ঢাকা :: সরকার তামাক খাত থেকে অনেক অর্থ কর পায়। কিন্তু তার চাইতে বেশি অর্থ তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হয়। তামাকের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার, মুখ গহব্বরের ক্যান্সার, ডায়বেটিস, এজমাসহ নানা রোগব্যাধি বাড়ছে। এসব রোগ প্রাণঘাতী, চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী। ১২ লক্ষ মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে- যা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অতীব জরুরি। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিতে সরকারের যে শেয়ার রয়েছে, এর কারণে তামাক কোম্পানিগুলো সরকারের নীতি নির্ধারণে প্রভাব রাখছে। তাই তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার করা জরুরি।
মঙ্গলবার (৩০ মে) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা উপরোক্ত দাবি জানান।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তারা আরো বলেন, যে পণ্য দেশের ১ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, সে পণ্যের ব্যবসায় সরকার অংশীদার হতে পারে না।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা ও জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতির সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন পল্টুর সভাপত্বিতে সভায় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এর মহাপরিচালক মো. আসাদুল ইসলাম, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি হেলাল আহমেদ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদের, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ-এর ভাইস চেয়ারম্যান ও টোব্রাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)-এর প্রেসিডেন্ট ব্যরিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়নের কারিগরি উপদেষ্টা এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম ও সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মুখপত্র সমস্বর এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন।
প্রবন্ধে এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক উন্নয়নে অন্তরায়। তামাক চাষ, চুল্লীতে আগুনের তাপে কাঁচা তামাক পাতা শুকানো, তামাক কারখানায় বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুলসহ তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন এবং সবশেষে তামাক সেবন সবগুলো পর্যায়েই তামাক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি করছে। জাতিসংঘ তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর বাস্তবায়ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বলেন, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট আন্তরিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মেডিকেল শিক্ষায় ধূমপায়ীদের ভর্তি না করার ঘোষণা দিয়েছেন। তামাকের উপর স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর আরোপ করেছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো নানাভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) সরকারের ১১% শেয়ার রয়েছে। এ কারণে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা বিভিন্ন সুবিধার আশায় বিএটিবির পরিচালনা পর্ষদে প্রতিনিধিত্ব করে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই এসব শেয়ার প্রত্যাহার করা জরুরি।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক যেহেতু বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, তাই তামাক নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর হতে হবে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা নীতি দ্রুত পাস করা জরুরি।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জিলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন ইত্যাদি স্থানীয় সরকারগুলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত করতে হবে। সেজন্য তাদের আইন বাস্তবায়নে ক্ষমতা প্রদানসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তিনি ভয়েজ অব ডিসকভারি সংক্রান্ত মামলায় চুড়ান্ত রায়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা তুলে বলেন, রায়ে মহামান্য আদালত তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ ও নতুন কোন তামাক কোম্পানিকে নিবন্ধন না দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।
সাইদা আখতার বলেন, ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের প্রবণতা নারীদের মধ্যে বেশি। গর্ভবতী নারীদের মধ্যে তামাক সেবন ও পরোক্ষ ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি, মৃত সন্তান প্রসব ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদানের ঘটনা ঘটছে। যা সার্বিক উন্নয়নে একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে যেন ধোঁয়াবিহীন তামাক বাদ না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন হিলের নির্বাহী পরিচালক জেবুন নেসা, সম্প্রীতি পরিবার এর তুষার চন্দন প্রমুখ। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি