বান্দরবানে ২শতাধিক অবৈধ কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টারেএনামুল হক কাশেমী, বান্দরবান প্রতিনিধি :: মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং সরকারের প্রশাসন কর্মকর্র্তাদের নাকেরডগায় অর্থলোভী শিক্ষকরা বান্দরবানে ২শতাধিক অবৈধ কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার খুলে বসেছে।

এসব সেন্টারে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করেই মাসে মাসে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিলেও শিক্ষার্থীরা বরাবরের মত বোর্ড পরীক্ষায় ফলাফল করছে ন্মিমুখি। বহুক্ষেত্রেই অকৃতকার্য হচ্ছে বলেও গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মহল থেকে। এসব কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট সেন্টারের শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত কোচিং পাড়ানো্‌র তিন মাস সময়সীমা ও নীতিমালাসহ আইনের কোন তোয়াক্কাই করছে না।

জেলা শহরের একদল সাংবাদিক গত শনিবার বালাঘাটাসহ কয়েটি এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনকালে এসব অভিযোগ পেয়েছেন। জেলা শহর এবং শহরের আশেপাশের এলাকাসমুহে সারাবছর ধরেই চলমান কোচিং ও প্রাইভেট পাড়ানোর সেন্টার সমুহের পরিবেশ খুবই নোংড়া, ছোটপরিসরের অপর্যাপ্ত আলো-বাতাসের কক্ষগুলোতে গাদাগাদি করে বসেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়।

অভিভাবকদের আর্থিক ক্ষমতা না থাকা সত্বেও বহু স্কুলের অর্থলোভী শিক্ষকরা অমুখ বিষয়ে ফেল করে দেয়ার হুমকি-ধামকি দিয়ে কোচিং ও প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

গত শনিবার বিকেলে জেলা শহরের একদল সাংবাদিক বালাঘাটাএলাকায় ৫টি, মেম্বারপাড়া ও আর্মিপাড়ায় ৪টি, ডিসি অফিসের সামনে বহুতলা ভবনে ১টি, ডিসি বাংলো এবং এলজিইডি অফিসের সামনে ৩টি কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার পরিদর্শন করে জানতে পান- সেইসব কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টারের বেশিরভাগ কক্ষই মাত্র ৮ বাই ১০ফুটের মধ্যে,আবার বেশকটি কক্ষ নির্মাণাধীন ভবনের জীর্ণ-শীর্ণ কক্ষের ভেতরে অস্বাস্থ্যকর ও নোংড়া পরিবেশে।

অর্থলোভী দানব শিক্ষকদের দাপট এতই বেড়েছে যে, বাধ্য হয়েই সহজ-সরলমনা শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা (প্রাথমিক স্তর থেকে কলেজ পড়-য়া) তাদের স্কুল-কলেজের ক্লাসের চেয়ে কোচিং ও পাইভেট সেন্টারের ক্লাসসমুহের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এর কারণ হিসবে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, মেথ, বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের স্যারেরা ক্লাসরুমে বলে থাকেন- পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে কোচিং বা প্রাইভেট পড়াটা বাধ্যতামুলক,যেসব শিক্ষার্থী কোচিং বা প্রাইভেট পড়বে না তাদেরকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হবে।

বেশকজন শিক্ষার্থীর অভিভাকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ছাড়া নিম্ন আয়ের অভিভাকদের পক্ষে কোন মতেই অতিরিক্ত টাকা ১ হজার থেকে ৩হাজার টাকা (বিষয়ভিত্তিক) দিয়ে তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে কোচিং বা পাইভেটে পাড়ানো সম্ভব নয়। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়- এ অবস্থা অচিরেই বন্ধ করা না হলে শহরসহ আশেপাশের শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক মহল অর্থলোভী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে অচিরেই মানববন্ধনসহ কঠোর আন্দোলন করা হবে। এমনকি আদালতে এ বিষয়ে মামলাও টুকে দেয়া হতে পারে।

অভিভাবকরা গুরুতর অভিযোগ তুুলেছেন- বাধ্যতামুলকভাবে জেলা শহর এবং শহরের অদুরে মেঘলা ভোকেশনার স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা, বালাঘাটাসহ বিভিন্ন স্থানে গো তোলা কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টারে পড়ানোর পরও সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বান্দরবান সরাকরি মহিলা কলেজের ছাত্রীরা অপেক্ষাকৃত ফল খারাপ করেছে। ফলাফল বিপর্যয় প্রসংগে কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, বিভাগভিত্তিক প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় ছাত্রীরা গুরুত্বপুর্ণ বিষয়মুহের ক্লাস পায়নি। সেকারণেই প্রধানত এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল ন্মিমুখি হয়েছে।

জেলা শহর এবং আশেপাশের এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, অভিভাবক মহল থেকে লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ওইসব কোচিং বা প্রাইভেট সেন্টারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here