সোমবার দুপুর পৌনে ২ টায় প্রকাশিত ফলাফলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বরিশাল বিভাগে পাসের হার ৯৯ দশমিক ০৫ ভাগ।উর্ত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৫শ’ ৯২ জন।এদের মধ্যে ছেলে ২ হাজার ৫১ জন এবং মেয়ে ২ হাজার ৫শ’ ৪১ জন।এ বছর ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩ শ’৬২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ছেলে ৬১ হাজার ৭শ’ ৩৫ জন এবং মেয়ে ৭৪ হাজার ৬শ’ ২৭ জন।ছেলেদের মধ্যে পাস করেছে ৬১ হাজার ১শ’ ৭৬ জন এবং মেয়েদের মধ্যে পাস করেছে ৭৩ হাজার ৯শ’ ৬৪জন।মোট পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ১শ’ ৪০ জন বলে জানিয়েছে বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারি পরিচালক ফরহাদ হোসেন।উল্লেখ্য, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহ্‌ আলম সোমবার সকাল থেকে তার দপ্তরে অনুপস্থিত। তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারে একাধিক বার রিং করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাই বরিশাল জেলার ফলাফল দেয়া সম্ভব হয়নি।

এবতেদায়ী পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে বরিশাল বিভাগে পাসের হার ৯৯ দশমিক ০৫ ভাগ।এ বছর ২৪ হাজার ৬শ’ ৬৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন গ্রহণ করেণ। এর মধ্যে ছেলে ১০ হাজার ৫শ’ ৩১ জন এবং মেয়ে ১৪ হাজার ১শ’ ৩৪ জন। এদের মধ্যে ছেলে ৯৮ জন এবং মেয়ে ২৩ জন।উর্ত্তীর্ন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১শ’ ২১ জন।ছেলেদের মধ্যে পাশ করেছে ১০ হাজার ১শ’ ৮০ জন এবং মেয়েদের মধ্যে পাশ করেছে ১৩ হাজার ৪শ’ ৫৫ জন।

মোট পাশ করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৬শ’ ৬৫ জন বলে জানিয়েছে বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারি পরিচালক ফরহাদ হোসেন।প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এবার সাত বিভাগের মধ্যে সেরা ফল করেছে বরিশালের শিক্ষার্থীরা।প্রাথমিকে এই বিভাগের ৯৯ দশমিক ০৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবার পঞ্চম শ্রেণী থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর ইবতেদায়ীতে উত্তীণের্র হার ৯৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. আফছারুল আমীন সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন।গত ২৩ থেকে ৩০ নভেম্বর সারা দেশে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।বিভাগওয়ারি ফলাফলে দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার খুলনায় ৯৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, ঢাকায় ৯৮ দশমিক ০৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ৯৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৭ দশমিক ২৪ শতাংশ, রংপুরে ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং সিলেটে ৯০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।আর ইবতেদায়ীতে পাসের হার- রাজশাহীতে ৯৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, রংপুরে ৯২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, খুলনায় ৯২ দশমিক ১২ শতাংশ, ঢাকায় ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯০ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং সিলেটে ৮২ দশমিক ১৪ শতাংশ।এ পরীক্ষার জন্য নিবন্ধিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ-৫ পাওয়ার হার এবং অনুপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার ভিত্তিতে প্রাথমিকে ৭ বিভাগের ৭ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়।এই হিসাবে প্রাথমিকে রাজশাহী বিভাগের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বগুড়ার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা বিভাগে খুলনা জিলা স্কুল, ঢাকা বিভাগে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিভাগে কুমিল্লা মডার্ন স্কুল, বরিশাল বিভাগে বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সিলেট বিভাগে ব্লুবার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও রংপুর বিভাগে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ।এ বছর প্রাথমিকে ৯৭ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর ইবতেদায়ীতে পাসের হার ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এবারই প্রথম সমাপনী পরীক্ষার ফল গ্রেড পদ্ধতিতে দেওয়া হয়েছে।এবার সমাপনীতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২২ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে টেলেন্টপুলে এবং ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীকে সাধারণ বৃত্তি দেওয়া হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বরিশাল শীর্ষে এগিয়ে মেয়েরা

তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এবারও শীর্ষে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। দেশের ছয়টি বিভাগের মধ্যে এবারও সর্বোচ্চ পাসের হার বরিশালে ৯৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশি। গতবার খুদে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলেও বিভাগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পাসের হার ছিলো বরিশালে ৯৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। প্রথমবারের পরীক্ষায়ও বিভাগওয়ারি ফলাফলে পাসের হারে শীর্ষে ছিল এ বিভাগ। বরিশাল বিভাগে তখন পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এই নিয়ে টানা তিনবার পাশের হারের দিক থেকে বিভাগগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বরিশাল।এদিকে ‘ছোটদের এসএসসি পরীক্ষা’ হিসেবে অভিহিত এই পরীক্ষার ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে সারা দেশের ন্যায় বিভাগীয় শহর বরিশালের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ ও কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। গ্রামগঞ্জ, শহর-নগর নির্বিশেষে বিভাগের সর্বত্র একে অপরকে ফল জানানো, শুভ কামনা করা, মিষ্টিমুখ, ফুল দেওয়া-নেওয়া-সব মিলিয়ে এক উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। পাসের হার বেশি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি মানুষ এই উৎসবের আনন্দের অংশ হতে পেরেছে। তবে দেশের প্রকৃত পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।জিপিএ ও পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে : গ্রেড পয়েন্ট এ্যাভারেজ (জিপিএ) ও পাসের হারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট শিক্ষার্থীর আট ৬১ হাজার ৭৩৫ জন ছিল ছাত্র। এর মধ্যে ৬১ হাজার ১৭৬ জন পাস করেছে। ছেলেদের পাসের হার ৯৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৫১ জন। অন্যদিকে মোট ৭৪ হাজার ৬২৭ জনের মধ্যে ৭৩ হাজার ৯৬৪ জন মেয়ে পাস করেছে। মেয়েদের পাসের হার ৯৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৫৪১। অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অকৃতকাযের্র সংখ্যাও বেশি।

সেরাদের সেরা : এই প্রথমবারের মতো পাশের হার, পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ও অনুপস্থিতিসহ চারটি মানদন্ডের ভিত্তিতে বিভাগের সেরা দশটি প্রতিষ্টানের তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়। ওই স্কুলের ২৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২০৭ জন। পাশের হার শতভাগ। চারটি মানদন্ডের ভিত্তিতে প্রাপ্ত পয়েন্ট ৭৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। শতভাগ পাশের পাশাপাশি ১৪৯ টি জিপিএ ৫ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বরিশাল জিলা স্কুল (৬৭ দশমিক ৬৫)। শহরের উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৫১ দশমিক ০৯) রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। ওই বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৭ শিক্ষাথী। শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

৯৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ পাশের হার ও ৫০ টি জিপিএ ৫ নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে পিরোজপুর সরকারি  উচ্চ বিদ্যালয় (৪৪ দশমিক ৩৪)। চারটি মানদন্ডের ভিত্তিতে সেরা দশে থাকা অপর ছয়টি প্রতিষ্ঠান হলো- পটুয়াখালী সরকারি জুবলী উচ্চ বিদ্যালয় (৪৩ দশমিক ৪৬), পটুয়াখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৪২ দশমিক ৭৬), মঠবাড়িয়া মডেল বিদ্যালয় (৩৯ দশমিক ৯১), ভোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (৩৯ দশমিক ৬৩), ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (৩৮ দশমিক ৬৩) এবং বরিশালের হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৩৮ দশমিক ৩৫)।

ইবতেদায়ীতে ছেলেরা এগিয়ে: প্রাথমিক থেকে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফলের চিত্র পুরোটাই উল্টো। ইবতেদায়ী পরীক্ষার ফলাফলে গ্রেড পয়েন্ট এ্যাভারেজ (জিপিএ) ও পাসের হারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট ২৭ হাজার ৬৬৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৬ হাজার ৪২১ জন। শতকরা পাসের হার ৯৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। যা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ কম।

ইবতেদায়ী পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিল ১৩ হাজার ৫৩১ জন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৯৮০ জন পাস করেছে। ছেলেদের পাসের হার ৯৫ দশমিক ১১ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯৮ জন। অন্যদিকে মোট ১৪ হাজার ১৩৪ জনের মধ্যে ১৩ হাজার ৪৪১ জন মেয়ে পাস করেছে। মেয়েদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৩ জন। পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহনকারীর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি হলেও পাসের হার ও জিপিএ ৫ উভয় দিক থেকেই পিছিয়ে ছিল মেয়েরা।

ইবতেদায়ীতে সেরা দশ প্রতিষ্ঠান: প্রাথমিকের মতো এই প্রথম পাশের হার, পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ও অনুপস্থিতিসহ চারটি মানদন্ডের ভিত্তিতে বিভাগের সেরা দশটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ছারছীনা দারুসুন্নাত আলিয়া মাদরাসা (৫৩ দশমিক ২৩)। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের পাশের হার শতভাগ। ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদরাসা (৫০ দশমিক ৪২) ৫ টি জিপিএ ৫ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ারর আফছার-উল উলুম দাখিল মাদরাসা (৪১ দশমিক ৬৭) রয়েছে তৃতীয় স্থানে।

তালিকা মতে, বাউফলের পোনাহুরা ইসলামিয়া নেছারিয়া মাদরাসা (৩৮ দশমিক ৪৬), চরফ্যাশনের চৌমুহনী মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদরাসা (৩৬ দশমিক ২৫), মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী দারচসুন্নত মাদরাসা (৩৫ দশমিক ৭৬), ভান্ডারিয়া শাহবুদ্দিন মাদরাসা (৩৫ দশমিক ৪৪), আমতলীর হরিণখোলা সি এন এ দাখিল মাদরাসা (৩৪দশমিক ৮৯), রাজাপুরের দক্ষিণ তারাবুনিয়া মোয়াল্লেম আহামদিয়া ছফির উদ্দিন মাদরাসা (৩৩ দশমিক ১১) এবং ভোলার কন্দ্রকপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা (৩২ দশমিক ৩৫)।

ওয়েবসাইটে ফল পেতে বেগ: ওয়েবসাইটে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীর ফলাফল পেতে বেগ পেতে হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও টেলিটকের ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তা করাও হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে গিয়ে ফলাফল পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। বেশি সমস্যা হয়েছে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ঢুকতে। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ঢুকতে গিয়ে একাধিকবার দেখা গেছে সাইটটি ডাকাবেইজে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিকালের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মামুনুর রশিদ/বরিশাল

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here