দুগ্ধ খামার করে রাবেয়া এখন স্বাবলম্বীজহিরুল ইসলাম শিবলু,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় দুগ্ধ খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মেধাবী সুশিক্ষিতা রাবেয়া। বর্তমানে তার খামারে বিদেশি উন্নত জাতের ২০টি গাভী ও ৫০টি ছাগল রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪০/৪৫ লাখ টাকা। যা থেকে তাদের যাবতীয় খরচ মিটিয়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা করে বছরে প্রায় ৫/৬ লাখ টাকা আয় হয়।

রাবেয়া দুগ্ধ খামারের পাশাপাশি তার শশুরের ৩.৫ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন একটি মৎস্য ঘেরও। মৎস্য ঘেরের পুকুরের পাড়ে পেঁপে গাছ, কলা গাছের বাগান করে রাবেয়া ও তার স্বামী রফিকের আর্থিক স্বঞ্চলতা ও সংসারে শান্তি এবং নতুন আয়ের সঞ্চার করেছে।

রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের স্বামী রফিকের সহযোগিতায় তার স্ত্রী রাবেয়া নিজের চেষ্টা, উদ্যোগ আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন দুগ্ধ খামার। আর খামারের কাজ করে এখন ওই এলাকার ৩০/৩৫ টি সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা।

রাবেয়ার স্বামী রফিকের ২ ভাই ও তিন বোনের সংসারে রফিক সবার ছোট। মা-বাবার ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া শিখে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে চাকরি করবে। কিন্তু ইংলিশে অনার্স মাষ্টার্স পাশ করে লেখাপড়ার সমাপ্তি টেনে চাকরি না পেয়ে দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর স্থানীয় একজন ব্যক্তির পরামর্শে ইছাপুরের মাওয়ালা ইলিয়াছের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে ২মাস মেয়াদি গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন, মৎস্য চাষ, কৃষি ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ শেষে সে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য স্থানীয় এক সাংবাদিকের কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা ধার হিসাবে গ্রহণ করেন। সেই টাকা দিয়ে খামারের ভিত্তি স্থাপন করে তার বাবার ফেনশনের কিছু টাকা থেকে ২টি গরু ও ২টি ছাগল ক্রয় করেন। পাশাপাশি মাছের ঘেরে ১৬ হাজার টাকার মাছের পোনা ছাড়েন।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মাছগুলো একটু বড় হলে একদিন রাতের অন্ধকারে প্রতিহিংসায়একই বাড়ির একদল দর্বৃত্ত মাছগুলো লুট করে নিয়ে যায় এবং একটি গরু মেরে পেলে। এতে আর্থিক অভাবে খামারটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়লে পাশে এসে দাড়ায় তার সুশিক্ষিতা স্ত্রী রাবেয়া আক্তার বীথি। দুগ্ধ খামারের দায় দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়ে উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে রেজিষ্টেশন নিয়ে হেল্প লাইন কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে একটি মাল্টি ফারপাস করে এফডি আরের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেন রফিক। সেই টাকা আর পরিবার থেকে কিছু অর্থ বিনিয়োগ করে গড়ে তোলেন একটি বাণিজ্যিক দুগ্ধ খামার। স্ত্রী রাবেয়া বেগমের কঠোর পরিশ্রম ও মনোবলের কারনে ক্রমান্বয়ে খামারের পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে দুগ্ধ খামারের দায় দায়িত্বে রাবেয়া আক্তার বীথি আর মাল্টি পারপাস কো-অপারেটি সোসাইটির দায়িত্বে স্বামী রফিক উল্যা।

গরুর খামারের গোবর ব্যবহার করে রাবেয়া একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট গড়ে তলার চিন্তা করছেন। যা দ্বারা তার পরিবারসহ এলাকার অনেকের রান্নার কাজ চলবে। বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের বর্জ্য স্থানীয়ভাবে জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। রাবেয়া ও তার স্বামীর সকল কর্মকান্ডে তাদেরকে পাশে থেকে সহযোগিতা করছেন রাবেয়ার শশুর মাওলানা আলী আহমেদ, শাশুড়ী রৌশন আরা বেগম ও ননদ হাসিনা আক্তার। আর এই সমন্বিত খামারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নারী-পুরুষ মিলে ৩৫ জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

রাবেয়া আক্তার জানান, সে বি. এ. পাশ করে এবং তার স্বামী এম এ পাশ করে চাকরির জন্য অপেক্ষা করে অভাবের সংসারে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। পরে স্থানীয় এক সাংবাদিকের পরামর্শ ও তার দেয়া আর্থিক সাহায্য আর পরিবার থেকে কিছু অর্থ বিনিয়োগ করে গড়ে তুলি একটি বাণিজ্যিক দুগ্ধ খামার। আর এভাবেই আমাদের অভাব দূর হয়ে বর্তমানে আমরা স্বাবলম্বী।

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক জানান, রাবেয়া বেগম ও রফিকের সফল উদ্যোগী কর্মকান্ডে আমরা খুশি। সরকার এই ধরনের কাজের জন্য বাজেটে অনেক বরাদ্ধ রেখেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সকল সহযোগিতা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here