টি আলম, বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের মধ্যে যমুনাপাড়ের গ্রামটির নাম মাধবডাঙ্গা। ওই মাধবডাঙ্গা গ্রামে ভুটান সরকারের বাড়ীতে হাজারও গ্রীষ্মকালীন পাখিদের মিলনমেলা। শীতের অতিথি পাখির আগমনে গল্প অনেকেই শুনেছে।

কিন্তু গ্রীষ্মকালীন পাখির গল্প হয়তোবা অল্প মানুষেরই জানা। বিকেলে পাখিদের কাকলিতে সন্ধ্যার আগমন যেমন স্মরণ করে দেয়, তেমনি ভোরের পাখির ডাকে জাগা পায় গ্রামবাসী। ওই গ্রামে মানুষদের ভোরে জেগে উঠার এলাম যেন পাখিদের কলকাকলি। জরুরী কাজে ঘুম থেকে উঠে কাউকে জাগিয়ে দেওয়ার কথা বলতে হয়না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুটান সরকারের বাড়ীর পাখির আগমনে কাহিনী। প্রায় ১৫ বছর আগে হঠাৎ চৈত্রমাসে বাড়ির পিছনের বাঁশঝাড়ে একঝাক পাখির আগমন ঘটে। হঠাৎ করে আগমন ঘটা পাখিদের শুধু ওই বাড়ির লোকজন নয়, গ্রামের লোকজনও আনন্দের সাথে গ্রহণ করে। পাখিদের কেউ ঢিল ছুড়তে দেয় না।

একসময় পাখিরা বাসাবাধে, ডিমপাড়ে আবার আশ্বিন মাসে পাখি বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। এভাবে প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে পাখিরা আসতে থাকে এবং শীতের আগমনে আবারও চলে যায়। প্রতি বছরই পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং নতুন জাতের পাখিদের আগমন ঘটতে থাকে। এখন প্রায় ১০ সহস্রাধিক পাখির আগমন ভুটান সরকারের বাড়িতে।

আর ক’দিন পরেই ওইসব পাখি তার বাচ্চা নিয়ে চলে যাবে তার আপন ঠিকানায়। বাড়িটি ঘুরে দেখা যায় ১২ বিঘা জমির উপর ভুটান সরকারের বাড়ির চারিপাশে বাঁশঝাড়, নিম, বেল, তেঁতুলসহ নানা জাতের গাছে ওইসব পাখিদের বাসা। এখন প্রায় সব বাসাতেই পাখিদের ছানা।

দিনের বেলায় ওইসব পাখি মাধবডাঙ্গা বিলে তাদের আহারের সন্ধানে জলকেলি করে। সন্ধ্যায় ফিরে আসে নিরাপদ আশ্রয়ে ভুটান সরকারের বাড়িতে। পাখিরা যেন এতটাই নির্ভয়ে চলাফেরা করে যেন কেউ তাদের কোন ক্ষতি করবে না। তাই প্রতি বছরই ওইসব অতিথি পাখির সাথে আরও নতুন পাখির আগমন ঘটে। ভুটান সরকার তার নিজের সাংসারিক কাজের সাথে পাখিদের নিরাপত্তা নিয়ে একটি সময় ব্যয় করে। কোন শিকারী ওইসব পাখি শিকার করতে যেন না পারে তার জন্য ভুটানের তীক্ষ্ন দৃষ্টি রয়েছে।

ওই গ্রামের মানুষও এসব পাখিদের কোন ক্ষতি করতে দেয় না। তবে, মাঝে মাঝে রাতে সাপ, গুইসাপ, বাঘডাশ, নেউলসহ নানা জাতের হিংস্রপ্রাণী গাছে উঠে পাখির বাসায় হানা দেয়। ভুটান সরকারের বাড়ির ওইসব অতিথি পাখির গল্প শুনে অনেক পাখি প্রেমী মানুষের ভীড় জমে বাড়িতে। বছর বছর পাখির আগমন যে রকম বাড়ছে, ঠিক সে রকম পাখিদের দেখতে পাখি প্রেমিকদের আগমনও বেড়েই চলছে। ধুনটের বাইশার বিলের শীতকালীন পাখিদের অভয়ারন্য এবং ভুটান সরকারের বাড়ি গ্রীষ্মকালীন পাখিদের অভয়ারন্য দেখতে শুধু এলাকাবাসী নয় বাইরের স্কুল কলেজ থেকে ভীড় জমাচ্ছে সেখানে।

ভুটান সরকার জানান, যমুনার ভাঙ্গনে আমার আবাদী জমি নষ্ট হয়ে গেলে যে কষ্ট না পাব, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাব যদি বাড়ির গাছ-গাছালি এবং মাধবডাঙ্গা বিলের চিত্র নষ্ট হয়ে যায়। কেননা ওই বিল এবং আমার বাড়ির গাছ-গাছালি হাজার হাজার অতিথি পাখির নিরাপদ বাচ্চা উৎপাদনের আশ্রয় স্থল।

বাইশারবিলে শীতকালীন অতিথি পাখিদের সম্পর্কে ওই বিলের প্রায় পুরো ভাগের মালিক সংসদ সদস্য মোঃ হাবিবুর রহমানের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আসিফ ইকবাল সনি জানান, বাইশার বিলে অতিথি পাখিদের নিয়ে আমার অনেক ভাবনা। একই সাথে আমরা বাইশার বিলের মতো মাধবডাঙ্গার গ্রীষ্মকালীন পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল সংরক্ষণ করতে চাই। আমরা আমাদের হারানো প্রকৃতিকে ফিরে পেতে এসব স্থাপনা নষ্ট হতে দিব না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here