ঢাকা: শপথ গ্রহণের পরদিন সোমবার নতুন মন্ত্রীরা সচিবালয়ে নিজ নিজ দপ্তর বুঝে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তবে নতুন মন্ত্রীদের আগমনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে কিছুটা ভাটার টান ছিল।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রীরা প্রথম যেদিন সচিবালয়ে আসেন, সেদিন ব্যাপক উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হয়েছে। সেদিন সচিবালয় জুড়ে বড় বড় ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পেয়েছিল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে ছিল ফুলের ডালা আর বড় বড় মিস্টির প্যাকেট। অথচ, গতকাল ছিল না ব্যানার-ফেস্টুন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল দিয়ে নিজ নিজ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের বরণ করে নিয়েছেন। এছাড়া অন্যদিনের চেয়ে সচিবালয়ে দশনার্থী ও গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। বিভিন্ন অধিদফতর ও বিভাগের কর্মকর্তারাও সচিবালয়ে এসেছিলেন।

নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সবার আগে সচিবালয়ে আসেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সোমবার সকাল ৯টার কিছু পরে নাহিদ সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় পুরনো হলেও সরকার নতুন হওয়ায় কর্মকর্তা কর্মচারীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মন্ত্রীকে।

পরে আসেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সচিবালয়ে পৌঁছানোর পর বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ নতুন মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এরপর নিজের কার্যালয়ে বসার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তোফায়েল আহমেদ। তোফায়েল বলেন, হরতাল-অবরোধ তুলে নেয়ায় প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির রাজনীতি ভুল ছিল, এখন তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আরো ভালো হবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রোববার যে সরকার গঠিত হয়েছে সে সরকার পাঁচ বছরের জন্য এসেছে। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কোনো সরকার গঠন করা হয়নি।

সোমবার সকালে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেনন এ কথা বলেন। মেনন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সরকার দেশের মানুষের জান-মাল রক্ষার বিষয়টি বিশেষ করে নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি চাইলে আলোচনা হতে পারে। তবে অবশ্য এর আগে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।

জঙ্গিবাদ দমন নবগঠিত সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে প্রবেশ করার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে  আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত সরকার যেখানে কাজ শেষে করে গেছে, নবগঠিত সরকার সেখান থেকেই আবার কাজ শুরু করবে। আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা।

বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাম্প্রতিক রাজনৈতকি পরিস্থিতিতে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন না। তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থার চেয়েও কঠিন সময় পার করে এসেছি। এটা কোনো চ্যালেঞ্জই না। নতুন সরকারে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সচিবালয়ে সাংবাদিক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এরশাদ সরকারের আমলে মন্ত্রী ছিলাম, তখন তো আরো খারাপ অবস্থা ছিল। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত নন জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে ভোটের পারসেন্টিজ হিসেব করা হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে করা হয়। মঞ্জু বলেন, বর্তমান অর্থবছরে যেটুকু সময় আছে সেটুকু করার চেষ্টা করব।

নতুন মন্ত্রিসভার ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথে পাকিস্তানিদের লেজুরবৃত্তি করে, যারা দেশের বিষয়ে বিদেশীদের কাছে নালিশ করে তাদের সঙ্গে কিসের সমঝোতা।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, বর্তমানে যে সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো ঘটছে, যেভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা চলছে, এ রূপ সংকটমুহূর্তে অন্ধকার শক্তির বিরুদ্ধে কাজের ব্যাপক সুযোগ আছে।

বিএনপির সহযোগিতা ছাড়া এ সরকার কিভাবে দেশ চালাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে নতুন  সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বলেছেন, হু ইজ বিএনপি? তারা কেন নির্বাচনে আসেনি। এটা তাদের ব্যাপার। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নিজ দফতরে আসার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।

দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন নবগঠিত সরকারের খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। প্রথম কর্মদিবসে সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে যে পরিকল্পনা চলছে এগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবো। আশা করি সুনাম বজায় থাকবে।

ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার দেশকে এগিয়ে নিবে। প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়ে নিজ এলাকা ময়মনসিংহবাসীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করাই হবে আমাদের প্রধান কাজ বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। নিজ কার্যালয়ে সোমবার বেলা ১২টার দিকে এ কথা বলেন তিনি। আসাদুজ্জামান খান বলেন, নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নির্যাতিতরা বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আইজিপি দু’একদিনের মধ্যে পরিদর্শনে যাবেন। মন্ত্রণালয়ের কাজ একটু গোছানোর পর আমিও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাব। ।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আগামী পাঁচ বছরে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ  উৎপাদন করাই হবে তাঁদের লক্ষ্য।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, পুনরায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত শেষ করবেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান অফিস করলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি)। সোমবার সকাল ১১টায় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ইআরডিতে যান। পরে তারা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব আবুল কালাম আজাদ। যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অসুস্থতার কারণে মন্ত্রণালয়ে আসেননি। সংবাদ সম্মেলন ডেকেও তিনি তা বাতিল করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here