দু‘হাতই কেটে ফেলা হয়েছে মেধাবি কলেজ ছাত্র সিয়ামেরখোরশেদ আলম বাবুল, শরীয়তপুর প্রতিনিধি:: শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা বিঝারী ইউনিয়নের উত্তর বিঝারী জামে মসজিদের পাশে গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় কাল বৈশাখী ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়ে। সাথে সাথেই এলাকাবাসী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন সহ ছিড়ে পরা তার মেরামতের অনুরোধ জানায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ ও অনুরোধ কর্ণপাত না করে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। পরের দিন জোহরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেড় হয়ে সিয়াম ছিড়ে পড়া বিদ্যুতের তারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই ওই ছেড়া তার সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে। সাথে সাথেই ক্ষতবিক্ষত হয়ে পাশের ডোবায় পড়ে যায় সিয়াম।

এরপর এলাকাবাসী সিয়ামকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। ২৫ দিন ধরে মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে সিয়াম। হাতে পচঁন ধরায় চিকিৎসক একে একে সিয়ামের দুটি হাতই কব্জি এবং কুনুই পর্যন্ত কেটে ফেলেছেন।

হাসপাতালের ওয়ার্ডে বেড না পেয়ে সিয়াম ফ্লোরে ঠাঁই নিয়েছে। কাউকে দেখলেই সিয়াম হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলে আর বিলাপ করে বলে পল্লী বিদ্যুৎ তার স্বপ্ন পূরণে বাঁধা হয়েছে।

গত ১২ এপ্রিল প্রথমে সিয়ামের বাম হাত এবং ১৬ এপ্রিল ডান হাত কেটে ফেলা হয়। মেরুদন্ডেও আঘাত রয়েছে সিয়ামের। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন সিয়ামের শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ্য না হলে এবং শরীর থেকে ঘাটতি হওয়া শক্তি ফিরে না আসলে কোন অবস্থাতেই মেরুদন্ডে অস্ত্রপচার সম্ভব হবে না। কিন্তু, ভয় থেকে গছে সেখানেই, এরই মধ্যে আবার না হয় মেরুদন্ডের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে সংক্রমিত হয়ে পরে। তাই সিয়ামকে বাঁচিয়ে রাখতে জরুরী ভিত্তিতে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ কর্তব্যরত চিকিসকদের।

শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা আর গাফলতির কারনে ঝড়ে ছিড়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার শরীরে জড়িয়ে মারাত্মক রকমের আহত হয়েছে নড়িয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেনির ছাত্র সিয়াম। তার বাবা ফারুখ খান একজন জাহাজ শ্রমিক।

পিতার দারিদ্র দশার কারনে নিজের পড়ার খরচ টিউশনি করে নিজেই জোগার করতো সিয়াম। এতবড় দূর্ঘটনায় মা বাবা সিয়ামের চিকিৎসা করতে এতদিনে শুধু বসত ভিটা ছারা বাকি সব টুকু সহায় সম্পদ বিক্রি করে দেড় লাখেরও বেশী টাকা খরচ করেছেন। এখন দরিদ্র মেধাবী কিশোরের চিকিৎসা চালিয়ে নিতে সরকারি বা সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেছেন সিয়ামের পরিবার।

সিয়ামের বন্ধু সোহান ও আল আমিন জানান, সিয়াম খুব মেধাবী ও পরিশ্রমি ছাত্র। ওর বাবা পড়ার খরচ জোগাতে না পারায় দিনে তিন চার বার টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ জোগাতো সিয়াম। বড় হয়ে চাকুরী করার আশা ছিল ওর । কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে আজ ওর দুটি হাত কাটা পরলো। আমরা পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের যথাযথ বিচার দাবি করছি। আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ সিয়ামকে যেন সরকারি খরচে বাকি চিকিৎসা ও লেখা পড়ার দায়িত্ব খরচ সরবরাহ করা হয়।

উত্তর বিঝারী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান ঢালী বলেন, ৫ এপ্রিল সন্ধ্যার একটু আগে  তুফান এসে একটি মরা শিশুগানি গাছ বিদ্যুতের তার নিয়ে মাটিতে পরে যায়। আমি সন্ধ্যা ৭ টা ১৪ মিনিটের সময় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে লাইনটি মেরামত না করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন চালু না করার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে ৬ তারিখ দুপুরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন চালু করে।  ওই দিন জোহরের নামাজ শেষে সিয়াম ছিড়ে পরা তারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জড়িয়ে যায়। আমরা ওকে অজ্ঞান  ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতলে নিয়ে যাই।

হাসপাতালে সিয়ামের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার ছেলের চিকিৎসা করেত এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ওর বাবা খুলনায় একটি জাহাজে শ্রমিকের কাজ করে। আমার ছেলে সুস্থ্যতার জন্য আমি দেশের মানুষের দোয়া ও সহায়তা কামনা করছি। আর যাদের গাফলতির কারনে সিয়ামের আজ এ অবস্থা তাদের শাস্তি চাই।

নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল খালেক বলেন, সিয়াম আমার কলেজের একাদশ শ্রেনীর একজন দরিদ্র মেধাবী ছাত্র। ওর চিকিৎসার জন্য আমরা কলেজ তহবিল থেকে যথাসম্ভব আর্থিক সহায়তা প্রদান করবো। পাশাপাশি আমি এলাকার দানশীল ও বিত্তবানদের অনুরোধ করবো তারা যেন সিয়ামের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

শরীয়তপুর জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহা ব্যবস্থাপক  মো. সোহরাব আলী বিশ্বাস বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কারনে ইতিমধ্যে কোম্পানীর দুইজন স্টাফকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার সাথে জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমি সিয়ামের চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছি।

কিন্তু সিয়ামের পরিবারের দাবি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বা অপর কারো কাছ থেকেই সিয়ামের চিকিৎসার জন্য কোন আর্থিক সহায়তা পায়নি তারা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here