বান্দরবানে পবিত্র ইদ-উল-আজহার ৫দিন পরও শত শত পর্যটকের ঢল অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই শত শত পর্যটকের আগমন ঘটায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আবাসন সমস্যা ও খাবার সংকটের কারণে জেলা শহরে এসেই পুনরায় ফিরে যাচ্ছেন প্রতিদিনই শত শত পর্যটক।

জানা গেছে, সারাদেশ থেকে নানাবয়সী পর্যটকদের সমাগমনে জেলা শহর ছাড়াও পর্যটন স্পটগুলো লোকে-লোকারণ্যে ভরে গেছে। কার্যত ইদের ২দিন আগে থেকেই পর্যটকদের আসা শুরু হয় এ জেলা শহরে। হোটেল-মোটেল এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্রাগামারগুলো বুকিং রয়েছে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। জেলা শহর ছাড়াও রুমা,লামা,রোয়াংছড়ি,আলীকদম এবং থানছি উপজেলায় পর্যটকদের আগমনে সরব হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জেলার জনপদ। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জননিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ টহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

পার্বত্য জেলা শহর এবং শহরের অদুরেই রয়েছে দেশের অন্যতম সুউচ্চ পর্বতমালার চ’ড়ায় নীলাচল এবং বুদ্ধধাতু মন্দির (সোনালী রংয়ের কেয়াং)পর্যটন স্পট। জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে দৃশ্যনীয় ২টি ঝুলন্ত সেতু। এ বিশাল লেকে পর্যটকদের জন্যে সাম্প্রতিক সময়ে লেকে ভাসানো হয়েছে বিশেষ টাইপের ভ্রমণবোট। দেশের অন্যতম ক্যাবলকারও চালু হয়েছে সম্প্রতি।  প্রায় ২ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চ’ড়ায় রয়েছে নীলাচল নামক একটি পর্যটন কেন্দ্র। এ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে ৮টি গোলঘর বা বিশ্রামাগার।

জেলা শহরে প্রবেশপথ হলুদিয়া এলাকায় একটি লেক রয়েছে, এ লেকের নাম প্রান্তিকলেক। জেলার রুমা উপজেলার দুর্গম এলাকায় বগালেক, ক্যক্রাডং,তাজিংডং এবং চি¤^ুক পাহাড় পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে বুদ্ধধর্মাবলম্বী উপজাতীয়দের কেন্দ্রীয় কেয়াং ও উজানিপাড়া বড়কেয়াং এবং বোমাং সার্কেলের বর্তমান রাজবাড়ি ও ২টি পুরাতন রাজবাড়িও পর্যটকদের জন্যে আকর্ষণীয় স্পট। শহরের সাংগু সেতুর ওপারে সেনানিবাসের প্রবেশপথে দৃষ্টিনন্দন একটি শাপলা রয়েছে। জেলার আলীকদম উপজেলা সদরে আস্ত পাহাড়ের ভেতর ১২/১৩টি প্রাকৃতিক চ’ড়ংগ রয়েছে। এটিকে আলী-চ’ড়ংগ বলা হয়। লামা উপজেলা যাবার পথিমধ্যে রয়েছে টাইটানিক টাইপের একটি পর্যটন কেন্দ্র এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে রয়েছে একটি লেকবেষ্টিত পর্যটন স্পট। রুমা উপজেলায় রিজুকঝর্ণা এবং রোয়াংছড়ি উপজেলা সদরে সোনালী রংয়ের একটি প্যাগোডা রয়েছে।

জেলা শহরের নানাস্থানে পবিত্র ইদ উল আজহার ২দিন আগে থেকেই এখনও পর্যন্ত প্রতিদিন্ গড়ে ১০ হাজার পর্যটক যাওয়া-আসা করছেন। জেলা শহর পরিণত হয়েছে গাড়ি এবং জনমানুষের বিশাল বিচরণ এলাকায়। আবাসন ও খাবার হোটেলে সময়মত খাবার না পাওয়ায় পর্যটকদের দুর্গতি বিরাজ করছে। অর্ধশত আবাসিক হোটেল থাকলেও সেগুলোতে ঠাঁই নেই, কোন সিট এবং হেটেলের বারাদ্দাসহ নানাস্থানে সরকারি ও বেসরকারি অফিসের বরাদ্দায় কিংবা গাড়িতেই রাতযাপন করছেন বহু পর্যটক। জেলা শহরে প্রাইভেট মাইক্রো-জিপগুলোর মালিক-কর্মচারীরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তিনগুন ভাড়া জোর পুর্বক আদায় করছেন বহু পর্যটরে কাছ থেকে । দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলা শহরে ভ্রমনে আসা কয়েকজন পর্যটক দ্বিগুন ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে সরকারি বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সহনীয় পর্যায়ে গাড়ি ভাড়া আদায় করার জন্যে গাড়ি সমিতিন নেতাদের ডেকে নির্দেশ প্রদান করেন। খাবার হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত বিল আদায় এবং দোকানে মুরগী প্রতিকেজি ৩০০ টাকারও বেশি আদায় করার ঘটনায় হতাশা বিরাজ করছে। পর্যটকরাও এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন পর্যটকদের কাছ থেকে ভ্রমণের জন্য ভাড়া করা গাড়ির ও খাবারের জন্য ন্যায্য মুল্য আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/এনামুল হক কাশেমী/বান্দরবান

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here