নিজস্ব প্রতিবেদক। ইউনাইটেডিউজ ২৪.কম
ঢাকা: ‘প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ, শিষ্টাচার-বহির্ভূত, অশালীন, অসংযত ও মিথ্যা অভিযোগ’ উত্থাপন করায় ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. জুয়েল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আইন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বিকেলে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে যে, ‘অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ গুরুতর। যেহেতু বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তাকে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পরামর্শ প্রদান করেছেন; সেহেতু, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী মো. জুয়েল রানাকে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করত সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫-এর ১১(১) অনুযায়ী চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন অভিযুক্ত কর্মকর্তা প্রচলিত বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্ত হবেন।’
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জিএ (জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কমিটির সদস্যগণকে হেয় প্রতিপন্ন করে দরখাস্ত দাখিলের মাধ্যমে অসদাচরণের অভিযোগও উত্থাপিত হয়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন আছে।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৫ এর বিচারক জুয়েল রানার বিরুদ্ধে দুটি দেওয়ানি মামলায় অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতি এবং দুটি দেউলিয়া মোকদ্দমা পরিচালনায় অস্বাভাবিক কার্যক্রমের অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে দুটি দেওয়ানি আপিল ২৩৮/১২ ও ২৩৯/১৩ এবং দেউলিয়া মোকদ্দমা নং ১৭/০৩ ও ১৬/২০০০ পরিচালনার ক্ষেত্রে তার দক্ষতা ও সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। একজন অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তা হয়ে আরজি খারিজের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘ বিচারিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গত মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটি বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারককে নিয়োগ দেয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করতে বলা হয়।
পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতি ও জিএ কমিটির সদস্যগণ রাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন। জুয়েল রানার এই চিঠির বিষয়ে গত ২৮ মে সুপ্রিম কোর্টে জিএ কমিটির বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই জিএ কমিটি এ ধরনের চিঠি লেখাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও শিষ্টাচার-বহির্ভূত হিসেবে উল্লেখ করে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, সেজন্য তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করতে বলা হয়। জিএ কমিটির ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় এই প্রজ্ঞাপন জারি করে।