মাহিদুল ইসলাম রিপন দিনাজপুর প্রতিনিধি : বর্তমান সরকার যখন বাল্যবিয়ের হাত থেকে শিশুদের বাঁচাতে আইন প্রণয়ন করেছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে গ্রহণ করেছে নানা পদক্ষেপ এবং দেশর ইউনিয়নগুলোকে একের পর এক ঘোষণা করা হচ্ছে বাল্যবিয়ে মুক্ত। ঠিক তখনও সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে বয়স প্রমাণের ভুয়া প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে বাল্যবিয়ের উৎসাহ যোগাচ্ছে কতিপয় অর্থলোভী স্কুল শিক্ষক। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় এমনই একটি অভিযোগ ও কাগজপত্রে পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, উপজেলার আরাজী জুগিরঘোপা গ্রামের মহেশ শর্মার মেয়ে রিতী শর্মার গোপনে বাল্যবিয়ের দিন ঠিক হয়। ঘটনা জানাজানি হলে বিয়ে বন্ধে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগী সংস্থা সমাজ উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ল্যম্ব ও নিজেরা করি’র প্রতিনিধিগণ রিতী শর্মার বাড়িতে গিয়ে বাল্য বিয়ের আইন ও কুফল সম্পর্কে বর্ণনা করে।

এছাড়াও তারা রিতী শর্মার বিয়ে বন্ধে সহযোগিতা চেয়ে বাল্যবিয়ে মুক্ত ইউনিয়ন আঙ্গারপাড়ার চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব ও ইউআইএসসি’র উদ্যোক্তাকে অবগত করেন।

এতে কিছু দিন বিয়ে বন্ধ থাকলে রিতী শর্মার পরিবরের লোকজন আবারও গোপনে বিয়ে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। তারা রিতী শর্মার বয়স ১৪ থেকে ১৮ করতে উত্তর নলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র সরকারের সাথে যোগাযোগ করলে ওই শিক্ষক ‘ইতি রানী শর্মা’কে ‘রিতী শর্মা’ বানিয়ে ১৮ বছর বয়স প্রমাণে বিদ্যালয়ের অফিস প্যাডে একটি প্রত্যয়ন পত্র দেন। বিদ্যালয়টির কোড-৭৯১৯ এবং ইআইআইএন নম্বর-১২০৬৩৮।

প্রত্যয়ন পত্রে রিতী ২০০৯ ইং সালে ওই বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল এবং ২০০৯ ইং সালের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হয়। সে বিদ্যালয়ের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করেছে। আমি যতদূর জানি তার চরিত্র ভাল। ভর্তি বহির বর্ণনানুযায়ী তার জন্ম তারিখ ০১/০৩/১৯৯৬ ইং বলে উল্লেখ করে সীল স্বাক্ষর দেন প্রধান শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র সরকার।

অপরদিকে, হাসিমপুর আওকরা মসজিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুল হকের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, রিতী শর্মা তার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী এবং তার শ্রেণী রোল ১৪। সে গত ২০১২ সালে ইতি রানী শর্মা নামে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এখনও অধ্যয়ন করছে বলে জানান। তার পঞ্চম শ্রেণীর সার্টিফিকেটে জন্ম তারিখ রয়েছে ৩০/১২/২০০১।

এ ঘটনায়, ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা আহমেদ শাহ্‌’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যেহেতু আঙ্গারপাড়াকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, সেহেতু বয়স বাড়িয়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আর ভুয়া প্রত্যয়ন প্রদানকারী ব্যক্তিদের ব্যাপারে দৃষ্টান্ত রাখতে চাই।

পরে ইউপি সচিব জুলফিকার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সরকারি কর্মচারী কাজে, জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে আমি সরকারি আইন মানতে বাধ্য।

এ ব্যাপারে প্রত্যয়ন প্রদানকারী প্র্রধান শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র সরকারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি এ বিষয় কথা বলতে নারাজ বলে সাফ জানিয়ে দেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here