কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে চমকপুর মাদ্রাসার মাঠে গত ১১ই নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় এক গ্রাম্য শালিসে অবৈধ বিয়ের ফতোয়া দিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে জুতা পেটা ও গলায় জুতার মালা পড়িয়ে গ্রাম ছাড়া করেছে। গ্রাম সালিসে এই জঘন্য রায়ে স’ানীয় জনমন থেকে শুরু করে গোটা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এদিকে জুতা পেটার শিকার স্বামী জাকির ও স্ত্রী আকলিমা আক্তার হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
স’ানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মিঠামইনের চমকপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম তাজুল ইসলাম একই ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের ফুল মামুদ ভূইয়ার কন্যা আকলিমা আক্তার (২৫) কে দ্বিতীয় বিয়ে করে। প্রথম স্ত্রী আকলিমার বড় বোন রাহিমা আক্তার মারা যাওয়ায় সে তাঁর শ্যালিকা কে পরে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে আকলিমা এক মেয়ে সন-ানেরও মা হন। তাঁর নাম ছায়মা (৬)। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরিবারিক কলহ শুরু হয়।
এক পর্যায়ে গত ৫ ডিসেম্বর আকলিমা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে স্বামী ইমাম তাজুল ইসলামকে ডিভোর্স দেয়। ডিভোর্স দেওয়ার ৩ মাস পর আকলিমা একই গ্রামের আত্বীয় জাকির হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। দীর্ঘ ৮ মাস জাকির ও আকলিমা স্বামী-স্ত্রী হিসাবে ঘর সংসার করে আসছে। এদিকে ইমাম তাজুল ইসলামও অন্যত্র বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তাজুলের পরিবারের সাথে জাকিরের পরিবারের বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে ১১ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় চমকপুর দাখিল মাদ্রাসার মাঠে এক শালিস বসে।
শালিসান গণ ইমাম তাজুল ইসলামের বক্তব্য শুনে রহস্যজনক কারণে এক তরফা রায় দেন। শালিসানগণ জাকির হোসেন ও আকলিমার বিয়েকে অবৈধ ঘোষনা করে সাবেক স্বামী ইমাম তাজুল ইসলাম ফতোয়া দেয়। পাশাপাশি স্বামী জাকিরকে জুতা পেটা করে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে মাদ্রাসা প্রাঙ্গন ঘুরানো হয় এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নিদের্শ দেওয়া হয়। জুতা পেটার এক পর্যায়ে জাকির মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারালে আত্বীয়-স্বজন প্রথমে তাকে মিঠামইন উপজেলা স্বাস’্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে মুমুর্ষ অবস’ায় কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে সে বর্তমানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এছাড়া স্ত্রী আকলিমাকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিলে তাকেও পিটানো হয়। ফলে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রুমন চক্রবর্ত্তী, কিশোরগঞ্জ