ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের প্রতি একতরফা নির্বাচনী তফসিল স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখনো সুযোগ আছে। উৎপীড়ন ও বিরোধী মত নির্মূল অভিযান ছেড়ে সমঝোতার পথে আসুন।

খালেদা জিয়া সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল এতে স্বাক্ষর করেছেন।

সরকারের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, যেভাবেই হোক আপনার এখনো ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে রয়েছেন। উৎপীড়ন ও নির্মূল অভিযান ছেড়ে এখনো সমঝোতার পথে আসুন। চক্রান্ত ও অন্তর্ঘাতের পথ পরিত্যাগ করে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। নিজেরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় থেকে বিরোধী দলকে তাড়া করে ফিরছেন।

তিনি বলেন, আইনশৃখলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় দলীয় সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র অবস্থানে রাজপথে নামিয়ে, আমাদের অফিস অবরুদ্ধ করে রেখে বিরোধী দলকে মাঠে নামার আহবান জানাচ্ছেন। আর দাবি করছেন, দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে, এটা কেউ মেনে নেবে না।

বিরোধীদলীয় নেতা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন। জনগণের প্রতিপক্ষে অবস্থান নেবেন না।

তফসিল স্থগিত করুন, দেশকে বাঁচান
খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশনকে বলব- প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়ে বিশেষ দলের ক্রীড়ানক হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে ঘোষিত তফসিল স্থগিত করে দেশকে বাঁচান। তিনি প্রহসনের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত না হবার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানান।

আন্দোলন ব্যর্থ হয় না, বিজয় অতি নিকটবর্তী
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে উৎপীড়িত ও ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহ্বান জানাচ্ছি। জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত ও অতি নিকটবর্তী।

স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত
খালেদা জিয়া বলেন, আমি বিরোধী দলের নেতা। অথচ গুলশানে আমার অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম পর্যন্ত পুলিশ ও গোয়েন্দাদের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য  তৎপরতার কারণে চলতে পারছে না। আমার বিশেষ সহকারীকে আটক রাখা হয়েছে। অন্যরাও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না।

যাত্রীবাহী বাসে বোমা হামলার নিন্দা
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বৈরশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা ও প্রহসনের একতরফা নির্বাচন ও  নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতির দাবিতে ১৮ দল এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দল, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠন যখন আন্দোলন গড়ে তুলেছে সেই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে অজ্ঞাত-পরিচয় দুর্বৃত্তরা নিরীহ নিরপরাধ সাধারণ মানুষের ওপর পৈশাচিক হামলা চালিয়ে তাদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।

বর্বর এসব হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রীবাহী যানবাহনে বোমা মেরে, আগুন দিয়ে নাগরিকদের জীবন্ত দগ্ধ করছে। বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা শিকার হচ্ছে এই জঘণ্য হামলার। অগ্নিদগ্ধ মানুষেরা হাসপাতালে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তাদের করুণ আর্তনাদ জননিরাপত্তা ব্যবস্থার সীমাহীন ব্যর্থতাই প্রকটভাবে ফুটিয়ে ওঠেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানের ভেতরে এসব নারকীয় হামলার ঘটনায় দেশবাসীর সঙ্গে আমিও প্রবলভাবে বিস্মিত। এমন বিভৎস ঘটনা ঘটিয়ে অপরাধীরা নিরাপদে পার পেয়ে যাওয়া এবং এ পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে একজনও গ্রেপ্তার না হবার রহস্য কারো কাছে বোধগম্য নয়।

সরকার নৃশংসভাবে দমননীতি চালাচ্ছে
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আন্দোলন করতে নেমে প্রতিনিয়ত আমাদের নেতাকর্মীরা পুলিশ-র্যা ব-বিজিবি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে জীবন দিচ্ছেন। অথচ আমাদের আন্দোলন দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে। আমাদের আন্দোলন সাধারণ মানুষের প্রাণসংহার বা তাদের ব্যক্তিগত সম্পদহানির জন্য নয়।

খালেদা জিয়া বলেন, কিন্তু আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সরকারি দল ও প্রধানমন্ত্রী নিজে এই ঘৃণ্য কার্যকলাপকে পুঁজি করে সংকীর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে নানামুখী অপপ্রচার শুরু করেছেন। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়ে তারা কোনো রকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই বিরোধী দলকে দায়ী করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ বিএনপির পক্ষ  থেকে এসবের জবাব দেয়ার সব পথ তারা বন্ধ করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দলের পক্ষে কথা বলার জন্য যাকেই দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তাকেই মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি কার্যালয়ে যে পন্থায় মধ্যরাতের পর যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে গ্রেপ্তার এবং অফিসে ভাঙচুর ও লুণ্ঠন করা হয়েছে, তা হানাদার বাহিনীর আক্রমণের কথাই মনে করিয়ে দেয় বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে।’

‘এরপর আরেক যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে দলের পক্ষ কথা বলার দায়িত্ব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার গ্রামের বাড়ি ও ঢাকার বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। সালাহউদ্দিন আত্মগোপনে থেকে দলের বক্তব্য নানা রকম ঘুরপথে প্রচারের জন্য এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন’ বলেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে সরকার অপরাধীদের আটক করতে না পারলেও বিনা তথ্য-প্রমাণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সকল নেতাকে হুকুমের আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। একদিকে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগে মামলা হচ্ছে। অপরদিকে এক মন্ত্রী বলেছেন- সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে ফেললে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। এসব থেকে পরিষ্কার হয়, বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

‘বিনা তথ্য-প্রমাণে বিরোধী দলের নেতাদের হুকুমের আসামি করে যেভাবে মামলা হচ্ছে, তাতে এটাও সুষ্পষ্ট যে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জনমতকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যেই সুপরিকল্পিতভাবে এইসব নৃশংস তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনায় বন্ধুদেশ ও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশের চলমান পরিস্থিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও দেশবাসী প্রচণ্ড আতঙ্কিত’, যোগ করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here