তিস্তা এখন পানি শূন্য: হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্যআসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: তিস্তা নদী বর্ষা কালে দু’কূল ভাসিয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। পানির হিংশ্র থাবায় প্রতি বছর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় শত শত বসত-বাড়ি আর ফসলি জমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তিস্তার বন্যায় চলতি বছরের পানির চাপে শুধু লালমনিরহাট জেলায় সরকারী হিসাবে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ শত কোটি টাকার সম্পদ।

সেই তিস্তা নদীতে এখন পানির দেখা নেই। শীত যেতে না যেতেই শুকিয়ে মরুভূমিতে হয়ে গেছে। খেয়া পাড়ে বা মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে মাঝি মাল্লাদের দৌঁড়-ঝাঁপ থেমে গেছে। পানি ও মাছ ভর্তি তিস্তা নদীর বুকে এখন জেগে উঠেছে বালুর ধু ধু চর।

জমি জেগে উঠলেও সেচের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। কেউ কেউ শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে তাদের ফসল। মাছ ধরতে না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নদী পাড়ের জেলে পরিবারগুলো। নৌকা নয় পায়ে হেঁটেই তিস্তা পাড়ি দিচ্ছে নদী পাড়ের মানুষজন।

জানা যায়, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ঐতিহাসিক এ তিস্তা নদী। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রক্ষপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে এ নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।

তিস্তা এখন পানি শূন্য: হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্যভারতের গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে সেই দেশের সরকার এক তরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীতেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেল সেতু, তিস্তা সড়ক সেতু ও নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু যেন প্রহসন মূলকভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধু-ধু বালুচরের তিস্তার উপর। সেতু থাকলেও পায়ে হেঁটেই পার হচ্ছে অনেকেই। ঢেউহীন তিস্তায় রয়েছে শুধু বালুর চর আর চর। তিস্তা নদীতে মাছ আহরণ করে শুটকি ও মাছ বিক্রি করে জীবনযাপন করতেন এ অঞ্চলের জেলেরা। তারাও আজ কর্মহীন হয়ে মানবেতরজীবনযাপন করছেন। এছাড়ও মাঝি-মাল্লারাও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

তিস্তার মহিপুর খেয়াঘাটের মাঝি সাদেকুল ইসলাম বলেন, পানি নাই নৌকা কোথায় চালাই, সবাই পায়ে হেঁটেই পার হচ্ছে তিস্তা নদী।

তিস্তা পাড়ের জেলে দেবাবু, সালাম, মহাসিন জানান, পানি না থাকায় তিস্তা নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে পেশা পরিবর্তন করে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তারা। এ ছাড়া পানির অভাবে চরের অনেক ফসল মরে যাচ্ছে

তিস্তা সেচ প্রকল্প ও ব্যারাজের দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রয়োজনের তুলনায় তিস্তা নদীতে এখন পানি প্রবাহ অনেক কম। ফলে এ বছর সেচ প্রকল্প সচল রাখা কষ্টকর হতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here