পার্বত্যাঞ্চলে বছরে শত কোটি টাকার চাঁদাবাজিআল-মামুন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে চলছে ব্যাপকহারে চাঁদাবজি আর এনজিওর মানবসেবা-সহায়তার নামে চলছে অর্থ লোপাট ও পক্ষপাতমুলক আচরণ। পাহাড়ে রাজত্ব চলে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের। এখনো থামেনী খুন,অপহরণ,চাঁদাবাজি।

এদাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বছরে প্রায় ১শ কোটি টাকার অধিক চাঁদাবাজি হচ্ছে। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠির অর্থে পরিচালিত প্রায় দেড় শতাধিক এনজিও কর্মকান্ডে নেই কোন স্বচ্ছতা। মানা হচ্ছে না এনজিও কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালা ও নির্দেশনা।

বিভিন্ন প্রকল্প সমভাবে বন্টন না করে বিশেষ একটি গোষ্ঠিকে প্রধান্য দেয়ায় এ অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাভাষা-ভাষীসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিগুলোর মধ্যে জাতিগত বিভেদ ও ক্ষোভ বাড়ছে।

খাগড়াছড়ি জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানাযায়, যে কোন কাচমালসহ জিনিস বিক্রি করতে গেলেই চাঁদা দিতে হয়। আদা,আনারস,আম-লিচু,শাক-সবজি,হাঁস-মুরগী,গরু-ছাগল বিভিন্ন ফলমুল কিছুই বাদ যায় না চাঁদাবাজি থেকে।

একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সব চেয়ে বেশি চাঁদা আদায় হয় বনজ সম্পদ ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে। এছাড়াও রয়েছে যানবাহন,বিভিন্ন টোল কেন্দ্র,বাজার ডাক,ফসলি জমি,জুম চাষ,এমনকি চাকরীজীবিদেরও বার্ষিক চাঁদা দিতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলাচলকারী প্রতিটি যানবাহনের মালিক,ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারকে বার্ষিক চাঁদা দিয়ে পরবর্তী বছরের টোকেন সংগ্রহ করতে হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্তুতু লারমা সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ),এমএন লারমা সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)সহ বেশ কয়েকটি পাহাড়ী সংগঠন এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তাদের ভয়ে সাধারণ জনগণসহ স্থানীয় সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তারাও তটস্থ থাকে। চাঁদা না দিয়ে প্রতিবাদের চেষ্টা করলে জীবন নিয়ে টানাটানির অবস্থা দাঁড়ায়।

পার্বত্য চুক্তির আগে শুধু জেএসএসকে চাঁদা দিলে চলতো। কিন্তু চুক্তির পর সন্তু লারমার জেএসএস-র বিরোধীতা করে পাহাড়ে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্ব গঠিত হয় ইউপিডিএফ। জম্ম হয় ইউপিডিএফ ও মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার সমর্থিত জেএসএস এর স্বশস্ত্র সংগঠন জুম্ম ন্যাশনাল আর্মির। জুম্ম ন্যাশনাল আর্মিকে প্রতিরোধের জন্য সন্তু লারমা গঠন করে সন্ত্রাস দমন কমিটি (সদক)।

এছাড়া জেএসএস ও ইউপিডিএফ ও জেএসএস সংস্কারগ্রুপের রয়েছে পৃথক অংগ সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, যুব ফোরাম স্ব-স্ব দলের অঙ্গ-সংগঠন। চুক্তির পর জেএসএস ও ইউপিডিএফ’র নাম ভাঙিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা অসংখ্য ক্লাব ও সংগঠন।

এরা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠি ও এনজিওর কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করে। চাঁদা না দিলে নীরবে অপহরণের শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। কমেনি উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা অস্ত্রের ঝনঝনানি।

সূত্রমতে, বাস ও ট্টাকের জন্য জেএসএসকে বাৎসরিক নিদিষ্ট হারে ১৫ হাজার থেকে ২০হাজার টাকা ও ইউপিডিএফ-২০ হাজার টাকা, জীপ ১০ হাজার টাকা, সিএনজি সংগঠন প্রতি ৫০হাজার টাকা, টমটম, ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল থেকে প্রতিটি ৩শ টাকা, রিক্সাসহ ব্যবসায়িক কাছ থেকে বছরে টোকেন ৪০-৫০ হাজার টাকা দিতে হয়।

বাঁশ প্রতি হাজার ৮শ থেকে ১হাজার টাকা। উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ক্ষেত্রে জেএসএস ২০% ও ইউপিডিএফ ১৫% রাস্তা সেতু,কালভার্ট ও বিল্ডিং জেএসএস ৩০% ইউপিডিএফ ২০%,কাঠ প্রতিঘন ফুট ১শ টাকা থেকে ৮০টাকা,বিভিন্ন পণ্য ভর্তি ট্টাক হাজার,গরু দেড়শ থেকে ১শ,বাচুর ৮০-৬০ টাকা,ছাগল প্রতি ৮০-৬০টাকা,রাইস মিল ৫০ হাজার টাকা,চিরাই কল প্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা,প্রতি কাঠ বোঝাই ট্টাক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০-১৫ হাজার,জোত পারমিট এর বিষয়ে আলাদা চাঁদা আদায় করা হয়। আনারস,ধান,আম বাগান,লিচু বাগান ও জায়গাক্রয়ের ক্ষেত্রের গুনতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। অন্যদিকে চাষীদের ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে একর প্রতি চাঁদা।

চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিলে পরবর্তীতে অপহরণসহ বড় ধরনের বিপদের পড়তে হবে বলে ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ও চাষীরা স’ানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অগোচরেই গোপনে চাঁদা দিয়ে নিরবে তীলে তীলে জ্বলে মড়ছে পাহাড়ে।

এদিকে ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠি এবং এনজিওগুলো পার্বত্যাঞ্চলে উন্নয়ন পকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও তা সমভাবে বন্টন হচ্ছে না। তা শুধু দেওয়া হচ্ছে উপজাতীয় একটি গোষ্ঠিকে। বলা হচ্ছে ক্ষুদ্র নিগোষ্ঠির এ সমপ্রদায় হত দরিদ্র ও সরকারের সহায়তা বঞ্চিত। বাংলাভাষীসহ ১২টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে বঞ্চিত করে শুধুমাত্র চাকমাদের প্রধান্য দিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন ও লোপাটের অভিযোগ করেছে একাদিক সূত্র।

দূর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ লোপাট হচ্ছে এবং তা দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী শক্তি অস্ত্র কিনছে বলেও অভিযোগ করেছে। এছাড়াও মানবাধিকার কর্মীর অন্তরালে বিভিন্ন সময় বিদেশী নাগরিক ও কুটনীতিকদের আনাগোনা এখনো কমেনী। যাদের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচারণার অভিযোগ রয়েছে।

পাহাড়ে চাঁদাবাজীর বিষয়ে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম,নারায়ন চন্দ্র পাল,মনির ও নজরুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে রাজত্ব চলে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের। তার পরও তাদের দমাতে পারছেনা কেউ। বর্তমান সরকারের আঞ্চলিক সংগঠনের নামে অনিবন্ধত স্বশস্ত্র পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের দমনে প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশ দেওয়ার পর চাপের মুখে সংগঠনগুলো নীরব ভূমিকা পালন করলেও থেমে নেই সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজী।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here