সাইদুর রহমান :: তৃতীয় নেপোলিয়ন মেরী ইউজেনি ইবনেস দেমস্তিনো নামে এক মহিলাকে ভালোবেসে ফেলেন৷ মহিলার রুপের কোন অভাব ছিল না। সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নেপোলিয়ন তাকে বিয়ে করেন। তখনকার দিনের সমাজ ছিল রক্ষণশীল।
তা সত্ত্বেও নেপোলিয়ন সিংহাসনে বসে ঘোষণা করেন ”যে মেয়েকে ভা্বেলোসেছি তাকেই বেছে নিয়েছি৷ অপরিচিত মেয়ের চাইতে পরিচিত মেয়েই আমার পছন্দ৷ তাছাড়া সে সুন্দরী, তার রুপ, যৌবন সবই রয়েছে; তার আচার আচরণ সবই স্বর্গীয় বলে মনে হয়৷”
নেপোলিয়ন এবং তার স্ত্রীর কোন জিনিসের অভাব ছিল না৷ তাদের ধন-সম্পদ ছিল, খ্যাতি ছিল, প্রচুর ক্ষমতা ছিল, প্রেম-ভালবাসা সবই ছিল কিন্তু তাদের বিয়েটা সুখের হলো না। নেপোলিয়ন ইউজেনির মত একজন সামান্য কাউন্টের মেয়েকে রাণীর মর্যাদা দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাতে ইউজেনির ঘ্যান ঘ্যান স্বভাবটার এতটুকু পরিবর্তন হয়নি।
ইউজেনি মহিলাটি ইর্ষায় পুড়তেন, সন্দেহে জ্বলতেন৷ নেপোলিয়নকে তিনি চোখের আড়াল করতে চাইতেন না৷ কোন সুন্দরী মেয়ের সাথে নেপোলিয়নের কথা হয়, পরিচয় আছে এমন প্রমাণ পেলেই সন্দেহ করতেন, বকাঝকা করতেন, অপমান করতেন। নেপোলিয়ন যে একটু একা থাকবেন বা শান্তিতে কাজ করবেন তার কোন উপায় ছিল না৷ নেপোলিয়নের সব আদেশ-নিষেধ অমান্য করতেন ইউজেনি৷
নেপোলিয়ন জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন এমন সময় ইউজেনি সেখানে উপস্থিত হয়ে আলোচনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতেন৷ আসল কথা হল-স্বামীকে সন্দেহ করতেন ইউজেনি। তিনি ভাবতেন, তার স্বামী বোধহয় সারাক্ষণ সুন্দরী কোন মেয়ের সাথে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন বা বিছানায় ভোগ-বিলাস করছেন৷ ঘরে ফিরলেই হিসেব চাওয়া হতো কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছে, এত দেরী হলো কেন, কার কার সাথে কথা হয়েছে ইত্যাদি হাজারো প্রশ্ন৷
স্বামীকে শান্তিতে থাকতে দেননি ইউজেনি৷ ঝগড়াঝাটি করা তার স্বভাব ছিল। তিনি তার বোনের কাছে গিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে যা নয় তাই অভিযোগ করতেন৷ স্ত্রী এই বিদঘুটে আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন নেপোলিয়ন৷ যে স্ত্রীর প্রতি তিনি শতভাগ বিশ্বস্ত ছিলেন তার প্রতিই তিনি বিরাগভাজন হয়ে উঠেন৷
আর শেষ পর্যন্ত যে পথে তিনি কখনো যাননি, ইউজ্যানি তাকে সেই পথের দিকেই ঠেলে দিলেন৷ শেষ পর্যন্ত সাংসারিক অশান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে নেপোলিয়ন সত্যি সত্যি ইউজেনিকে গোপন করে অন্য এক সুন্দরী মেয়ের কাছে যাওয়া আসা শুরু করলেন৷ গভীর রাতে একটু শান্তির খোঁজে মেয়েটির কাছে ছুটে যেতেন তিনি। ক্যাপ নামিয়ে চোখ ঢেকে চলতেন যাতে কেউ চিনতে না পারে৷ সাথে থাকত তার একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী। কোন কোন সময় মনের দুঃখে কারো কাছে না গিয়ে একা একা রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন অথচ তিনি ছিলেন সম্রাট৷ একজন সম্রাট তার স্ত্রীর জ্ব্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন—এই ঘটনা যেন রুপকথাকেও হার মানায়, তবে এটাই ছিল রুঢ় বাস্তবতা।
নেপোলিয়ন সুখী হননি৷ কিন্তু ইউজেনি কি সুখী হতে পেরেছিলেন? না, পারেননি৷ তিনি সুখী হতে পারেননি সম্পুর্ণ নিজের দোষে। ইর্ষাপরায়ণ ছিলেন তিনি৷ কারো রুপ, গুণ সহ্য করতে পারতেন না তিনি৷ সারাক্ষণ শুধু ঘ্যান ঘ্যান করতেন৷ এই ঘ্যান ঘ্যান করা জিনিসটা যে দাম্পত্য জীবনের জন্য কত ভয়ংকর তা তিনি হয়ত জানতেন না। প্রেম, ভালোবাসা ও শান্তি বিনষ্ঠ করার জন্য শয়তান যতগুলো পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে তার মধ্যে ঘ্যান ঘ্যান করা অন্যতম নিকৃষ্ট একটা উপায়৷ যেখানে এই জিনিস আছে সেখানে প্রেম-ভা্বালোস টিকতে পারে না৷ বিষাক্ত সাপের ছোবলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে এই ঘ্যান ঘ্যান করা স্বভাবটাকে৷ এই স্বভাব শুধুমাত্র দুটো জিনিসই ডেকে আনতে পারে-অশান্তি, ধ্বংস।
—[ ডেল কার্ণেগী ]
চলবে………
লেখকঃ কলামিষ্ট