আশরাফুল ইসলাম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোরবানির পশু হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকা ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট বটতলা হাটে গত শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির পশুতে হাট পরিপূর্ণ। এমনকি আশপাশের সড়কেও গিয়ে ঠেকেছে পশুর হাটের কার্যক্রম।

chapainawabganj hat pic 01হাট ঘুরে দেখা যায়, দেশীয় গরুর আধিক্যই বেশি, দাম তুলনামুলক এবছর বেশি হলেও ক্রেতাদের পছন্দও দেশী গরু। অন্যদিকে হাটে ভালো দাম পেয়ে খুশি দেশি গরুর মালিকরা।

শুধু বটতলা হাট নয় জেলার প্রতিটি হাটেই পছন্দের কোরবানির পশু কিনতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। দাম যায় হোক শেষ পর্যন্ত পছন্দের পশুটি কিনে বাড়ি ফিরছেন অনেক ক্রেতা, আবার অনেকেই দাম বেশির কারনে আগামী হাট পর্যন্ত অপেক্ষার করার চিন্তা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বটতলা হাটে গিয়ে দেখা,পছন্দের পশুটি কিনতে এদিন অনেকেই এসেছিলেন হাটে, কেউ একাই এসেছেন, কেউ এসেছেন দলবেঁধে। যেন তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এ হাটটিতে। আর ক্রেতা বিক্রেতাদের এই উপস্থিতি যেন ঈদ উৎসবেরই অংশ।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবছর গরু ও খাসির (ছাগলের) দাম গত বছরের চেয়ে প্রায় দিগুন। পশুর উচ্চ মূল্যের কারণে অনেক ক্রেতাই কিছুটা হতাশ।
আলিনগর এলাকার জাফর আলী জানান, গতবছর থেকে বেড়ে যাওয়া গরুর দাম এবছর আরো বেড়েছে, গতবার একটা মাঝারি গরু ৩৫-৪০ হাজার টাকায় কিনেছেন এবছর সেই গরু কেনার জন্য তারা ৫০ হাজার টাকা বাজেট করে হাটে এসেছেন। তিনি বলেন, দেখছি এই হাটে কিনতে পারলে ভালো না হয়, পরের হাটের জন্য অপেক্ষা করব।

হাটে গরু কিনতে আসা, সংবাদ পত্র এজেন্ট আব্দুল কাদেরের সাথে কথা নয়, তিনি জানালেন,৫৫-৬০ হাজারের এর মধ্যে তারা গরু কেনার জন্য বাজেট নিয়ে হাটে এসেছেন। কয়েক ঘন্টা ধরে ঘুরছি সন্ধ্যা হতে চলল, এখন মানান মত গরু পায়নি।

স্বরুপনগর গ্রামের, রুহুল আমিন ৪১ হাজার টাকায় একটা গরম্ন কিনে বাড়ি ফিরছেন, তিনি জানালেন এবার গরুর দাম অনেকটা বেশি হলেও যাক ভালো লাগছে, বাজেটের মধ্যেই পছন্দের গরুটা কিনতে পেরেছি।

এদিকে হাটে ভারতীয় গরম্ন না নামায় দেশীয় গরুর মালিকরা বেশ ভালোই দাম পাচ্ছেন, নামোসংকরবাটির মজিবুর রহমান নামে একজন জানান, এবছর বাড়িতে ২টি গরু লালনপালন করেছিলাম, তার মধ্যে একটা বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে গেছে ৫৫ হাজার টাকায়, আর একটা আজ হাটে নিয়ে এসেছি। এবছর গরুর দামে তিনি খুশি, তিনি বলেন গরুর খাবারের দাম অনেক বেশি, তারপরও কিছুটা লাভের মুখ দেখব।

আব্দুল মতিন নামে আরেক জন জানালেন, তার বাড়ি বটতলা হাটের পাশেই, নিজের বাড়িতে লালন পালন করা গরু বিক্রি করতে হাটে নিয়ে এসেছেন, তিনি জানালেন ৪৮ হাজার টাকা হলে তিনি গরুটি বিক্রি করবেন।

বটতলা হাট ঘুরে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর কোরবানির পশু কিনছেন অনেকেই। হাফিজ নামে একজন জানান, তিনি ঢাকার গাবতলীতে গরু পাঠানোর কাজ করেন। তিনি জানান, গরুর চাহিদা আছে তাই হাটে হাটে ঘুরে গরু কিনছি। তিনি যোগ করেন, এবছর ভারতীয় গরু খুবই কম আসছে।

বটতলা হাট ঘুরে দেখা যায়, ছোট সাইজের গরু ৩৫-৪০ হাজার, তার চেয়ে একটু বড় গরুর দাম ৪৭-৫২হাজার টাকা মধ্যে, মাঝারী সাইজের গরম্ন ৬০-৭০ হাজার, আর বড় সাইজের গরু ৭৫ থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খাশি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৮ হাজার থেকে, তবে একটি মাঝারী সাইজের খাসি নিতে চাইলে ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা গুনতে হবে। এছাড়াও বড় সাইজের খাসি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ হাজার টাকায়, কোন কোন বিক্রেতা দাম হাকছেন ৫০ হাজার টাকাও।
এদিকে হাট গুলোতে জাল টাকা সনাক্ত করনের জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চেয়ার টেবিল পেতে কাজ করতে দেখা গেছে, তবে তাদের সেবা নিচ্ছেন খুব কম সংখ্যক মানুষ। এছাড়াও সদর উপজেলা প্রানী সম্পদ কার্যালয়ের পশু চিকিৎসকদেরও দ্বায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এছাড়াও কেনাবেচা নিবিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতাও ছিল লক্ষ্যনীয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here