শব্দদূষণস্টাফ রিপোর্টার :: এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে শব্দদূষণের কারণে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকার মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে।

ঢাকায় শব্দদূষণের মূলে রয়েছে যানবাহন ও হর্নের শব্দ। তবে উচ্চ শব্দে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজানো, টাইলস লাগানো ও ড্রিল মেশিনের কারণেও তীব্র শব্দদূষণ হচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, আলসার ও বিরক্তির মতো রোগের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।

এমনকি গর্ভে থাকা সন্তানও শব্দদূষণে ক্ষতির শিকার হয়। ফলে শিশুদের শ্রবণশক্তি খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ’-ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দ পরিমাপ করে দেখেছে। ঢাকায় নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে গড়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি শব্দ সৃষ্টি হয়।

সংস্থাটির জরিপে দেখা গেছে, উত্তরার শাহজালাল অ্যাভিনিউয়ে শব্দমাত্রা সর্বোচ্চ ৯৩ দশমিক ৫ ডেসিবেল, মিরপুর-১ এ সর্বোচ্চ ৯৬ ডেসিবেল, পল্লবীতে ৯১ দশমিক ৫ ডেসিবেল, ধানমণ্ডি বালক বিদ্যালয়ের সামনে ১০৭ দশমিক ১, ধানমণ্ডি ৫ নম্বর সড়কে ৯৫ দশমিক ৫, নিউমার্কেটের সামনে ১০৪ দশমিক ১, শাহবাগে ৯৭ দশমিক ৩ এবং সচিবালয়ের সামনে সর্বোচ্চ ৮৮ ডেসিবেল।

ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হাসান জানান, বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য শব্দের মাত্রার পাঁচটি ভাগ আছে, এলাকা ভিত্তিতে৷ আর সেই হিসাবে শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হল ৪০ থেকে ৭০ ডেসিবেল৷ আমরা পরীক্ষায় দেখেছি- কোথাও কোথাও শব্দের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রার তিন গুণেরও বেশি।

তিনি বলেন, ঢাকায় সাধারণভাবে যানবাহন ও হর্নের শব্দই শব্দদূষণের মূল কারণ। তবে এর বাইরে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার আরেকটি বড় কারণ।

তিনি আরও বলেন, যদি আমরা ইনডোর শব্দদূষণের দিকটি বিবেচনায় নিই, তা হলে টাইলস লাগানো, মিউজিক সিস্টেমে জোরে গান বাজানো, ড্রিলিং এগুলোর শব্দ রয়েছে।

শব্দদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান ডা. মনি লাল আইচ লিটু বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে- এভাবে শব্দদূষণ অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে।

তিনি বলেন, বয়স্ক ও অসুস্থরা এ শব্দ দূষণের বড় শিকার৷ এ ছাড়া শব্দদূষণের ফলে সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে৷ কারণ শব্দদূষণে মেজাজ খিটখিটে হয়, মনোযোগ নষ্ট হয়৷ শব্দের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৬০ ডেসিবেল, সেখানে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ এলাকায় এখন শব্দের সার্বক্ষণিক গড় মাত্রা ১০০ ডেসিবেল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়া উচিত; বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল, রাতে ৫৫ ডেসিবেল; শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবেল, রাতে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দমাত্রা থাকা উচিত৷ আর হাসপাতাল, সাইলেন্স জোন বা নীরব এলাকায় দিনে ৫০, রাতে ৪০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা থাকা উচিত। সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here