পিএসসি পরীক্ষা দিতে না পারার কষ্টে স্কুল ছাত্রীর আত্মহননমিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :: ইচ্ছে ছিলো বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। অভাবী মা-বাবার দুঃখ ঘোচাবেন। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতায় এবার পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া হবে না সুখী বেগমের (১০)। এ কষ্ট সহ্য করতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সুখী।

বুধবার সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের সমাজসেবা অফিস সড়কে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে প্রেরণ করেছে। নিহত সুখী সবজি বিক্রেতা সেরাজুল ইসলামের মেয়ে।

স্কুল ছাত্রীর মা আকলিমা বেগম জানায়, দুই সন্তানের মধ্যে ঢাকার পাগলা সরকারি প্রাথমিক পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ছিলো সুখী। ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ে। আর্থিক দৈন্যতায় দুই মাস আগে কলাপাড়ায় এসে সমাজসেবা অফিস সংলগ্ন হিরন তালুকদারের বাসায় ভাড়ায় ওঠেন তারা। ১৮ নভেম্বর সুখীর পিএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ভাড়া টাকার অভাবে যাওয়া হয়নি। মেয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য জেদ করলেও কোন উপায় ছিলো না দেখে আগামী বছর তাকে পরীক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়। এ কষ্টে গলায় ওড়না পেছিয়ে ফাঁস দিয়ে সুখী আত্মহত্যা করে।

আকলিমা বেগম বলেন, ভোরেও সুখী কইছে মা আমি কী পরীক্ষা দেব না, আর কী লেখাপড়া করবো না। আমার তো ডাক্তার হতে হবে। প্রথম পরীক্ষাই যদি দিতে না পারি তাহলে এতোদিন যে লেখাপড়া করছি তা দিয়ে কী হবে। মেয়েকে সান্তনা দিতে ওর জন্য নতুন একটা জামার কাপড় ও কাঁচা বাজার কিনতে বাজারে যাই সকাল সাড়ে ১০ টায়। কিন্তু ফিরে এসে দেখি মেয়ে আমার ঘরের আড়ার সাথে ঝুলছে। নতুন জামা তার আর পড়া হলো না। সুখীর আত্মহননের পর পাগলপ্রায় মা তার বই-খাতা জামাকাপড় বুকে নিয়ে শুধুই আর্তনাদ করছে। তার আর্তনাদে প্রতিবেশীসহ গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আকলিমা বেগমের প্রতিবেশী কল্পনা বেগম ও বাড়িওয়ালা পারভীন জানায়, সুখী সারাদিন বই-খাতা নিয়ে থাকতো। খাতাসহ ঘরের চারিদিকের বেড়ার ছবি আঁকতো। খাবার ও খেলাধুলার চেয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহ ছিলো বেশি। কয়েকটা টাকার জন্য যে এভাবে পরীক্ষা দিতে না পেরে মেয়েটা আত্মহত্যা করবে তা কেউই বুঝতে পারেনি।

কলাপাড়া থানার ডিউটি অফিসার এসআই মাসুদ জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here