তিন টাকার ডিম নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড!স্টাফ রিপোর্টার :: ‘ডিম চাই, ডিম চাই’; ‘ডিম চাই, বিচার চাই’; ‘আর কোনো দাবি নাই- ডিম চাই, বিচার চাই’; ‘ভুয়া ভুয়া, ডিমচোর ভুয়া’- ক্ষুব্ধ মানুষের ব্যতিক্রমী এ স্লোগান আর উপচেপড়া ভিড় পথচলতি মানুষকেও থমকে দাঁড় করিয়েছে! রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণ ঘিরে শুক্রবার সকালে নারী-পুরুষের জটলা, লম্বা লাইন পাশের সড়কে যান চলাচলও বাধাগ্রস্ত করে। বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে পূর্ব ঘোষণার ৩ টাকা মূল্যের ডিম কেনার জন্য সকাল থেকে সেখানে ভিড় করে নানা বয়সী মানুষ। কেউ পলিথিন ব্যাগ, কেউ বালতি, কেউ ডিমের খাঁচি, কেউ কার্টন নিয়ে হাজির হন।

কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডিম বিক্রি বন্ধ করে দেয় আয়োজক দুই প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। আর তখনই হাজার হাজার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে, স্লোগান দেয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ করে বিক্ষুব্ধ ক্রেতাদের ওপর।

সরেজমিন জানা যায়, বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিটি ডিম ৩ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেয় আয়োজকরা। একই সঙ্গে একজন সর্বোচ্চ ৯০টি ডিম কিনতে পারবেন বলেও তারা জানিয়েছিলেন।

শুক্রবার সকাল ১০টায় ডিম বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও হাজারো মানুষের ভিড়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিক্রি শুরু করতে বাধ্য হয়। কিন্তু চাপ সামাল দিতে না পেরে ৯০টির স্থলে ৩০টি, পরে ২০টি করে ডিম দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ করে দেয়া হয় ডিম বিক্রি। ততক্ষণে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণ উপচে বিজয় সরণি, সংসদ ভবন এলাকায় প্রায় দু’কিলোমিটার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ।

ডিম কেনার এ লাইনে ছিল শিশুরাও। কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন থেকে বিজয় সরণি মোড় পর্যন্ত পুরুষদের ডাবল লাইন এবং ফার্মগেট মোড় থেকে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের পুলিশ বক্স পর্যন্ত আরেকটি লম্বা লাইন দেখা গেছে। এ ছাড়া কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের ভেতরে পা রাখার মতো পরিস্থিতি ছিল না।

পাঁচটি কাউন্টারের মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট ডিম বিক্রি হওয়ার পরই দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। ধাক্কাধাক্কিতে ভেঙে পড়ে ডিম বিক্রির অস্থায়ী মঞ্চ। এ সময় পুলিশ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, বিতরণস্থলে ভাংচুর শুরু করে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। ডিম কিনতে না পেরে ক্ষুব্ধ লোকজন বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসে পুলিশ। অনেকে ক্ষোভে হাতে থাকা ডিমের ট্রে, বালতি আছড়ে ভেঙে ফেলেন, কেউবা ডিম মাটিতে নিক্ষেপ করতে থাকেন। যে না পেয়েছে, সে অন্যেরটা টেনে নেয়ার চেষ্টা করে। কেউ কাউন্টারের মধ্যে রাখা ডিম নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বেশ কয়েক খাঁচি ডিম ভেঙে নষ্ট হয়।

একপর্যায়ে খামারবাড়ী সংলগ্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আয়োজক কমিটির সদস্য শ্যামলী পোলট্রি লিমিটেডের হেড অব মার্কেটিং নজরুল ইসলাম মাইকিং করে বিশৃঙ্খলার কারণে ৩টাকায় ডিম বিক্রি কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, শিগগিরই তারিখ নির্ধারণ করে ঢাকার বিভিন্ন স্পটে এই মূল্যে ডিম বিক্রি করা হবে।

বিপিআইসিসির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ৫০ হাজার ডিম বিক্রির কথা থাকলেও ১ লাখ ডিম আমরা হাতে রেখেছিলাম, যাতে কেউ খালি হাতে ফিরে না যায়। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভিড় হয়েছে। পুলিশ ও আমাদের ভলান্টিয়ার সার্ভিস ঠিক ছিল। আমাদের ডাকে এত লোক আসবে, আমরা ভাবতে পারিনি। এ অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমরা দুঃখিত।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here