বন্যার্তদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাআসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: লালমনিরহাটে বন্যার পানি নেমে গেলেও বন্যার্ত লোকজনের দুর্ভোগ কমেনি। এখনো অনেক বন্যার্ত লোকজন ঘরে ফিরতে পারেনি। তারপরও বন্যাকে মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তারা। কারো সহায়তার অপেক্ষায় না থেকে নিজের চেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত বসত বাড়ি কোনো ভাবে মেরামত করে রাত কাটানো উপযোগি করে তুলছে বন্যার্ত লোকজন।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার লোকমান হোসেন বলেন, তিস্তার পানিতে দুই দিন পানি বন্দি ছিলাম। বসত বাড়ির বেশ ক্ষতি হয়েছে। সে গুলো মেরামত প্রয়োজন। এ ছাড়া বন্যার পানিতে আমার ৩ বিঘা জমির রোপা আমন ক্ষেত পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ক্ষতি কত দিনে পুষি উঠবো তা নিজেও জানি না। সরকারী সহায়তা হিসাবে ১০ কেজি চাল, ৫ শত টাকা আর ১ কেজি চিড়া পেয়েছি। তাই করো অপেক্ষায় না থেকে বাড়ি ফিরে ভাঙ্গা বেড়া গুলো মেরামত করে আবারও জীবন সংসার শুরু করেছি। কিন্তু চারা না থাকায় নষ্ট হয়ে যাওয়া ক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছি। ওই ৩ বিঘা জমিই আমার সম্বল। আবাদ না হলে খাবো কি ?

হাতীবান্ধা উপজেলার তালেব মোড় এলাকার জাহিদুল ইসলাম ও তাজেন হোসেন জানান, বন্যায় শুধু বসত বাড়ি বা ফসলী জমির ক্ষতি হয়নি। আমাদের চলাচলের রাস্তা গুলো ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা বসত বাড়ি মেরামতের পাশাপাশি ভাঙ্গা রাস্তা গুলোতে বাশোর সাকোঁ দিয়ে চলাচলের উপযোগি করছি। যখন সরকারী বরাদ্দ আসবে তখন চেয়ারম্যান-মেম্বররা ভালো ভাবে মেরামত করবেন।

লালমনিরহাটের সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের পাকার মাথাসহ অন্যান্য উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ও রাস্তার ওপর অবস্থান করছে নিঃস্ব পরিবারগুলো। চরম দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন তারা। তারা বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া বসত বাড়ি মেরামত করে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছে। জেলার বন্যাকবলিত ৩৫টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার বানভাসি মানুষের অবস্থা প্রায় একই। এছাড়া ৯৭ টি বিদ্যালয়ে বন্যাকবলিতরা আশ্রয় নিলেও সেখানে শৌচাগার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শিশু খাদ্যের সংকট রয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার চর সির্ন্দুনা গ্রামের তমিজ উদিন জানান, পানি বন্দি হওয়ার পর আমরা ২ বার করে ত্রাণ সহায়তা পেলেও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না। আমরা বসত বাড়িতে ফিরেছি। এখন নষ্ট হয়ে যাওয়া ক্ষেত গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

লালমনিরহাট জেলা (ভারপ্রাপ্ত) ত্রাণ কর্মকর্তা সুজাদ্দৌলা জানান, ১ লাখ ২ হাজার ৭৫০টি বন্যাদুর্গত পরিবারের জন্য এরই মধ্যে ৩৮২ টন চাল ও ১২ লাখ ৯৫ হাজার নগদ টাকা এবং ১ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮ হাজার ৯৫৬ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানি নামতে শুরু করায় নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাফিউল আরিফ বলেন, বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সরকারী ভাবে প্রতিটি বন্যার্ত পরিবারকে পুর্ণবাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সব মিলে একটু সময় লাগবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here