বন্যার্ত এলাকা গুলোতে নির্বাচনী মহড়াআসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: বন্যা পরবর্তী ত্রাণ বিতরণে লালমনিরহাটে তৎপর হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দল গুলো। তারা বন্যার্ত লোকজনের খোজঁ খবর নেয়ার আদলে নির্বাচনী মহড়া দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ‘পাশে ছিলাম, পাশে আছি, পাশে থাকবো’ এ বক্তব্য এখন বন্যার্ত এলাকার সংসদ সদস্য প্রার্থীদের মুখে মুখে।

ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি কখনো বুকে জড়িয়ে ধরে, কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে নানা কৌশলে বন্যার্তদের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক দলের নেতারা। সরাসরি ভোট না চাইলেও তাদের আচারনেই মিলে ভোট চাওয়া চেষ্টা। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুলোও ত্রাণ বিতরণে তৎপর হয়ে উঠেছে।

এবার তিস্তা, সানিয়াজান ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। ওই বন্যায় সরকারী হিসাবে ১ লক্ষ ২ হাজার ৭ শত ৫০ টি পরিবার ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ৮ হাজার ৭ শত ৯২ হেক্টর আমন ক্ষেত। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে বন্যার্ত এলাকা গুলোতে দেখা দেয় চরম দুভোর্গ। শুরু হয় ত্রান বিতরণ। সরকারের পাশাপাশি ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের পাশে ছুটে আসে বিভিন্ন সংগঠন।

শুরু হয় রাজনৈতিক দল গুলো ছুটাছুটি । ত্রাণ বিতরণের অযুহাতে দল গুলোর নেতা-কর্মীরা গণ সংযোগে ব্যস্ত সময় পার করেন। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতি নিয়ত বন্যার্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে নিজের অবস্থান প্রকাশ করছেন।

বন্যার দিন থেকেই লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ত্রাণ বিতরণে তৎপর হয়ে উঠেন ওই আসনের বিএনপি’র প্রার্থী সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাব্বি দুলু, কখনো গাড়ীতে চরে, কখনো পায়ে হেটে কোমর পানি পার হয়ে দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে ত্রাণ বিতরণে ছুটে চলে তিস্তা ও ধরলার চরাঞ্চলে। এছাড়া বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটি লালমনিরহাটে এসে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। বিএনপি’র ওই ত্রাণ কমিটি সাংবাদিক সম্মেলন করে লালমনিরহাট জেলাকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষনারও দাবী করেন।

এছাড়া নেতা-কর্মীদের নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে গণ সংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন লালমনিরহাট-১ আসনের বিএনপি’র এমপি প্রার্থী ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আকন্দ।

বন্যার পরের দিনে নির্বাচনী এলাকায় ছুটে আসেন লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন। বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারী কর্মকর্তা ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ছুটে চলেন। সরকারী সকল কর্মসুচী বাতিল করে টানা ৭ দিন হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি এলাকা ঘুরে দেখেন। বন্যার্ত মানুষদের পুর্ণ বাসনের আশ্বাসও দেন তিনি।

ইতোমধ্যে তার অনুরোধে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ১ দিনের বেতন থেকে ১০ লক্ষ টাকা লালমনিরহাটের বন্যার্ত মানুষদের মাঝে বিতরণ করেছেন। জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক এ্যাড. মতিয়ার রহমান প্রতি নিয়ত বন্যার্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করে নিজের প্রার্থী হওয়ার আগাম বার্তা দিচ্ছেন।

বসে নেই জাতীয় পাটির নেতা-কর্মীরা। লালমনিরহাট-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা রোকন উদ্দিন বাবুল বন্যার সময় ভারতে থাকলেও সফর সংক্ষিপ্ত করে চলে আসনে তার নির্বাচনী এলাকায়। ত্রাণ নিয়ে ছুটে চলেন আদিতমারী ও কালীগঞ্জের বন্যার্ত এলাকা গুলোতেও ।

এছাড়া অতি গোপনে ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম এলাকায় তাদের অবস্থান চোখে পরার মত। আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পাশাপাশি বাম সংগঠন গুলোও এ বারের বন্যায় ত্রাণ বিতরণ করছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা এলাকার বন্যা কবলিত মনজুর হোসেন ও সামসুল আলম জানান, এ বারের বন্যায় সরকারের পাশাপাশি অনেক রাজনৈতিক দল ত্রাণ বিতরণ করছেন। সবার সহযোগিতায় আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি।

লালমিনরহাট জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, লালমনিরহাট জেলায় এবারে বন্যায় ভয়াবহ ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সরকারী ভাবে তাদের মাঝে তেমন ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে না। আমরা দলীয় ভাবে ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাড়াঁনোর চেষ্টা করেছি।

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি বলেন, আমরা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বন্যা পরিস্থিতি সফলতার সাথে মোকাবেলা করছি। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির নেতারা ত্রাণ বিতরণের নামে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here