ফলাফলের ৫ মাস পর এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেল সিথি: পরীক্ষা কেন্দ্র স্থগিতআসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: ২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পাঁচ মাস পর সংশোধিত ফলাফলে অবশেষে গোল্ডেন এ প্লাস পেল লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মেধাবি শিক্ষার্থী সিথি কিবরিয়া। সিথি ওএমআর জালিয়াতির শিকার হয়েছিল। তদন্তের পর মঙ্গলবার দুপুরে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড এই ফল প্রকাশ করে। সিথির রোল নম্বর ১৬৭৭৭৫।

সংশ্লিষ্ট হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রেই সিথির চারটি বিষয়ের ওএমআর গায়েব করে সেগুলো ইচ্ছামত বদলে ফেলার ঘটনাটি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের উচ্চতর ক্ষমতা সমপন্ন কমিটির তদন্তে ধরা পড়ে। এ কারণে সিথির ফল সংশোধন করা হয়। কেন্দ্রটি স্থগিত করা হয়েছে এবং জড়িত শিক্ষকদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। মেধাবি সিথির প্রাপ্য ফল প্রকাশিত হওয়ায় সহপাঠীরা আনন্দ-উল্লাস করছে। তারা সাধারণ মানুষের মাঝে মিস্টি বিতরণ করছে। সিথির পরিবারসহ হাতীবান্ধা উপজেলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সহ শিক্ষানুরাগী মহল স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন।

শিক্ষা বোর্ডের তদন্তে ধরা পড়ে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব, সহকারি সচিব ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের যোগসাজসে সিথির চারটি বিষয়ের ওএমআর শত্রুতাবশত: গায়েব করা হয়েছে। এর পরিবর্তে বিকৃত ওএমআর প্রতিস্থাপন করে রাজশাহী কমিপউটার সেলে পাঠানোর মাধ্যমে পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা সিথির ন্যায্য ফল পাল্টে ফেলেছেন। বিকৃত ওএমআরগুলোতে সিথির হাতের লেখা ও কক্ষ পরিদর্শকদের সইয়েরও কোন মিল তদন্তে পাওয়া যায়নি।

এজন্য দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হাতীবান্ধার সাত জন শিক্ষককে শাস্তি দিয়েছেন। এদেরকে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের যে কোন পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা ও কক্ষ পরিদর্শন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূলায়ন সহ সকল প্রকার গোপনীয় কার্যক্রম থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এরা হলেন ওএমআর জালিয়াতির ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মাহাতাবউদ্দিন সহ ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শহীদুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান, মেরাজুস সালেকিন মিল্লাত, শাহ্‌ গরীবুল্যাহ্‌ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র অধিকারী ও লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান।

তদন্ত প্রতিবেদনে শাস্তির কী কী সুপারিশ ছিল এবং বাস্তবায়নের জন্য কতটুকু গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কর্মতৎপর কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাত সহকারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: রাকিবুল ইসলাম এ সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও হাতীবান্ধা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এমজি মোস্তফা ২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। এজন্য তার পরিবর্তে হাতীবান্ধার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তৈয়ব আলীকে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাকেও একই শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ মে’র এসএসসি ফলাফলে সিথি জিপিএ-৪.৮৮ পেয়ে ’এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। এ ফলাফল ছিল সিথির পরিবারসহ স্থানীয় সকলের কাছে সমপূর্ণ অবিশ্বাস্য। দেখা গেছে, সিথি অন্যান্য বিষয়ে এ প্লাস পেলেও বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা এ চারটি বিষয়ে এ গ্রেড পায়। সিথি ১ম থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রথম স্থান অধিকারী একজন শিক্ষার্থী। এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় তার ফলাফল ছিল একমাত্র গোল্ডেন এ প্লাস। সিথি ৫ম শ্রেণীর পিএসসি ও ৮ম শ্রেণীর জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে জেলায় প্রথম হয়। গণিত অলিমিপয়াডে জেলা চ্যামিপয়ন হয় সিথি কিবরিয়া। সে রংপুর বেতারের একজন তালিকাভুক্ত নিয়মিত সংগীত শিল্পী।

হাতীবান্ধা শাহ্‌ গরীবুল্যাহ্‌ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থী সিথি কিবরিয়া এসএসসি ফলাফলে এ প্লাস পায়নি। অথচ এ প্লাস পেয়েছে ওই বিদ্যালয়ে ওর পেছনের ৪৯ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞানের তুখোড় ছাত্রী সিথি কিবরিয়া শেষ পর্যন্ত একাদশ বিজ্ঞানে ভর্তি হতে পারেনি। সে ভর্তি হয়েছে মানবিক শাখায়।

১৭ মে এসএসসি’র ফল প্রকাশের পর দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে পুন:নিরীক্ষার জন্য আবেদন করা হলেও তখনই সিথি সন্দেহ করেছিল যে, ওই চারটি বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক অভিক্ষার উত্তরপত্রে (ওএমআর) পরীক্ষা কেন্দ্রে সর্বনাশের কোন ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু ওএমআর নিরীক্ষণ করার কোন সুযোগ পুনঃনিরীক্ষণ প্রক্রিয়ায় না থাকায় সিথির পরিবার হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।

এক মাস পর গত ১৫ জুন পূন:নিরীক্ষণ ফলাফল প্রকাশিত হয় এবং সিথির ফল অপরিবর্তিত থাকে। ফলাফলে কোন পরিবর্তন না হওয়ায় সিথি ওই চারটি বিষয়ের ওএমআর তদন্তের দাবিতে ১৭ জুন দিনাজপুর শিক্ষাবোডের্র চেয়ারম্যানের কাছে উচ্চতর নিরীক্ষণের জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানায়। বোর্ডের তদানীন্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: আলাউদ্দিন মিয়া বিশেষ বিবেচনায় তা আমলে নেন।

এরপর গত ৯ জুলাই দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের একটি উচ্চ ক্ষমতা সমপন্ন তদন্ত কমিটি সিথির ও এম আর জালিয়াতি তদন্ত করতে সরেজমিনে হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here