেরো এর অপ্রত্যাশিত ইনজুরি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সম্ভবনা অনেকাংশেই হ্রাস করেছে। কিন’ দ্বিতীয় গোলরক্ষক এতোটা বাজে হবেন ন্যূনতম ধারনাও কেউ করেন নি।

খেলার মানের ধরন দেখে ধারনা করা হচ্ছে এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বাজে দলের তকমাটা তাদেরই প্রাপ্য। শোনা যাচ্ছে কোচিং স্টাফদের সাথে খেলোয়াড়দের গৃহ বিবাদ সৃষ্টি হয়েছে। বহিষ্কার হতে পারেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলিও। দিবালাকে না খেলানোটাকে ভালো চোখে দেখছেন না অনেকেই। বরাবরের মতোই আর্জেন্টিনার রক্ষন ভাগ। বিধ্বস্ত, ভঙ্গুর, অপরিনত একটা রক্ষন ভাগ। দুর্বল রক্ষন ভাগ যেন আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যের অংশ হতে চলেছে।

আর্জেন্টিনারাশিয়ায় একত্রিশতম জন্মদিন পালন করছেন মেসি। পত্রিকা মারফত জানা গেছে জন্মদিনে তার একটা স্পীচও। তিনি বলেছেন আর্জেন্টিনার পক্ষে কোন ধরনের ট্রফি জেতা ছাড়া অবসর নেবেন না। সাধুবাদ পাওয়ার মতো কথা। সিদ্ধান্তও। বয়স তাঁর একত্রিশ। চাইলে আরো একটা বিশ্বকাপ অনায়াশেই খেলতে পারবেন। কিন’ ফর্ম!!! বর্তমান বিশ্বকাপে মেসির যে হাল-হাকিকত তাতে ফর্মে থাকার বার্তা কতদুর যাবে তা বলা দুরহ। শুভ কামনা থাকলো লিও’র জন্য। তার মতো খেলোয়াড় বিশ্ব ফুটবলে অনেক বেশি প্রয়োজন।

গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিার একটি ম্যাচ বাকি। নাইজেরিয়ার সাথে খেলবে আগামীকাল। নাইজেরিয়া ভালো খেলছে এটা মানতেই হবে। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা আইসল্যান্ডকে ধরা হয়েছিলো এ গ্রুপের দুর্বল দল। আর্জেন্টিনা এ দলটির বিরুদ্ধে এক-এক গোলে ড্র করায় নাইজেরিয়ার সাথে আর্জেন্টিনা জিতবে এমন আশা করা কঠিন। একাধিক সমীকরনের যাঁতাকলে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয়পর্বে যাওয়া-না যাওয়া। প্রথম ফ্যাক্ট, ক্রোয়েশিয়া বনাম আইসল্যান্ড ম্যাচ।

আর্জেন্টিনা

এ ম্যাচটি ড্র হতে হবে অন্যথায় ক্রোয়েশিয়া জিততে হবে। ফ্যাক্ট দুই, নাইজেরিয়াকে আর্জেন্টিনা হারাতে হবে। ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচে আইসল্যান্ড জিতলে গোল ব্যবধান আরো একটি ফ্যাক্ট আছে। মোদ্দাকথা আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় পর্বে যাওয়াটা অন্যের উপর নির্ভর করে নিজেদের চেয়েও।

আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় পর্বে না যাওয়াটা অঘটন হবে না। কেননা তারা দল হিসেবে দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার মতো খেলা খেলেনি। আমরা সমর্থক হিসেবে অবশ্যই চাইবো আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় পর্বে যাক। এ দলটি দ্বিতীয় পর্বে না গেলে কিংবা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়লে জৌলুশ হারাবে বিশ্বকাপের আলো। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী নিষ্প্রভ হবে দর্শকরা। কারো করুনা, ভরসা কিংবা কারো পিঠে ভর করে টুর্নামেন্টে টিকে থাকা কোন বিষয় না। এটা সমালোচকদের সৃষ্টি। একটা টুর্নামেন্টে যে কোন দলই জিততে চায়। চাইবে। এটাই স্বাভাবিক। নিজ দলের জিতা-হারায় অন্য দলের কি হবে না হবে সেটা ভাবার মঞ্চ বিশ্বকাপ নয়। মোট কথা নিজ দলের ভালো খেলা সবাই খেলতে চায়।

আর্জেন্টিনাআর্জেন্টিনার জন্য ভীষন রকম শুভকামনা থাকলো। বিশ্ব মাতানো বিস্ময় ফুটবলার লিওনেল মেসি’র জন্য হলেও বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনার জেতা উচিত। কিন্তু সেটা দল হিসেবে আর্জেন্টিনা করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে বিশ্বকাপ না জিতলেও যে মেসি একেবারে রসাতলে যাবেন এমনটা ভাববার কোন অবকাশ নেই। মেসি মেসিই। একজনই। এমন খেলোয়াড একবারই জন্মায়। ক্ষনজন্মা বিস্ময়। ফ্যাক্ট গুলো সব ভালো এবং যোগ্য দলের পক্ষে যাক এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি। আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া, আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচে যোগ্য দল গুলো জিতুক সে প্রত্যাশা করি। ভালো খেলার জয় হোক। আর সে ভালো খেলাটা আপাতত আর্জেন্টিনা এবং ক্রোয়েশিয়া খেলুক এটা একজন আর্জেন্টিনা সমর্থক চাইতেই পারেন।

 

  • ২৫.০৬.১৮
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here