বাজেট উচ্চ ভিলাসী নয় বরং দৃঢ় সংকল্পের উন্নয়ন বিলাসী। মুক্তি ও স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বৃহৎ রাজনৈতিক দলের জন্য এই বাজেট অবশ্যি মানানসই ও সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। তবে সকল দলের গ্রহণীয়তা বা সমালোচনা যদি আমলে আনা হয়, তাহলে বাস্তবায়নের জন্য সফলতা বয়ে আনবে। বর্তমান সরকারের সঙ্গে জনগণ আসবে ও আরো থাকবে। দূর্নীতি, সহিংস রাজনীতি, সন্ত্রাস ইত্যাদি প্রধান হুমকি। বাজেট ব্যবসায়ী ও অবকাঠামো উন্নয়ন তথা ধনী ও তাদের সমর্থকদের আরো ধনী ও সুবিধার যায়গায় নিয়ে যাবে। বাজেট গরীব কূলের নিরাপত্তা জাল সমর্থন বাড়ালেও তা তুলনামূলকভাবে বৈষম্য কমানোর জন্য মাত্রও পর্যাপ্ত নয় ও ন্যায্যতার নয়।
হয়ত বাজেটকে এভাবে বলা যায় ‘রুটি তৈরী আগে, ভাগ-বন্টন পরে’। বিপরীতে বৈষম্য ও সুষম বন্টন ব্যবস’া ঠিক করতে হলে রুটি বানানোর পূর্বেই বাস্তবসম্মত বন্টন-হিস্যা ঠিক করতে হয়। এ বছরের বাজেটে এর প্রতিফলন না ঘটলেও ভবিষ্যতে নজর দিতে হবে। যেমন মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকার পরিমান ও সংখ্যা বাড়িয়েছে তা চাহিদার ও সাম্যতার হিসাবে কম।
গত ৪ বছরে পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে দারিদ্র্য বিমোচন উপ-শিরোনামে মাতৃত্বকালীন ভাতা সফলতার তালিকায় ৩৪৮-৩৪৯ ক্রমিকে বাজেট তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তার পরেও ধনী গরীব বিভেদ কমানোর দৌড়ে, বৈষম্য থেকেই যায়। বরং রাষ্ট্র যন্ত্র ও ধন-ভোগকারী চতুর্মূখী সমর্থক শক্তি, বৈষম্য গ্রহণযোগ্যতাকে, আরো এগিয়ে দেয়। চলতি সামাজিক ব্যবস্থায় লালিতও হয়।
সাম্যতা ও অধিকারকে নিশ্চিত করার জন্য নাগরিক সমাজের কাছে ন্যায্যতা ‘কনসেশন’র দৃষ্টিতে পাকাপোক্তভাবে স্থাপিত হয়। রাষ্ট্র-সমাজ ধনীকদের জন্য শ্রমিক মালিক দরকষাকষির বাজার সৃষ্টি হয়। কল্যাণ ও ছাড় দেয়ার খোলসে সবই গা-সোয়া হয়ে যায়। যেমনটি ঘটছে পোষাক শিল্পে। কল্যাণের নামে শ্রমিক মালিক সম্পর্ক, যার অপর নাম শোষক ও শোষিত। যা জেএসপি রশি দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে মার্কিন দেশের অভিবাকত্বের ভূমিকা আমাদেরকে হজম করতে হচ্ছে।
ধনীদের সুপারটেক্স, জেলা বাজেট, বাড়ী ভাড়া ব্যাংকিং মাধ্যমে কর, গরীবদের তালিকা তৈরী লক্ষ্যে ডাটা বেইজ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, বিকেন্দ্রীকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য খুবই সহায়ক, দূর দৃষ্টি সম্পন্ন উদ্যোগ। তবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজনৈতিক দৃঢ়তা বহাল রাখতে হবে। নয় হাত শাড়ী দিয়ে, ঘরের বউ শাড়ী পরতে জানেনা, এ কথা বললে হবেনা, শাড়ী দশ হাতই দিতে হবে। তাহলেই বুঝা যাবে বউ শাড়ী পরতে পারে কি না।
বছরকে বছর আমরা আকাশের তারা গুনতে পারিনা, তাই আমাদেরকে অবশ্যি নির্বাচিত লক্ষ্য ও একটা বটম লাইন ঠিক করতে হবে। বটম লাইন হবে ‘মা’ এবং গরীব প্রথম মা। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে যেখান থেকে আমরা বিশ বছর এক প্রজন্ম মেয়াদী দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে ‘মা’ কেন্দ্রীক, ১. পুষ্টি, পানি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য ২. শিক্ষা বিনোদন ৩. আবাসন-সেনিটেশন ৪. জীবিকায়ন কর্মসংস্থান ৫. সঞ্চয় ও প্রয়োজনে উন্নয়ন ঋণসহ সমন্বিত ‘স্বপ্ন’ প্যাকেজ সূত্রপাত করতে হবে।
সরকারকে অভিনন্দন ২০১৪-১৫ বাজেটে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় আওতায় পাইলট আকারে প্রায় ৬ কোটি টাকায় সীমিত বাজেটে ‘স্বপ্ন’র বাস্তবায়ন উদ্যোগ, তৃণমূলের বাজেট ট্র্যাকিং সংগঠন ‘ডর্প’সহ শুরু করতে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে এটা মাইল ফলক হিসাবে সরকারের সদিচ্ছায় ঐতিহাসিক পথ-রচনা তৈরী হবে। সাহস ও স্বনির্ভর চেতনার প্রতীক, যেমন নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ হতে যাচ্ছে যার জন্য, আট হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ। অপর পক্ষে সূদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হবে ১২.৪ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তা জাল বেষ্টনীতে আছে ৬.১% শতাংশ, ব্যবসা ব্যয় হ্রাসে প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার বরাদ্দ, জন প্রশাসন ১৫.৩ যোগাযোগ ও পরিবহন ৯.৮ এরকম প্রণোদনাসহ আরো কিছু খাত আছে যাও এ সকল শ্রেণীর নিরাপত্তার জন্যই।
এসবের পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচনে অর্থাৎ মানব সম্পদ বিনির্মানের জন্য, বছরে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ বরাদ্দ রাখতে পারা কি বেশী? প্রয়োজন ‘এক মা এক লাখ টাকা’ মাত্র। প্রয়োজন, পদ্মা সেতুর মত সাহসি রাষ্ট্রনায়কত্ব সিদ্ধান্ত যা শেখ হাসিনাই দেখিয়েছেন এবং তিনিই পারবেন। এবারের বাজেটে আমরা একটা স্বপ্ন দেখা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ রচনায় অর্থনৈতিক মুক্তির সোনার বাংলার পূনঃর্বিভাব ও ভিত্তি ঘটবে বলে দৃঢ় আশাবাদী।
এ প্রেক্ষিতে বিশাল অবকাঠামো নির্মান ও উন্নয়ন পরিকল্পনার উদাহরন ‘পদ্মা-সেতু’ পাশাপাশি, গরীব মা কেন্দ্রীক দীর্ঘ মেয়াদী মানব সম্পদ উন্নয়ন কাঠামো ‘স্বপ্ন-সেতু’ বিনির্মানে প্রধান মন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচন অথরিটি প্রতিষ্ঠার আবেদন জানাই। একইসঙ্গে অনুশীলনকৃত তথ্য উপাত্তে প্রমাণিত, ‘পাবলিক পুয়র প্রাইভেট পার্টনারশীপ’ (পিপিপিপি) ব্যবস্থা চালু করি। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে মৌলিক অধিকার-সোচ্চার ‘মা-সংসদ’ প্লাটফরম গঠন করে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মানের পথ রচনা করি।
লেখক: এএইচএম নোমান, উন্নয়ন সংগঠক এবং গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরষ্কার লরিয়েট, ইমেইল: nouman@dorpbd.org