তিন জেলায় ১২ জনের ফাঁসিষ্টাফ রিপোর্টার :: চট্টগ্রামে কিশোর হিমেল হত্যায় ছয়জন, রংপুরে তানজিলা বেগম হত্যা মামলায় ৫ জন ও নাটোরে শিশু হত্যার দায়ে একজনের মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল দাশ হত্যা মামলায় ছয় আসামিকে মৃত্যুদ- দিয়েছে আদালত। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. সেলিম মিয়া এ রায় দেন।

মৃত্যুদ- পাওয়া আসামিরা হচ্ছেন মাহমুদুল ইসলাম, সুনীল দাশ, মিজানুর রহমান, মো. হোসেন, নজরুল ইসলাম ও মো. সেলিম। তাদের মধ্যে সুনীল দাশ হিমেলের দূর সম্পর্কের চাচা।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এম এ নাসের বলেন, সব আসামির বিরুদ্ধে কিশোর হিমেলকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সে কারণে আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে। সম্পত্তির লোভে হিমেলকে হত্যা করা হয়েছিল।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল হিমেল। ফল ঘোষণার চার দিন আগে বান্দরবানে বেড়ানোর কথা বলে মুঠোফোনে তাকে ডেকে নেন আসামিরা। এরপর থেকে তার মুঠোফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার চার দিন পর হিমেলের মা পাপিয়া সেনকে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন মামলার এক নাম্বার আসামি মাহমুদুল ইসলাম। টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দেয়া হবে বলে জানানো হয়। হিমেলদের বাসা থেকে মুক্তিপণ আনতে গেলে স্বজনরা মাহমুদুলকে আটকে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ মাহমুদুলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১৪ মে বান্দরবানের দুর্গম নাগাঝিরি পাহাড় এলাকা থেকে হিমেলের লাশ উদ্ধার করে। অপহরণের পরদিনই হিমেলকে হত্যা করা হয়েছিল। মাহমুদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হিমেলের দূরসম্পর্কের চাচা সুনীলসহ অন্য আসামিদের জড়িত থাকার তথ্য পায় পুলিশ।
২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় ১৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত হিমেলের মা ও মামলার বাদী পাপিয়া সেন। তিনি বলেন, ‘ছেলে হারানোর পর আমি এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। ছেলেকে তো আর ফেরত পাব না, কিন্তু ন্যায়বিচার পেলাম। এখন একটাই চাওয়া, দ্রুত রায় কার্যকর।’
রংপুর : পীরগঞ্জে এক দশক আগের তানজিলা বেগম হত্যার ঘটনায় তার ভাইসহ পাঁচজনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
আসামিদের উপস্থিতিতে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।
দ-িতরা হলেন_ তানজিলার সহোদর ছোট ভাই আব্দুল মজিদ (২৮), মমিনুল হক (৩১), আরিফুল ইসলাম (২৮), এমদাদুল হক (৩২) ও আনোয়ারুল হক (৩০)।
এরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমারপুর এলাকার বাসিন্দা বলে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (অতিরিক্ত পিপি) ফারুক মোহাম্মদ রেয়াজুল করিম জানিয়েছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, আব্দুল মজিদের আপন ভাতিজি নাসিমা বেগমের স্বামী গোলাপ মিয়া খুন হন ২০০৬ সালের শুরুর দিকে। ওই হত্যা মামলার আসামি হলেন মমিনুল হক, আরিফুল ইসলাম, এমদাদুল হক ও আনোয়ারুল হক।
এ মামলার বাদী ছিলেন নিহত গোলাপ মিয়ার বাবা বাচ্চা মিয়া।
ওই মামলার বাদীপক্ষকে উল্টো ফাঁসানোর জন্য আব্দুল মজিদের বোন তানজিলাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে চার আসামি। এজন্য মজিদকে দুই লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা এবং মজিদ তাতে রাজি হয়। পরে পাঁচজন মিলে ২০০৬ সালের ৯ মার্চ রাতে আনজিলাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফারুক মোহাম্মদ রেয়াজুল করিম জানান, আব্দুল মজিদ আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে হত্যার ঘটনা বর্ণনা এবং জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
ওই ঘটনায় তানজিলার বড়ভাই আব্দুল বাকি বাদী হয়ে ওই পাঁচজনকে আসামি করে ১০ মার্চ সকালে পীরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন বলে জানান ফারুক।
পীরগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই আবু আব্দুল্লাহ ২০০৬ সালের ৩১ আগস্ট পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
নাটোর : নাটোরে এক শিশু হত্যার নয় বছর পর একজনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। আসামির অনুপস্থিতিতে বুধবার নাটোরের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রদীপ কুমার রায় বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। দ-িত সাহারুল ইসলাম (২৯) লালপুর উপজেলার রঘুনাথ গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার বরাত দিয়ে আদালতের পিপি আব্দুল হাই বলেন, ২০০৭ সালের ৬ নভেম্বর লালপুর উপজেলার রঘুনাথ গ্রামের মুকরুম আলী সরদারের মেয়ে মোসাদ্দিকা খাতুন মুক্তি (৬) বাড়ির সামনে খেলা করছিল। এ সময় ওই গ্রামের সাহারুল ইসলাম শালুক তুলে দেয়ার কথা বলে মুক্তিকে তার বাড়ি নিয়ে যায়। পরে তার কানের স্বর্ণের দুল কেড়ে নিয়ে তাকে গলাটিপে হত্যা করে।
পিপি বলেন, ওইদিন বিকালে সাহারুলের ঘরের নিচ থেকে মুক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সাহারুল, তার বাবা ও মাকে আসামি করে একটি মামলা করেন মুক্তির বাবা।
২০০৮ সালের ৮ জানুয়ারি পুলিশ এই তিনজনের নামে অভিযোগপত্র দেয়। ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত রায় দেয়।
সাহারুল জামিন নেয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তার বাবার মৃত্যু হয়েছে এবং মাকে খালাস দেয়া হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here