https://www.unitednews24.com/%E0%A6%9B%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%B8%E0%A6%AC/স্টাফ রিপোর্টার :: বাঙ্গালী উৎসব প্রিয় জাতি । ১২ মাসে ১৩ পার্বনের এই দেশে উৎসবের যেন কমতি নেই। বাংলার সেই উৎসব তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে আর একটি নাম-কন্যা উৎসব। ঝালকাঠিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের প্রথম ‘কন্যা উৎসব’।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে দুই দিনের এ উৎসবের উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

ব্যতিক্রমধর্মী এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ঝালকাঠির প্রায় ১০ হাজার নারী অংশ নেন ।

নানা সাজে সজ্জিত নারীরা। পরনে রংবেরঙের শাড়ি, কারো মাথায় ফুল। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করাও ছুটে আসেন। বিকেল ৩টার মধ্যে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় মাঠ। শুধু ঝালকাঠি শহরের মেয়েরাই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত কৃতী নারীরা আসেন উৎসবে।

সেলফি তোলার মধ্যদিয়ে অনেকেই মুহুর্তগুলোকে স্মরণীয় করে রাখেন।

 ্‌ুা্ শহরের গুণি পাঁচ কন্যা জেলা পরিষদের সদস্য শারমিন মৌসুমী কেকা, পৌর কাউন্সিলর নাছিমা কামাল, সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার, শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপী ও জাফরিন ফারজানা শিমুল এই অনুষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা।

উৎসবে পঞ্চকন্যার সঙ্গে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষ।

‘কন্যা উৎসব’ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ঝালকাঠি জেলা পরিষদ সদস্য শারমিন মৌসুমী কেকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার মো. শাহ আলম, পুলিশ সুপার মো. জোবায়েদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, ঝালকাঠির কৃতিকন্যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সালমা নাসরিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. নূরজাহান সরকার, মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মাকসুদা লিমা।

অনুষ্ঠানে রত্নগর্ভা মায়েদের সম্মাননা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ঝালকাঠির কন্যাদের পদক প্রদান, ও সম্ভাবনাময়ী কৃতি কন্যাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

উৎসব নিয়ে ১০ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

‘কন্যা উৎসব’রাত অবদি চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠন। এতে সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। পুরোনো বান্ধবীদের পেয়ে আড্ডায় মেতে ওঠেন কেউ কেউ ।

উৎসবের প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি এ দেশের নারীদের ব্যাপক অবদান ছিল। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে একটি গোষ্ঠী নারীদের পিছিয়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নারীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে আর নারীদের পিছিয়ে রাখা যাবে না। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবদান রাখতে হবে। ঝালকাঠির কন্যা উৎসব সারা দেশের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর মাধ্য দিয়ে নারীসমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

কন্যা উৎসবের উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক শারমিন মৌসুমী কেকা বলেন, কন্যা উৎসব আমাদের একটি স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন হয়েছে।  উপস্থিতি আরও বাড়ত, একটি গোষ্ঠী আমাদের উৎসব নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল। তার পরেও আমরা সফল হয়েছি, কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের রুখতে পারেনি। আমাদের উৎসব এখন জেলার সকল মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে। উৎসব সফল করতে পঞ্চকন্যার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন শেণিপেশার মানুষ।

কন্যা উৎসবে এসেছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সালমা নাসরিন। তিনি বলেন, একটি নারীর প্রথম সত্তা হচ্ছে তার কন্যা সত্তা। বাংলাদেশে এই প্রথম কন্যা সত্তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ঝালকাঠির কন্যা উৎসবের আয়োজকরা। এ উৎসবে আসতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমি ঝালকাঠির একজন মেয়ে, আমাকে কৃতী হিসেবে সম্মাননা জানানো হয়েছে। এটা আমার জীবনের বড় একটি পাওয়া।

ঝালকাঠির আরেক কৃতী কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রধান প্রফেসর ড. নূরজাহান সরকার বলেন, ঢাকা থেকে সাধারণত আমি কাউকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়ি আসি। কিন্তু কন্যা উৎসবের কথা শুনে একাই স্টিমারে উঠে চলে এসেছি। এ ধরনের উৎসব প্রতিবছর হোক, সবখানেই হোক।

‘কন্যা উৎসব’মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী লিমা মনে করেন, দৃষ্টিভঙ্গি বদলের সময় এসেছে। নলছিটি শহরের এই সফল নারী বলেন, ‘কন্যারা আজ সমাজের বোঝা নয়। তারা দেশ পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। আমরা পড়ালেখা করে আজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

যশোর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গুলনাহার বেগম বলেন, কিছু সময়ের জন্য হলেও আমি শৈশবে ফিরে গিয়েছিলাম। আমাদের ডেকে এনে এভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে, এটা কল্পনাও করিনি। যাঁরা সম্মান পাওয়ার যোগ্য তাঁদের যে সম্মান দেওয়া উচিত, এই ভাবনাটা অবশেষে আমাদের জাগ্রত হয়েছে। ধন্যবাদ পঞ্চকন্যাদের।

ঢাকার একটি দূতাবাসে কর্মরত ফারজানা হক বলেন, আমাকে যখন আমন্ত্রণ করা হলো, শুনে আমার সহকর্মীরা অবাক হয়ে বলেন, কন্যা উৎসব আবার কী! এটা দেশের প্রথম উৎসব। আমি এ উৎসবে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

কন্যা উৎসবে এসেছিলেন নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ঝালকাঠির রাজাপুরের কন্যা শারমিন আক্তার।  তিনি বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট সহ্য করে নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়েছিলাম। আমাকে সাহসী কন্যা পুরস্কার দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। এ ধরনের অনুষ্ঠান প্রতিবছর করলে আমরা উৎসাহিত হই।’

বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেয়া বিজয়ী কন্যাদের মাঝে পুরস্কার ও কন্যাক্লাব প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে শেষ হয় উৎসব।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here