ঢাকা: অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে সদর্থক ভূমিকা নিতে আমেরিকার ওপর চাপ তৈরি করল ভারত।  সূত্রের খবর, বাংলাদেশ নিয়ে হোয়াইট হাউসের অবস্থানে হতাশ সাউথ ব্লক। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে, কোনো আড়াল না রেখেই সেই হতাশার কথা আমেরিকাকে জানানো হয়েছে।

শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের  আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর দিয়েছে।

আনন্দবাজার জানায়, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংহ তার সদ্যসমাপ্ত মার্কিন সফরে সে দেশের পররাষ্ট্রসচিব ওয়েন্ডি শেরম্যানের সঙ্গে ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সাউথ ব্লক মার্কিন নেতৃত্বকে স্পষ্ট জানিয়েছে, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার প্রশ্নে পশ্চিম বিশ্বের উচিত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক এবং হিংসামুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা।

আনন্দবাজার লিখেছে, কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো সক্রিয় সহযোগিতার পদক্ষেপ আমেরিকা করেনি বলেই মনে করছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। সরকারি সূত্রের দাবি, আমেরিকা মনে করে জামায়াতে ইসলামী জঙ্গিবাদের সমর্থক নয়। তাই রাজনৈতিক পরিসরে তাদের জায়গা দিলে, মৌলবাদী তালিবানপন্থীদের সঙ্গে লড়াইয়ের লাভই হবে। হোয়াইট হাউস থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফোনও গিয়েছে। তাকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে, বিএনপি-র কথা মেনে পদত্যাগ করে, সরকার ভেঙে দিয়ে ভোটে যাওয়ার জন্য।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে বিতর্কের সময় থেকেই আমেরিকার বিরাগভাজন হাসিনার আওয়ামী লীগ। এ কথাও আমেরিকা মনে করে, বিএনপি তাদের নীতির প্রতি অনেকটাই বিশ্বস্ত। তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের বাজারে ঢোকা মার্কিনিদের পক্ষে সহজ হবে। রণকৌশলগত প্রশ্নেও বিএনপি-জোট এই মুহূর্তে আমেরিকার পক্ষে কাম্য।

আনন্দবাজারের ভাষায়, কিন্তু জামায়াতের হিংসাত্মক কাজের জন্য দেশের পরিস্থিতি যে ক্রমশই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, সে কথাই আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে নয়া দিল্লি। শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব মার্কিন নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিকে দেখা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে উত্তাল বাংলাদেশ। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কায় ভারতও। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কথায়, “আমরা এ কথা বিশ্বাস করি যে একটি গণতান্ত্রিক দেশের মানুষ হিসেবে বাংলাদেশী রাজনীতিকরা তাদের মতপার্থক্য কথার মাধ্যমেই মেটাবেন।

আনন্দবাজার লিখেছে, মুখে এ কথা বললেও বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা নয়া দিল্লির রয়েছেই। তা ছাড়া যে সুবিপুল পুঁজি ইসলামিক ব্যাংকের মাধ্যমে জামায়াত-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনের হাতে গিয়েছে, তার কুপ্রভাব সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনও এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে। তবে পাঁচ হাজার বাড়তি বিএসএফ জওয়ান মোতায়েন হয়েছে। সীমান্তের যেখানে কাঁটাতার নেই সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তবর্তী রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি জানিয়েছেন। ব্যবস্থা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার নির্দেশে রাজ্য পুলিশের ডিজি সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here