লক্ষ্মীপুর থেকে জহিরুল ইসলাম শিবলু : লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ও আগের রাতে নির্বাচন বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত) গত এক মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি। এতে ঐ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকটি শিক্ষা   প্রতিষ্ঠানে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান।

রামগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, গত ৫জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ও তার আগের দিন-রাতে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের তান্ডবে উপজেলার ৫টি মাধ্যমিক ও ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রসত্ম হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশগুলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে হরিশ্চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুনিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও নয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর নুনিয়াপাড়া ও মধ্যে হরিশ্চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ ও ৫ জানুয়ারী দুই দফায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।

গত ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগের দিন ৪ জানুয়ারী শনিবার সন্ধ্যায় রামগঞ্জ থানার কমলতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করার সময় বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন পুলিশ সদস্য ইমান উদ্দিন (৪৮)। ওই রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। ইমানের শরীরের ৩০ শতাংশ ঝলসে গিয়েছিল। তাকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রাখা হয়েছিলে।

মঙ্গলবার রাত সোয়া ১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে লক্ষ্মীপুর পুলিশ বাহিনীতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আবুল ফয়েজ জানান, ইমান উদ্দিন গত ১৩.০৬.২০১৩ ইং তারিখ  থেকে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় কর্মরত ছিলেন, ব্যক্তিগত জীবনে সে অত্যন্ত সৎ, সাহসী ও দড়্গ ছিলেন। লক্ষ্মীপুরের আগে সে ফেনী ও মৌলভী বাজার জেলায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশ বাহিনীতে তিনি ২৯ বৎসর ৭মাস ২দিন দায়িত্ব পালন করেন।

হরিশ্চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধু ভূষণ পাল জানান, নির্বাচনের আগের দিন বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করেছে জামায়া শিবির ও বিএনপির সমর্থকরা।

এতে ওই কক্ষের দরজা-জানালা, আসবাবপত্রসহ মূল্যবান কাগজপত্র পুড়ে গেছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভিষন অসুবিধায় আছি।

নুনিয়াপাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঝুমুর রানী পাল জানান, বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র হওয়ায় দুর্বৃত্তরা পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে। এতে অধিকাংশ বেঞ্চ, আসবাবপত্র, দরজা, জানালা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বর্তমানে আমরা বাধ্য হয়ে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীকে খোলা মাঠে পাঠদান করাতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে এবং শীত ও রোদ্রের প্রভাব ফেলছে।

নয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, আমাদের এ প্রতিষ্ঠানের মতো এত ক্ষয়-ক্ষতি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের হয়নাই। আমাদের যে আধাপাকা ভবনটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে সেটি এখন পর্যন্ত পুনঃ মেরামত করা সম্ভব হয় নাই। বর্তমানে ভবনের মধ্যে পাঠদান কার্যক্রম চালানো অসম্ভব বিধায় আমরা বাধ্য হয়ে মাঠে ও স্কুল আঙ্গিনায় পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি।

এ প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়-ক্ষতি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিড়্গা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। আমাদেরকে ড়্গতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিলেও এখন পর্যনত্ম কোন ড়্গতিপূরণ পাই নাই।

শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলিপ কুমার পাল জানান, নির্বাচনের দিন দুর্বৃত্তরা ভোটকেন্দ্র দখল করে অফিসে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ বিদ্যালয়ের মূল্যবান কাগজপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় তারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বিদ্যালয়ের জানালা ও বেঞ্চ কুপিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিড়্গা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। এর প্রেক্ষিতে সংস্কারের জন্য একটি বরাদ্দ আসার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত বরাদ্ধ আমরা পাইনি।

এ ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নবীর উদ্দিন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর তালিকা করে সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কাজে হাত দেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here