তিস্তার বালু চরে স্বপ্ন দেখতে শুরু আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী লোকজন নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে জমি ও বসত-বাড়ি হারিয়ে পথে বসেছে। বাঁধের পাশে, রেল পথের ধারে ঝুপড়ি ঘর করে আশ্রয় নিয়ে ওরা জীবন কাটাচ্ছে। আবার অনেকেই বালু চরের উপর আশ্রয় নিয়ে জীবন যুদ্ধে নেমেছে। তারা তিস্তা ও ধরলা নদী বুকে জেগে উঠা ধু ধু বালু চরে পিট পদ্ধাতিতে ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

তদের দৃষ্টি ভঙ্গিটা এমন, কিছুই না হওয়ার চেয়ে অন্তত কিছু হোক সেটাই তো ভালো। সেই লক্ষ্য নিয়ে গবেষনার ভিত্তিতে কৃষি উৎপাদন ও ভূমিহীন কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নকে সামনে রেখে কৃষি অধিদপ্তর কাজ শুরু করেন। আর শুরুতেই অনাবাদি ও পড়ে থাকা ধু ধু বালুচরে পিট পদ্ধতিতে মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও শসা চাষে মিলেছে সফলতা।

সড়ে জমিনে তিস্তা নদীর চর এলাকা গুলো ঘুরে দেখা যায়, এক সময় তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হওয়া পরিবার গুলো জেগে ওঠা চরে মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও শসা চাষ করে আবারও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এখন। তারা অনেকটা সফলতাও পেয়েছেন। এখন তাদের সংসারে আগের মত অভাব অনটন নাই বললেই চলে। সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা।

হাতীবান্ধা উপজেলার চর সির্ন্দুনা গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন জানান, তিস্তার বালুচরে পিট পদ্ধতিতে মিষ্টি কুমড়া ও লাউ চাষে সফলতা পেয়েছে।

প্রথমত পিট পদ্ধতি সম্পর্কে ধারনা ছিলো না। কৃষি অফিসের পরার্মশ মতে, বালুর মধ্যে গভীর গর্ত করে অন্যস্থান থেকে কাদা মাটি নিয়ে এসে ওই কাঁদা মাটির সাথে গোবর সার ও রাসায়নিক সার একসঙ্গে মিশ্রিত করে গর্তটি ভরাট করে ওই গর্তে বীজ রোপন করা হয়। আর এটাকেই পিট পদ্ধতি বলে।

ওই এলাকার কৃষক সাফিয়ার রহমান জানান, গত ৩ বছর আগে কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে প্রথমত পিট পদ্ধতিতে তিস্তা চরে ফসল চাষাবাদের ধারণা পান। সে বছরেই সফলতা পাওয়ায় মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও শসা চাষে আগ্রহ বাড়তে থাকে। বিঘা প্রতি কত টাকা খরচে এ ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব সেটার সঠিক হিসাব দেয়া সম্ভব না হলেও সেখানে কিছুই উৎপাদন হয় না, সেই জমিতে বিশেষ পদ্ধতি কিছু উৎপাদন করা এদিকে যেমন লাভজনক অন্যদিকে এ উৎপাদন কৃষি উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি ওই মিষ্টি কুমড়া ও লাউ চাষাবাদে উপার্জিত অর্থ দিয়ে অনেক কৃষক ভুট্টা, পিঁয়াজ ও রসুনের চাষাবাদ করেছেন। এতে কৃষকদের সহয়তা করেছেন কৃষি বিভাগ। হাতীবান্ধা কৃষি বিভাগের সহয়তায় তিনি এবারে ৩ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের নদী ভাঙ্গন কবলিত হতদরিদ্র মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক সময়ের পতিত বালু চরে মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও শসা চাষের পিট প্রযুক্তির সফলতা এখন প্রমাণিত।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, জেগে ওঠা তিস্তার বালু চরে মিষ্টি কুমড়া ও লাউ চাষ চরাঞ্চলের মানুষ জনের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। বিশাল এ জনগোষ্ঠিকে যদি এ প্রযুক্তির আওতায় আনা যায় তবে কৃষি উৎপাদনসহ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে বিপ্লব ঘটবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here