ঝুঁকিতে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ, যে কোন সময় দূর্ঘটনার আশঙ্কাজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: ঝুঁকি নিয়ে চলছে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের কার্যক্রম। জেলায় পুলিশের ব্যবহার করা প্রায় সব কয়টি ভবনের নাজুক আবস্থা। পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সদর থানা ও কোর্ট পরির্দশকের কার্যালয়ের ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন অংশে পাটল দেখা দিয়েছে।

এই সব ভবনের বেশ কয়েকটি স্থানে ছাদ থেকে আস্তর খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত ঝুকি নিয়ে চলছে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের প্রতিদিনের কার্যক্রম। খুব দ্রুত এই সব ভবনের সংস্কার কাজ করা না হলে যে কোন সময় ভবন গুলো ধসে পড়ে প্রাণনাশসহ বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছে পুলিশ সদস্যরাসহ সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষেরা।

সুত্র জানায়, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে গণপূর্ত বিভাগ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভবনের পশ্চিম পাশে তৃতীয় তলায় সিআইডি অফিস নির্মাণ করা হয়। ওই সময় ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়। একই সঙ্গে ছাদ ও দেয়ালের আস্তর খসে পড়তে থাকে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভবনটির পূর্ব পাশে নতুন ৩য় তলার সম্প্রসারণ কাজ শুরু করা হয়। কাজ চলমান অবস্থায় ভবনটিতে ফাটল বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়।

এরই মধ্যে ২য় তলায় অভ্যর্থনা কক্ষের ছাদ থেকে আস্তর খসে পড়ে আহত হন এক পুলিশ কনস্টেবল। পুলিশের গোপনীয় শাখা, প্রধান সহকারীর কক্ষ ও হিসাব শাখাসহ প্রায় সব কক্ষেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে এখন।

অপর দিকে ১৯৭১ সালে লক্ষ্মীপুর সদর থানার মূল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এর পরে বড় আকারে আর ভবনটি সংস্কার করা হয়নী। ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ভবনটিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন সদর থানার পুলিশ সদস্যরা। দোতলা এই ভবনটির প্রতিটি দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনের ছাদের বিভিন্ন অংশের আস্তর খসে পড়ছে। জ

রাজীর্ণ ভবনটি বিভিন্ন সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সংস্কার করলেও তা ছিল নিতান্ত অপ্রতুল। ভবনের দোতলায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা বসবাস করছেন। পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় সংস্কার না করেই গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাঁদের।

এছাড়া কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়টিও দীর্ঘদিন থেকে ঝুঁকির মধ্যে রযেছে। জেলা কালেক্টরেট ভবনের বিশাল একটি কক্ষসহ কয়েকটি কক্ষে লক্ষ্মীপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯১ সালে কালেক্টরেট ভবন উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত এ কক্ষগুলি সংস্কার ও মেরামত করা হয়নি। যার কারনে কক্ষগুলি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

কার্যালয়ে জরাজীর্ণ কক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন কোর্ট পরিদর্শক, জিআরও, মুন্সিসহ সংশ্লিষ্টরা। কক্ষের সকল বৈদ্যুতিক পাখার লোহার হুকের রডে মরিচা ধরেছে। ইতিমধ্যে চলন্ত অবস্থায় ২টি ফ্যান নীচে পড়ে গেছে। অন্যান্য ফ্যানগুলো যে কোন মূহুর্তে সংযোগস্থল হতে পড়ে গিয়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা আংশকা রয়েছে। অফিসের ছাদ ও ভিমের আস্তর ইতিমধ্যে বেশকিছু অংশ ধ্বসে পড়েছে।

সরজমিনে পুলিশ সুপার কার্যালয়, সদর থানা ও কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে যে কোন মুহুর্তে ভবন গুলি ধস হতে পারে এমন আতঙ্কে হেলমেট সাথে নিয়ে অফিস করছে পুলিশ সদস্যরা। বৃষ্টিতে পানি পড়ে আসবাবপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ভিজে নষ্ট হচ্ছে। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রক্ষার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ফোর্স ও দাপ্তরিক কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিকে ভবন ধসে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সেবা নিতে আসা লোকজনসহ সংশ্লিষ্টরা।

লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন ভবনের আস্তর ও বিভিন্ন স্থানে পাটলের কথা স্বীকার করে বলেন, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণপূর্ত বিভাগ ভবন পরিদর্শন করে ফয়সালার চেষ্টা করছেন। তবে কখন দূর্ঘটনা ঘটে সে বিষয়ে কিছুটা আতঙ্ক আছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here