DORP-WaterAid Program Photoআ হ ম ফয়সল: ২০০৬-০৭ অর্থবছরের তুলনায় চলতি বছর নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য আচরণ বিধি খাতে সরকারের বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তা রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বড় বড় মেট্রোপলিটন শহরে অতি উচ্চ মাত্রায় পক্ষপাতমূলক। চলতি অর্থবছরের ঢাকা ওয়াসা ৬৯৫ কোটি থেকে এক হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, খুলনা ওয়াসা ৩৩১ কোটি থেকে ৫২৪ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম ওয়াসা ৬০৪ কোটি থেকে ৭৬৫ কোটি টাকা বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে। যা গ্রাম ও শহরের মধ্যে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য আচরণ বিধি খাতের বৈষম্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করতে পারে।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘স্থানীয় সরকার বাজেট: পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য আচরণবিধি খাতে বরাদ্দ ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা জানানো হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ও ডর‌প যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় ‘জাতীয় বাজেটে পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি খাত: একটি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের প্রধান নীতিনির্ধারক শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য আচরণবিধি খাতে ঢাকা ওয়াসায় ৩৮ দশমিক ৪১ শতাংশ, চট্টগ্রাম ওয়াসায় ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ ও খুলনা ওয়াসায় ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাত্র তিনটি বড় শহরের ওয়াসাকে এখাতে প্রায় ৭০ শতাংশ বাজেট বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। পুরো দেশের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩০ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে হাওড়, চর, পাহাড়ী এলাকা ও গ্রামের প্রত্যন- অঞ্চলে এ  বরাদ্দের পরিমান খুবই নগণ্য।

শামীম আহমেদ আরো বলেন, দেশের জনসাধারণের মধ্যে বেশিরখভাগই গ্রামে বাস করেন। সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য আচরণবিধি পৌঁছে দিতে হলে গ্রাম পর্যায়ে বাজেটে বরাদ্ধের পরিমান আরও বাড়াতে হবে। এজন্য গ্রাম থেকে শুরু করে হাওড়, চর ও পাহাড়ী এলাকাসমূহের জন্য নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা খাতে পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য হ্রাস করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের পানি ও স্যানিটেশন বাজেট পরিবীণ ও বিশ্লেষণ: উপজেলা অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক অপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডরপ এর প্রধান (গবেষণা, মূল্যায়ণ ও পরিবীক্ষণ) মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যহানিজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ ২৯৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। অথচ এ খাতে সরকারের বরাদ্দের পরিমাণ একেবারেই কম। চলতি অর্থবছরের নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য আচরণ বিধি খাতে মোট বরাদ্দ ৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। মাথাপিছু বরাদ্দ ২৬৪ টাকা।

DORP-WaterAid Program Photoযোবায়ের হাসান বলেন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন খাতের বরাদ্দের সবচেয়ে বড় অংশ সরকারের কাছে থেকে আসে। তবে এই বরাদ্দের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌঁছে না। চলতি অর্থবছরের ছয় উপজেলার ২৪টির মধ্যে মাত্র পাঁচটি ইউনিয়নের বরাদ্দ পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাম পর্যায়ে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো সময়ে দাবি।

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জুয়েনা আজিজ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী খালেদা আহসান, অর্থ মন্ত্রণালয়েল যুগ্ন সচিব মো. এখলাসুর রহমান।

ওয়াটারএইডইড বাংলাদেশ দেশীয় প্রতিনিধি ডা. মো. খায়রুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ডর্‌প’র প্রতিষ্ঠাতা ও গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এএইচএম নোমান, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মঞ্জুর হোসেন, সাবেক উদ্ধতন সরকারী কর্মকর্তা মো. আজহার আলী তালুকদার, নিপোর্টের পরিচালক (গবেষণা) রফিকুল ইসলাম সরকার, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. ওয়ালী উল্লাহ, বাংলাদেশ ওয়াস এ্যালায়েন্সের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর অলক কুমার মজুমদার, রামগতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ, পঞ্চগড়ের ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন প্রধান, কুলিয়ার চরের ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান, চাঁদপুরের ইউপি চেয়ারম্যান হারুন-আর-রশিদ প্রমুখ।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, বাংলাদেশ গরীব দেশ হলেও ক্রমান্বয়ে উন্নতি করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের বিষয়টি আগে ছিল না। ১৬ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার  জন্য সরকার এ খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ জন্য ওয়াটারএইড ও ডরপ’র মতো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সাহায্য নেওয়া হবে।

ওয়াটারএইডের দশীয় প্রতিনিধি ডা. খায়রুল ইসলাম বলেন, এদেশের ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে, বাকি ৩০ শতাংশ শহরে। অথচ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন খাতে সবচেয়ে বেশি ৭০ শতাংশ বরাদ্দ শহরবাসীদের জন্য, বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ পুরো দেশের মানুষের জন্য ব্যয় করা হয়। একজন নাগরিক হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রে সাম্যতার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এসব খাতে নেওয়া পদক্ষেপে বৈষম্যে বিষয়টি বেশি পরিলক্ষেত হয়েছে।

ডরপ’র প্রতিষ্ঠাতা ও গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এএইচএম নোমান বলেন, বোতলজাত করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এভাবে বাকি জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন খাতেও বরাদ্দ আশাব্যঞ্জক নয়। দারিদ্র্য বিমোচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে শহর ও গ্রামের বৈষম্য হ্রাস করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here