বন্যাস্টাফ রিপোর্টার :: চলমান বন্যায় দুই সপ্তাহে দেশের ৩২ জেলার প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এতদিন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ ভিন্ন ভিন্ন তথ্য সরবরাহ করলেও এবারই প্রথম দুই দপ্তর বন্যার ক্ষতি নিয়ে একই রকম তথ্য দিল।

বুধবার মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের (এনডিআরসিসি) উপ-সচিব জিএম আবদুল কাদের জানান, বন্যায় ৩২ জেলায় এ পর্যন্ত ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৩২ জনের।

অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা এবং শেরপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এই দফায় বন্যার কবলে পড়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি: দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩২টি জেলায় ২০১টি উপজেলা এবং ৫১টি পৌরসভা বন্যাকবলিত হয়েছে। দুই লাখ ৯৬ হাজার ২৭৯ জন এই বন্যায় সর্বস্ব হারিয়েছেন। আরও ৭১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৮ জন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় ৭৫ হাজার ৩৩১টি ঘর সম্পূর্ণ এবং পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৮২৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কুড়িগ্রামে ২৩ জন, লালমনিরহাটে ছয়, সুনামগঞ্জে দুই, নেত্রকোনায় চার, নীলফামারীতে ছয়, গাইবান্ধায় ১৩, সিরাজগঞ্জে ছয়, দিনাজপুরে ৩০, জামালপুরে ১৪, ঠাকুরগাঁওয়ে এক, নওগাঁয় পাঁচ, বগুড়ায় চার, যশোরে তিন, টাঙ্গাইলে দুই, শেরপুরে তিন, মৌলভীবাজারে দুই, কুমিল্লায় দুই, রংপুরে তিন, মানিকগঞ্জে এক এবং জয়পুরহাটে দুইজনসহ মোট ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে দুই সপ্তাহে।

বানের পানিতে ১০ হাজার ৫৮৩ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ছয় লাখ ৫৮৭ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত জেলাগুলোতে অন্তত ৬২ হাজার ২০৮টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৩২ জেলার বন্যাদুর্গতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২০ হাজার ৭১৮ মেট্রিক টন চাল এবং ৫৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

এর আগে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের তথ্যের মধ্যে গরমিলের কারণে সমন্বয়হীনতা দেখা দিলে মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি ও অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে এক রকম তথ্য সরবরাহের নির্দেশনা আসে। অধিদপ্তরের পরিচালক যুগ্ম-সচিব মো. আবু তালেব বুধবার বলেন, ‘তথ্য সরবরাহের সঠিকতা নিয়ে মন্ত্রণালয় খুব অসন্তুষ্ট। কয়েকদিন ধরে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের তথ্যের ভিন্নতা ছিল। এ জন্য সবকিছু যাচাই করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর মঙ্গলবার থেকে একই তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।’

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জিএম আবদুল কাদের বলেন, জেলা প্রশাসক ও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও অধিদপ্তর সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দেয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়।

‘মঙ্গলবার সচিবের নির্দেশনা এসেছে, কোনোভাবেই জেলা প্রশাসক ও ত্রাণ কর্মকর্তার বাইরে অন্য সূত্রের তথ্য নেয়া যাবে না। কিছুদিন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের তথ্যের ভিন্নতা থাকলেও গতকাল থেকে একই রকম তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।’

ইতোমধ্যে উত্তরের দুর্গত এলাকাগুলোর বানের পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আর খুব বেশি বাড়বে না বলেই মনে করছেন উপসচিব।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে।

পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করায় দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ এবং শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি শুরু হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here