ওবায়দুল কাদেরস্টাফ রিপোর্টার :: দশম সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তির দিন শুক্রবার ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে রাজপথসহ সারাদেশের মাঠ ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের এই দিনটিতে দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।
বিকাল ৩টায় একযোগে সারাদেশে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য এ শোভাযাত্রায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য মানুষের ঢল নামে। শোভাযাত্রায় সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গিবাদ ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
এ ছাড়া রাজধানীর অলিগলিসহ দুই শতাধিক স্থানে দিনভর সতর্ক অবস্থানে থেকে বিজয়োত্সব পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য মানুষ।
প্রসঙ্গত, চার বছর আগেরে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ও সহিংসতাময় দিনটিতে ভোটের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তারা দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে। ক্ষমতাসীন দল মনে করে, সেদিন ভোট না হলে দেশে আবার অসাংবিধানিক সরকার চেপে বসত।
রাজধানীর বনানী পূজা মাঠে এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এতিমের টাকা মেরে খাওয়া দুর্নীতিবাজ, জঙ্গির পৃষ্ঠপোষক ও পেট্রোল বোমা নেত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, অতীত কৃতকর্মের কারণে বিএনপি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেশের জনগণ বিএনপিকে আর কখনো ক্ষমতায় আসতে দেবে না। দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে আবারো ভোট দিয়ে ক্ষমতা আনবে দেশবাসী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশে শুধু গণতন্ত্রই রক্ষা পায়নি, সাংবিধানিক শাসনও সুরক্ষিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শত ষড়যন্ত্র, আগুনসন্ত্রাস ও নাশকতা মোকাবিলা করেই রাষ্ট্রকে সুরক্ষিত করেছিলেন। সিনিয়র নেতারা আরো বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মামলায় শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ষড়যন্ত্র করছেন। জনগণের প্রতি তার কোনো আস্থা নেই, ষড়যন্ত্রে তার আস্থা আছে।
বনানী পূজা মাঠে শোভাযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন ৫ জানুয়ারি বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করলেও এটি মূলত দলটির জন্য ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা দিবস’। বিএনপি আবার ভোট বর্জন করলে তাদেরকে দিবসটি আবার পালন করতে হবে। একদিকে জনগণের গণতন্ত্রের বিজয় দিবস, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির আত্মহত্যা দিবস। বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করলে ২০১৪ সালের মতো আবার তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সময়, স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।  নির্বাচন বিএনপি বা কারো জন্য বসে থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনাদের (বিএনপি) ঠেকানোর সাধ্য থাকলে দেখান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণ আপনাদের প্রতিহত করবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে আরেকবার ক্ষমতায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় নৌকা আবার বিজয়ী হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একে এম রহমতুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন, ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাবিবুর রহমান সিরাজ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।
এদিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনী ট্রেন বিএনপির স্টেশনে থামবে না। সময় ও স্রোতের মতো আগামী (একাদশ) সংসদ নির্বাচনও কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ অন্ধকার হয়ে যাবে। বিরল প্রাণীর মতো বিলুপ্ত হয়ে যাবে বিএনপি। পৃথিবীতে অনেক রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাদের অবস্থা মুসলিম লীগের চেয়েও খারাপ হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করা হলে জনগণই তা প্রতিহত করবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন ও খালেদা জিয়া সরকার ও সংসদকে অবৈধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিন্তু বিশ্বের দুটি বড় আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) বাংলাদেশের পার্লামেন্টকে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ দুটি সংস্থার প্রধানও করা হয়েছে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ও বাংলাদেশের সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে। তাহলে কীভাবে গণতন্ত্রের সংকট আছে? আপনারা নির্বাচনে অংশ নেননি। গণতন্ত্র যদি না থাকতো তাহলে কী তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতো?’

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here