বিলকুড়ালিয়ায় ভূমিহীনদের ধান কাটার মহোৎসবকলিট তালুকদার পাবনা প্রতিনিধি  :: ‘মাঠ ভরা সোনালী ধান দোল খাচ্ছে বাতাসে। সেই ধানের দোলা লেগেছে ভূমিহীনদের প্রাণে। আর তাতে আনন্দের সীমা নেই তাদের। মহা আনন্দে চলছে ধান কাটা। এরপর বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করা থেকে শুরু করে গোলায় তোলা পর্যন্ত মহাব্যস্ত সময় পার করবে ভূমিহীন নারী-পুরুষ। তাদের চোখে মুখে বইছে খুশির ঝিলিক।’

এমন চিত্র পাবনার চাটমোহর উপজেলার বহুল আলোচিত ভূমিহীনদের রক্তে ভেজা বিলকুড়ালিয়া মাঠের। কারণ দীর্ঘ ২২ বছরের আন্দোল-সংগ্রামের সফল হয়ে সরকারের কাছ থেকে বিলকুড়ালিয়ার ২৮৫ একর খাসজমি স্থায়ী বন্দোবস্ত পেয়েছেন ভূমিহীনরা। নিজের নামে বন্দোবস্ত পাওয়া সেই জমিতে এবার প্রথম ধান উৎপাদন করতে পেরে তাদের আনন্দের সীমা নেই।

 

আর তাই বিলকুড়ালিয়া বিলে ভূমিহীনদের ধান কাটা পরিণত হয়েছে মহা উৎসবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিলকুড়ালিয়া মৌজার ৩৭১ একর খাসজমিতে ৩২টি শ্যালো মেশিন, ২টি ডিপ ও ১টি মিনি ডিপ টিউবয়েলে সেচ ব্যবস্থাপনায় প্রায় ১ হাজার ৬শ’টি ভূমিহীন পরিবারের চাষাবাদকৃত জমিতে এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে।

এ উপলক্ষ্যে সোমবার সকাল দশটায় বিলকুড়ালিয়া মাঠে আয়োজন করা হয় ধান কাটা মহোৎসব অনুষ্ঠানের। প্রধান অতিথি হিসেবে ভূমিহীনদের সাথে ধান কেটে ধানকাটার এই মহোৎসব উদ্বোধন করেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান। ভূমিহীন উন্নয়ন সংস্থা (এলডিও)’র নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা কে এম আতাউর রহমান রানা মাষ্টারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, থানার ওসি (তদন্ত) জি এম মিজানুর রহমান, চাটমোহর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক আমাদের বড়াল সম্পাদক হেলালুর রহমান জুয়েল, সমকাল প্রতিনিধি শামীম হাসান মিলন, ভূমিহীনদের সংগঠক ইসরাইল আলম, ভূমিহীন নেতা আনোয়ার হোসেন, হাসান আলী, ভূমিহীন নেত্রী ছানোয়ারা খাতুন, চাম্পা খাতুন, প্রমুখ।

আলাপকালে ভূমিহীন নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিলকুড়ালিয়ার খাসজমি হতে ভূমিহীন পরিবারগুলো প্রায় ৩০ হাজার মন ধান ঘরে তুলবে। ভূমিহীন নেত্রী ছানোয়ারা খাতুন বলেন, বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ৩০ শতক জমির ধানে আমার পরিবার সারা বছরের খাবারের সংস্থান হবে। ভূমিহীন নেত্রী ও এলডিও’র সহ-সভানেত্রী চাম্পা বেগম বলেন, এ বছরেও আমরা শান্তিপূর্নভাবে নিজ নিজ বন্দোবস্ত প্রাপ্ত জমিতে ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারছি। হাত কাটা হানিফ বলেন, এই বিলের খাসজমির জন্য আমার হাতের কবজি কাটা গেছে। আজ ২২ বছর পর খাসজমি স্থায়ী বন্দোবস্ত পেয়ে সে দু:খ আমি ভুলে গেছি। খাসজমি স্থায়ী বন্দোবস্ত পেয়ে বর্তমান সরকার, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা উপজেলা প্রশাসন সহ গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান ভূমিহীনরা।

এলডিও’র নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধ আতাউর রহমান রানা মাষ্টার বলেন, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন ও এএলআরডি’র সহযোগিতায় কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ও আইনী সহায়তা প্রাপ্ত ভূমিহীনদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। বাকী ভূমিহীন পরিবারের দরখাস্তগুলো দ্রুত চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, ভূমিহীনদের আন্দোলন ছিল ইতিবাচক। সরকারের নির্দেশনায় আমরা ইতিমধ্যে ৫ শতাধিক ভূমিহীনকে খাসজমি স্থায়ী বরাদ্দ দিয়েছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে বাকি ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত: ১৯৯২ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের নেতৃত্বে বিলে লাল পতাকা উড়িয়ে খাসজমি নিজেদের দখলে নেয় ভূমিহীনরা। এরপর ভূমিগ্রাসীদের বহু হামলা, মামলা মোকাবেলা করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে তারা।

সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বিলকুড়ালিয়া মৌজার প্রায় ২৮৫ একর খাস জমির ১ হাজার ৩১৩টি ভূমিহীন পরিবারের নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য চাটমোহর উপজেলা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত কমিটি নথিগুলো চুড়ান্ত অনুমোদনের সুপারিশ করে পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরন করেন।

ইতিমধ্যে পাবনা জেলা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়ে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরে চুড়ান্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত ৫৪৭টি পরিবারের কবুলতি দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টেশন সম্পন্ন হয়েছে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here