তামাককে লাল কার্ড দেখাচ্ছে আলু ও ভুট্রাআসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: লালমনিরহাট জেলা বিষবৃক্ষ তামাক চাষের বড় ক্ষেত্র। এ জেলায় ‘লাল কার্ড’ পেতে বসেছে সেই তামাক। স্বাস্থ্যহানীর পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে একই জমিতে তামাক চাষের ফলে জমির উবরতা শক্তিও হ্রাস পাচ্ছে। ভালো ফলন না পাওয়ায় অনেক চাষি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন তামাক চাষ থেকে। অনেকেই চলতি বছর তামাক চাষ কমিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে আলু ও ভুট্রা চাষ।

আলু ও ভুট্রা চাষে সফল হলে আগামি দিনে তামাক চাষকে পুরো পুরি লাল কার্ড দেখাতে চায় জেলার চাষিরা। এ জন্য আলু ও ভুট্রাসহ কৃষি পণ্যের বহুমুখি বাজার সৃষ্টি করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান চাষিরা। জেলার আদিতমারী ও হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হয়। সম্প্রতি এই দুই উপজেলা ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

চাষিরা জানান, তামাক কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাস ও বেশি মুনাফা আশায় কয়েক বছর ধরে তামাক চাষ করে আসছে। কিন্তু তামাক চাষে জমির উরর্বতরা শক্তি নষ্ট ও তাদের শরীরে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন রোগ। এসব কারণে অনেক চাষি তামাকের পরিবর্তে এ বছর আলু ও ভুট্রা চাষ করেছেন। তবে আলু ও ভুট্রা আবাদ বেড়ে যাওয়ায় দাম নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। বর্তমানে প্রতি মণ আলু ১৪০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে তামাকের তুলানায় লাভ কিছুটা কম হলেও জমির উবরতা ও স্বাস্থ্যহানির কথা ভেবে আলু ও ভুট্রা চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। আলু ও ভুট্রার বহুমুখি ব্যবহার ও রফতানি বাড়ালে আবাদ বৃদ্ধি পাবে।

আদিতমারী উপজেলার ভাদাই বড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন জানান, তামাক চাষে তার জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে। গেল বছর তামাকে লোকসান হয়েছে। তাই এ বছর তামাক বাদ দিয়ে এক একর জমিতে আলু চাষ করেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার দঃ গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক সাদেকুল ইসলাম জানান, এ জেলায় তারাই প্রথম ভার্জিনাল তামাক চাষ শুরু করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তামাক চাষের কারণে জমির উৎপাদন কমে গেছে। তাই এ বছর মাত্র ২৭ শতাংশ জমিতে তামাক আর এক একর জমিতে ভুট্রা চাষ করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর লালমনিরহাটে ১১ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে তামাক চাষ হলেও এ বছর কমে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। তবে আলু ও ভুট্রার চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে গেছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভুষণ জানান, চাষিরা যেদিকে মুনাফা বেশি পায়, সেদিকেই ঝুঁকে পড়ে। কৃষি পণ্যের বহুমুখি বাজার সৃষ্টি করতে পারলে আগামী দিনে বিষবৃক্ষ তামাক চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here