টাঙ্গাইল এলজিইডি”র নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মোঃ মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অফিসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ উঠেছে। তার দুর্ব্যবহারে এলজিইডিতে স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
টাঙ্গাইল এলজিইডির কর্মকর্তা কর্মচারিরা জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন গত বছর টাঙ্গাইলে যোগদানের পর থেকেই নিজেকে তার জেলার (নরসিংদী) একজন মন্ত্রীর ঘনিষ্ট জন বলে পরিচয় দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেন। তার স্বেচ্ছাচারিতার প্রথম শিকার হন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী নাইম উদ্দিন ও সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর। মাহবুব হোসেনের রোষানলে পরে তারা টাঙ্গাইল থেকে বদলী হয়ে যেতে বাধ্য হন।
সঠিক ভাবে কাজ করতে গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর লেলিয়ে দেওয়া ঠিকাদারদের দ্বারা নাজেহাল হয়ে টাঙ্গাইল ছেড়ে গেছেন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান শেখ। তিনি তার প্রকল্পের কিছু উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করে ত্রুটি দেখতে পান। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের পর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন তার উপর ক্ষিপ্ত হন। কারণ ত্রুটিপুর্ন ঐ কাজগুলোর ঠিকাদার ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলীর ঘনিষ্টজন। এক পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান শেখের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন ঐ ঠিকাদারদের। ঠিকাদাররা তার রুমে ঢুকে অশালীন গালাগাল করে এবং রুমের মধ্যে প্রশ্রাব করে দেয়। ক্ষোভে লজ্জায় মিজান শেখ টাঙ্গাইল থেকে বদলী হয়ে যান। শুধু মিজানুর রহমান শেখ নন বদলী হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন আরআরআইপি-২ প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ। সুলতান আহম্মেদ নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুগত এক ঠিকাদারের কাজের ত্রুটি ধরেছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদকে অফিসে জুতা দিয়ে মারতে উদ্যত হয়েছিলেন। এ ঘটনার পর ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে সুলতান আহম্মেদও বদলী হয়ে যান। এছাড়াও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভূয়াপুর উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক কে মাসিক সমন্বয় সভায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব হোসেন। একই সাথে ওই প্রকৌশলীকে ভূয়াপুর ত্যাগ করতে বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, ঐ ঘটনাগুলোর পর থেকে কেউ নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেনের কোন অন্যায় কর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। তিনি আরো বলেন, মাহবুব হোসেন টাঙ্গাইলে যোগদানের পর থেকেই অফিসের গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে যত্রতত্র ব্যবহার শুরু করেন। তার পরিবার ঢাকায় অবস্থান করায় তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় যেতেনএবং রাতেই গাড়ী টাঙ্গাইল পাঠিয়ে দিতেন। আবার রোববার সকালে অফিসের গাড়ী ঢাকায় গিয়ে তাকে নিয়ে আসতো। গত আগস্টে অফিসের গাড়ী তাকে আনতে ঢাকায় যাওয়ার পথে মির্জাপুরের শুভল্যায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। গাড়ীর চালককে মারাত্মক আহত অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। এই ঘটনার পর থেকে তিনি অফিসের গাড়ী নিয়ে ঢাকায় যাওয়া বন্ধ করেন। তাকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় আনা নেওয়া বাবদ খরচ হতো ৭০ থেকে ৮০ লিটার জ্বালানী । এ ছাড়াও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-১৪ এর আওতায় ল্যান্ড রোভার জীপ গাড়ী দির্ঘদিন যাবৎ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলেও প্রতি মাসে একশ” লিটার জ্বালানী ইস্যু করছেন এই গাড়ীর নামে।
একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলীর অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতায় টাঙ্গাইল এলজিইডি অফিসে কাজের পরিবেশ নেই। সবাই আতংকে ভোগেন কখন কার উপর নেমে আসে নির্যাতন।
সমপ্রতি নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ আনে। এ ঘটনার পর নির্বাহী প্রকৌশলী জেলার ১২টি উপজেলার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে তার (নির্বাহী প্রকৌশলী) পক্ষে স্বাক্ষর নিয়ে তা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর বরাবর পাঠানো হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে অভিযোগ করেন, নির্বাহীর কথা মত না চললেই চাকুরীচ্যুত করার হুমকি দেন তিনি। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিভাগের মাষ্টার রোল কর্মচারী দেব দুলাল সাহা এবং মুকুল হোসেন কে ভিত্তিহীন অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শাহরিয়ার সিফাত/টাঙ্গাইল