হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা গ্রামে নারী সংক্রান- ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে দু;পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, লুটপাট, শতাধীক কাচা-পাকা বাড়ি-ঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলা ও সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন। আহত ১০জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের নবীগঞ্জ ও ইনাতগঞ্জে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
স’ানীয় সূত্রে জানা যায়,গত ৪ সেপ্টেম্বর কসবা গ্রামের শামীম আহমেদের মেয়ে ৭ম শ্রেণীর মাদ্রাসা ছাত্রী সাইমা বেগম (১৪)কে একই গ্রামের আইনুল মিয়া(২০) অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ সাইমাকে আইনুলের খালার বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার সারপাড়া গ্রাম থেকে উদ্ধার ও আইনুলকে গ্রেফতার করে। এই ঘটনার জের ধরে গ্রামবাসী দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। গ্রামের পঞ্চায়েত পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন ফারুক মিয়া,লুৎফুর মিয়াগং ও অন্য পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন স্বপন মিয়া,ফজলুল হকগং। এ নিয়ে গ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষ,হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে উভয় পক্ষকে নিয়ে এক শালিস বৈঠক বসে। বৈঠকে স’ানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়াসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপসি’ত ছিলেন। কিছু দিন শান- থাকলেও আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দু’পক্ষ। সংঘর্ষতো নয়,যেন অসি-ত্বের প্রশ্ন। পঞ্চায়েত পক্ষের দাবী এ যেন স্বাধীন হওয়ার লড়াই। গত ৩দিন ধরে দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্র তৈরী করে রণসাজে সজ্জিত হয় খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ সংঘর্ষ এড়াতে গত শুক্রবার রাতে ৩জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন,ফারুক আহমেদ(৩৮),লুৎফুর রহমান(৩৪),শামীম আহমেদ(৩৫)।
সকাল সাড়ে ৮টার সময় গ্রামের পূর্ব মাঠে উভয় পক্ষের শত শত লোক দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রায় আধা ঘন্টা সংঘর্ষ চলাকালীন সময় পঞ্চায়েত পক্ষ মাইকে ঘোষণা দিলে তাদের পক্ষের প্রায় শত শত লোক সংঘর্ষ স’লে ছুটে আসলে স্বপনগংরা সংঘর্ষে টিকে থাকতে না পেরে যে যেদিকে পারে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় পঞ্চায়েত ফারুক পক্ষের লোকজন পুরুষশুন্য বাড়িতে হামলা চালায়। তারা প্রায় শতাধীক পাকা ও কাচা বাড়িঘর ভাংচুর ও টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার লট করে নিয়ে যায়। বাড়িঘর ভাংচুরের ক্ষতির পরিমান প্রায় কোটি টাকা হবে ধারণা করা হচ্ছে। নগদ টাকা ও স্বণালংকার লুটের পরিমান প্রায় অর্ধকোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যেক বাড়ি ঘরের ভেতরের ষ্টিল আলমীরা,সোকেস,টিভি,ফ্রিজ,কাচের আসবাবপত্র,ইলেক্টিক বাল্ব,ফ্যান বিছানাপত্র মোটরসাইকেল ছেলে মেয়েদের স্কুলের বইপত্রসহ এমন কোন জিনিষ নেই যে ভাংচুর করা হয়নি। প্রায় ৩ঘন্টাব্যাপি তাদের ভাংচুরের তান্ডব চলে। হামলা চলাকালীন সময় তাদের দাড়ালো দা ও অস্ত্রের আঘাতে গরুতর আহত হন প্রায় (৩০)জন। তারা দিলবার নামে এক যুবককে গাছের সাথে বেধে পিটিয়েছে। হামলা থেকে রেহাই পায়নি মহিলাসহ যুবতী মেয়েরা। এর পরই প্রতিটি বাড়ি পুরুষশুন্য হয়ে যায়। কোন কোন বাড়ির মহিলা শিশু সন-ান যুবতী মেয়েদের নিয়ে দেড়ৈে পালাতে দেখা যায়। এসব হামলা চলাকালীন সময় পুলিশ ঘটনা স’লে উপসি’ত থাকলেও নীরব দর্শকের মত ভূমিকা পালন করেছে। এসব হামলা,লুটপাট ও ভাংচুর মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে ও হার মানিয়েছে। যাদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে তারা হলেন,মৃত লিপাই উল্লার ছেলে ফজলুল হক,স্বপন মিয়া,পর্তাব উল্লা,হেকিম উল্লা,মাছুম উল্লা,মতুল্লা মিয়া,সুধীর মিয়া,আনফর উল্লা,জাফর উল্লা,আলী হোসেন,খালেদ মিয়া,আব্দুল আজিজ,হাকিম উল্লা,আলা উদ্দিন,সিরাজ মিয়া,মসু মিয়া,আপ্তাব আলী,খরি মিয়া,আছাব উদ্দিন,হোসেন মিয়া,সানুর মিয়া,তেরাপর,বাকুল মিয়া,আয়াছ উদ্দিন,তাজ উদ্দিন,জিয়াউল হক,সায়েদ আলী, আজিজুল হক,আক্কা মিয়া,আঃ রহিম,এলকাছুর রহমান,মহিম আহমেদ,নুর উদ্দিনসহ আরো অনেকের।
আহতরা হলেন,খালেদ মিয়া(৫৮),সিরাজ মিয়া(৫৫),আব্দুল আজিজ(৪৫),সানুরমিয়া(৩৮),গুলসান(২৫),দিলা হোসেন(২৮),সাজিদ(৩০),আনফর(৩৭),সফিকন্নুর(৪৫),জুনু মিয়া (২০),সামি উল্লা(৩৪),নুর উদ্দিন(৪৪)। তাদেরকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হবিগঞ্জের এ এসপি এইচ এম সিরাজুল হুদা ঘটনা স’ল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মোঃ আলমগীর মিয়া, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)