আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে চট্টগ্রামে চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে অসহযোগ আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনহংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সভাপতি আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (ন্তু) লারমা বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে ১৫ মে থেকে আন্দোলনে নামবে উপজাতীয় সংগঠনগুলো।

পার্বত্য শান্তি-চুক্তির ১৭ বছর পরও পাহাড়ে সন্ত্রাসীদেরর আধিপত্বআল-মামুন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি (শান্তি-চুক্তি)’র ১৭ বর্ষপূর্তি উদযাপনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। সে সাথে পার্বত্য জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ও সমর্থিত সংগঠনগুলো দিবসটি পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। এ জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের ৩ পাহাড় সেজেছে তার নতুন সাজে।

বিশাল আয়োজন ও উৎসব মুখোর পরিবেশে দিবসটি পালনের প্রস্তুতি নিলেও চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় পার্বত্যাঞ্চলের স্থায়ী  শান্তির বদলে আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছে পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা।

চুক্তি স্বাক্ষরের ১৭ বছর পরও পাহাড়ে অব্যাহত রয়েছে উপজাতীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর আধিপত্ব বিস্তারের লড়াই। থেমে নেই ভূমি বিরোধ ইস্যুতে পাহাড়ে অস্থিরতা। প্রশাসন প্রাণ পন চেষ্টা করেও থামাতে পারছে না তাদের এ হত্যাযজ্ঞ।

স্থানীয় শান্তির আশায় রোধে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও থামেনী গোলা-গুলি, অপহরন, চাঁদাবাজী এখনোকি থেমেছে হত্যাযজ্ঞ। তবে এর জন্য আঞ্চলিক সংগঠনগুলো দায়ী করছে সরকারকে। কারন শান্তি-চুক্তি পূর্ণবাসন বায়ন করলে এ সহিংসতা বন্ধ হয়ে যেত দাবী উপজাতীয় সংগঠনগুলোর।

আওয়ামীলীগ সরকার ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে পার্বত্য শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পর পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য জনসংহতি সমিতি(জেএসএস), জেএসএস সংস্কারপন্থী (মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা গ্রুপ) ও ইউনাইটেট পিপলস ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নামের সংগঠনগুলোর একাদিক দলে বিভক্ত হয়ে বেড়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন।

তবে সমপ্রতি বেড়েছে পার্বত্য অঞ্চলে নতুন নতুন আঞ্চলিক রাজনীতিতে সংগঠনের শাখা প্রশাখা বুদ্ধির প্রবণতা। সাথে সাথে পাহাড়ে বদলেছে রাজনৈতিক দৃশ্যপট ও প্রেক্ষাপট। বর্তমানে উপজাতীয় সংগঠনগুলো সকলের চোখের আড়ালে নতুন রূপে সৃষ্টি হচ্ছে।

১৯৭২ সালে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা (এম এন লারমা)’র নেতৃত্বে জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রাম জেএসএস প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৩ সালে প্রীতি কুমার চাকমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র স্বশস্ত্র শাখা শান্তি-বাহিনীর একটি দল বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বিদ্রোহে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে প্রীতি গ্রুপের হাতে এম এন লারমা নিহত হন।

পরবর্তীতে সময়ে প্রীতি গ্রুপের ৫ হাজার সদস্য সরকারের নিকট অস্ত্র সমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি- চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে জেএসএস ও শান্তি- বাহিনীর ১৯৪৭জন সদস্য আনুষ্ঠানিক ভাবে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। ১৯৯৮ সালের ১০ ফেরুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে শান্তি-বাহিনীর অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রকাশ্য ব্যানার প্রদর্শন করে উপজাতীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শান্তি-চুক্তিকে আপোষচুক্তি আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে নতুন সংগঠনের জন্ম দেয়।

এর পর পার্বত্য চট্টগ্রামে গঠিত হয় শান্তি-চুক্তি বিরোধী সর্ববৃহত্তর ও শক্তিশালী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সংগঠন ইউপিডিএফ। এদিকে ইউপিডিএফের দাবী সরকারের এক পশী মনভাব আর দমন, পিড়নের কারনে অব্যাহত রয়েছে বহুমুখী জটিলতা আর ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত। পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রধান কারন বর্তমান সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয় বলে দাবী জনসংহতি সমিতি।

আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে চট্টগ্রামে চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে অসহযোগ আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনহংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে ১৫ মে থেকে আন্দোলনে নামবে উপজাতীয় সংগঠনগুলো। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও জুম্ম জনগণের সাথে প্রতারনা করেছে বলে উল্লেখ করেন।

উল্লেখ যে, শান্তি-চুক্তির পর জেএসএস আরেক দফা ভাঙনে এম এন লারমার ভাই সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র উল্লেযোগ্য একটি অংশ এখন সংস্কারপন্থী জেএসএস হিসেবে আবির্ভূত হয়। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সুধাসিন্ধু খীসা-তাতিন্দ্রলাল চাকমা ওরফে মেজর পেলের নেতৃত্বে নব গঠিত জেএসএস’র সাথে ইউপিডিএফ’র গোপন সখ্যতা গড়ে। তবে চুক্তির পক্ষে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো এক ও অভিন্ন।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here