dsgs eমিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :: যেদিন জন্ম হয়েছিলো সেই দিনই বাবার জেলে নৌকায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছিলো। খুশি মনে বাবা ঘরে এসে কন্যার মুখ দেখে নাম রেখেছিলো লাকী (মানে সেীভাগ্যবতী)। কিন্তু সেই সেীভাগ্যবতী লাকীর সকল স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় সে যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে জানতে পারেণ বিকালে তার বিয়ে। কৈশোরের খেলার পুতুল ও রান্না রান্না খেলার সামগ্রী অন্য সহপাঠীদের দিয়ে তাকে প্রবেশ করতে হয় স্বামীর সংসারে ১১ কি ১২ বছর বয়সে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের জাফর হাওলাদারের মেয়ে লাকী (১৪) এখন দুই বঝর বয়সী এক পুত্র সন্তানের মা। কিন্তু ১৪ তেই তাকে মনে হচ্ছে ৪০ বছর বয়সী গৃহবধু। নিজের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে এই মায়ের একটাই স্বপ্ন ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা।

যে বয়সে তার সহপাঠীদের সাথে পুতুল পুতুল খেলা করার কথা সে এখন সংসার সামলাচ্ছে। কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার চর, গঙ্গামতি ও চর ধুলাসার গ্রামে এই লাকী বেগমের মতো শতশত কিশোরী বাল্যবিয়ের কবলে পড়ে এখন গৃহবধু।

কৈশোরেই তাদের বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে মা-বাবা। এরা অনেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোয়নি। কিন্তু অশিক্ষা-দারিদ্রতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ে ভীতসন্ত্রস্ত অভিভাবকরা পরিবারের সম্মান বাঁচাতে মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু অল্প বয়সে মা হওয়ায় উপকূলীয় বাল্যবিয়ের শিকার মায়েদের কৈশোরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের ভবিষৎ স্বপ্ন।

স্কুলের গন্ডি না পেরোতেই মা। তাউ কোন উৎসব বা দিবস এই লাকীদের জীবনে খুব একটা উৎসব বয়ে আনে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাঠের কাজ, কাউকে জাল নিয়ে নদীও সাগরে পোনা শিকার করেই তাদের দিনের আলোর বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয়।

লাকী বলেন, স্বামী রাসেল ভূইয়া সারাদিন নদীতে মাছ শিকার করেণ। তাই ছেলে রাশিদুলকে নিয়ে তাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘর ও বাহির সামলাতে হয়। অতীত স্মৃতি মনে করে বলেন যখন ক্লাস ফোরে পড়তাম তহন মোর ছিলো ২৬। সারাদিন ঘুরতাম, খেলতাম। এই সময়ে গাছের আম পাড়তাম। বিকালে সবাই এক সাথে বসে সেই আম মাইখ্যা খাইতাম। পুতুলের বিয়া দেতাম। মোর মনে আছে, যেদিন মোর বিয়া হইছে হেইয়ার কয়দিন আগেই একটা পুতুলের বিয়া দিছি। কিন্তু ভাগ্য দ্যাহেন সংসারের কিছু বুইজ্জা ওডার আগেই মোরই বিয়া হইয়া গ্যাছে। এখন পোলাডারে মানুষ করাই মোর স্বপ্ন। মোর স্বপ্নপূরণ না হলেও চেষ্টা করবো ওর স্বপ্নপূরণের।

কাউয়ার চরের এই লাকীর মতো শতশত স্কুল ছাত্রী এখন গৃহিনী। স্বামী, সন্তান নিয়ে এখন তিনি সফল মায়ের দায়িত্ব পালন করছে।
কাউয়ার চর গ্রামের ফ্রেন্ডশীফ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হোসনেয়ারা বেগম বলেন, বয়স ১০ কি ১২ বলেই এই গ্রামের মেয়েদের বিয়ে দেয়া একটা নিয়মে পরিণত হয়েছিলো।

গোটা গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এবং পারিবারিক দারিদ্রতায় অভিভাবকরা মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলো এতোদিন। কিন্তু গত দুই-তিন বছর ধরে এই চরে স্কুল নির্মান করার পর গ্রামবাসী অনেকটা সচেতন হয়েছে। এখন কমে গেছে বাল্য বিয়ে। তবে এই চরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সচেতনতামূলক কর্মকান্ড না করায় লাকীদের মতো মেয়েদের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে আজ গৃহবধু ও মা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here